গাজীপুর সিটি নির্বাচন: প্রার্থীদের ২৯.৭৩ শতাংশ আসামি, এসএসসির নিচে ৪০.২৪

গাজীপুরে সংবাদ সম্মেলন করে সুজন এসব তথ্য প্রকাশ করে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচন: প্রার্থীদের ২৯.৭৩ শতাংশ আসামি, এসএসসির নিচে ৪০.২৪

প্রথম নিউজ, গাজীপুর: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিলিয়ে ৩৩৩ প্রার্থীর ২৯.৭৩ শতাংশই মামলার আসামি। আর ৪০.২৪ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এমন তথ্য। সোমবার (২২ মে) গাজীপুরে সংবাদ সম্মেলন করে সুজন এসব তথ্য প্রকাশ করে।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন জানায়, প্রতিদ্বন্দ্বী ৮ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দুজনের (২৫ শতাংশ) বিরুদ্ধে মামলা আছে। তারা হলেন জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে অতীতে তিনটি মামলা ছিল। বর্তমানে কোনো মামলা নেই। তার বিরুদ্ধে করা মামলার মধ্যে একটি ছিল হত্যা মামলা।

২৪৬ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৮৪ জনের (৩৪.১৫ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। ৪২ জনের (১৭.০৭ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ২৮ জনের (১১.৩৮ শতাংশ) বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা ছিল। বর্তমানে ৮ জনের বিরুদ্ধে (৩.২৫ শতাংশ) হত্যা মামলা রয়েছে। চারজনের বিরুদ্ধে অতীতে হত্যা মামলা ছিল।

সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৭৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩ জনের (১৬.৪৬ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে ফৌজদারি মামলা আছে। তিনজনের (৩.৮০ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি মামলা ছিল। একজনের বিরুদ্ধে বর্তমানে একটি হত্যা মামলা চলমান।

তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৩৩৩ প্রার্থীর মধ্যে ৯৯ জনের (২৯.৭৩ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৪৭ জনের (১৪.১১ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ২৯ জনের (৮.৭১ শতাংশ) বিররুদ্ধ উভয় সময়ে মামলা আছে বা ছিল। ৩০২ ধারায় (হত্যা মামলা) ৯ জনের (২.৭০ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে এবং পাঁচজনের বিরুদ্ধে (১.৫০ শতাংশ) অতীতে মামলা ছিল।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে মামলা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, যা কোনোভাবেই ইতিবাচক নয় বলছে সুজন।

প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে সুজন জানায়, ৪০.২৪ শতাংশ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। এদের মধ্যে আট মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজনের (৬২.৫০ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, একজনের (১২.৫০ শতাংশ) এসএসসি এবং দুজনের (২৫ শতাংশ) এসএসসির নিচে।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন মনোনয়নপত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন স্বশিক্ষিত এবং জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী রাজু আহাম্মেদ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের মধ্যে রয়েছেন আজমত উল্লা খান (এলএলএম), এম এম নিয়াজ উদ্দিন (এমএসএস), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (তাকমিল), স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম (এমবিএ) ও হারুন-অর-রশীদ (এমএ)। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি উল্লেখ করা প্রার্থী হলেন গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম।

৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের ২৪৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৯২ জনের (৩৭.৪০ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। ৩৯ জনের (১৫.৮৫ শতাংশ) এসএসসি এবং ৪৩ জনের (১৭.৪৮ শতাংশ) এইচএসসি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৫০ (২০.৩৩ শতাংশ) ও ২১ জন (৮.৫৪ শতাংশ)। একজন (০.৪১ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর পূরণ করেননি।

১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৭৯ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৪০ জনের (৫০.৩৩ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১২ (১৫.১৯ শতাংশ) ও আটজন (১০.১৩ শতাংশ)। অন্যদিকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১০ (১২.৬৬ শতাংশ) ও ৯ জন (১১.৩৯ শতাংশ)।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩৩৩ প্রার্থীর মধ্যে অর্ধেকের বেশির (১৮৪ জন, ৫৫.২৬ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও তার নিচে। এর মধ্যে ১৩৪ জন (৪০.২৪ শতাংশ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম করেননি। পক্ষান্তরে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ৯৬ জন (২৮.৮৩ শতাংশ)। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার কিছুটা কমেছে। ২০১৮ সালে এসএসসি ও তার নিচে ছিল ৬০.৮৬ শতাংশ, যা এবার ৫৫.২৬ শতাংশ।

অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষিত (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী) প্রার্থীর হার বেড়েছে। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৪.০৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৮.৮৩ শতাংশ। স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার হ্রাস পাওয়া এবং উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থীর হার বৃদ্ধি পাওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বলছে সুজন।

প্রার্থীদের পেশা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সুজন জানায়, আট মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজন (৩৭.৫০ শতাংশ) ব্যবসায়ী, দুজন (২৫ শতাংশ) চাকরিজীবী, একজন (১২.৫০ শতাংশ) আইনজীবী, একজন (১২.৫০ শতাংশ) গৃহ সম্পত্তি ভাড়া থেকে আয় করেন এবং একজন (১২.৫০ শতাংশ) অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তিন মেয়র প্রার্থী হলেন জাকের পার্টির রাজু আহাম্মেদ, জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন এবং স্বতন্ত্র জায়েদা খাতুন।

চাকরিজীবী দুই প্রার্থীর মধ্যে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকতা এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান আইনজীবী। স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম গৃহ সম্পত্তির ভাড়া থেকে আয় করেন। স্বতন্ত্র অপর প্রার্থী হারুন-অর-রশীদ একজন পেনশনভোগী সরকারি কর্মকর্তা।

২৪৬ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সিংহভাগের (১৯২ জন, ৭৮.০৫ শতাংশ) পেশাই ব্যবসা। কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৩ জন (৫.২৮ শতাংশ)। আইনজীবী সাতজন (২.৮৫ শতাংশ)। চাকরিজীবী ১১ জন (৪.৪৭ শতাংশ)। ১৬ জন (৬.৫০ শতাংশ) অন্যান্য পেশার সঙ্গে যুক্ত। সাতজন (২.৮৫ শতাংশ) পেশার ঘর পূরণ করেননি।

৭৯ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৩৯ জনই (৪৯.৩৭ শতাংশ) গৃহিণী। ১২ জন (১৫.১৯ শতাংশ) ব্যবসায় যুক্ত। আইনজীবী রয়েছেন ছয়জন (৫৭.৫৯ শতাংশ)। চাকরিজীবী সাতজন (৮.৮৬ শতাংশ) এবং অন্যান্য পেশার সঙ্গে যুক্ত সাতজন (৮.৮৬ শতাংশ)। সাতজন (৮.৮৬ শতাংশ) পেশার ঘর পূরণ করেননি।

তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৩৩৩ প্রার্থীর অর্ধেকের বেশি (২০৭ জন, ৬২.১৬ শতাংশ) ব্যবসায়ী। বিশ্লেষণে অন্যান্য নির্বাচনের মতো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেছে।

তথ্য উপস্থাপন শেষে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলিপ কুমার, ঢাকা বিভাগের সমন্বয়ক তৌফিক জিল্লুর রহমান।