কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে গৃহহীন ৩০০ পরিবার ঝুঁকিতে বাঁধ স্কুলসহ ১০ গ্রাম

বর্ষা শুরুর আগেই কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে গৃহহীন ৩০০ পরিবার ঝুঁকিতে বাঁধ স্কুলসহ ১০ গ্রাম

প্রথম নিউজ, কুড়িগ্রাম: বর্ষা শুরুর আগেই কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত দুই মাসে গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৩০০ পরিবার। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, স্কুল, বাঁধসহ ১০টি গ্রামের বিপুল পরিমাণ আবাদী জমি। স্থানীয়রা ভাঙন রোধে কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ার অভিযোগ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবী কয়েকটি পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। 

সরেজমিন দেখা গেছে, এখনও বর্ষা শুরু হয়নি। শুরু হয়নি বন্যার তান্ডব। কিন্তু কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন তীব্ররুপ নিয়েছে। এরমধ্যে উলিপুরের মোল্লারহাট এলাকায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রুদ্ররুপ নিয়েছে ব্রহ্মপুত্র। ভাঙনের তীব্রতার মুখে ঘরবাড়ি সরানোর সময় মিলছেনা। ভিটেহারা পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে রাস্তা, বাঁধ ও ফাঁকা স্থানে। 

বেগমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, বর্তমানে মোল্লারহাট, মুছুল্লিপাড়া, সরকারপাড়া, উত্তর ব্যাপারীপাড়া, দক্ষিণ ব্যাপারীপাড়া, মন্ডলপাড়া, কালিগঞ্জ, মাঝিপাড়া, রসুলপুর ও আল আমিন বাজার এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন চলছে। এসব এলাকায় একটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, একটি হাইস্কুল ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে রয়েছে। কয়েকশ বিঘা আবাদী চলে গেছে ব্রহ্মপুত্র গর্ভে। 
ভাঙনের শিকার হয়ে রাস্তার পাশে অস্থায়ী নিবাস গড়ে বসবাস করছেন ইউপি সদস্য জামাল মন্ডল। তিনি জানান, ভাঙনের তান্ডবে টিকতে না পেরে অনেকেই চরে চলে যাচ্ছে। কেউ চলে যাচ্ছে এলাকা ছেড়ে। মুছল্লিপাড়া বাসিন্দা আছিমুদ্দিন পুর্ব চরে ও লতিফ মন্ডল গেছেন উত্তরের চরে। সরকারপাড়ার ফুলবাবু মিয়া, হাফেজ উদ্দিন ও নওশাদ আলীসহ কয়েকজন জানান, বসতভিটা ভাঙার পর কোথায় যাবেন-সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে আশে পাশের ফাঁক জায়গায় ঝুপড়ি তুলে আছেন।  নুরুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল হক জানান, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে স্কুলটি ব্রহ্মপুত্র গর্ভে চলে যাবে। আশেপাশে স্কুল না থাকায় প্রত্যন্ত এই এলাকার শিশুদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। 

অব্যাহত ভাঙনের মুখে ১০টি গ্রামের অধিকাংশ এলাকার বসতভিটা ও ফসলি জমি বিলীনের পথে। ঝুঁকিতে রয়েছে ভাঙন রোধে তৈরী করা তীর প্রতিরক্ষা কাজ, বাঁধ ও স্কুল। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এসব স্থাপনা বিলীনের আশঙ্কা এলাকাবাসীর। তাই জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী তাদের।  পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ভাঙনের অধিক ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলো ইতোমধ্যে চিহ্নিত করে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠোকানোর ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে মোল্লারহাট, কাচকোল ও নামাজের চর ছাড়াও গঙ্গাধরের ভাঙনে তরিরহাট, রসুলপুর, ধরলার ভাঙনে সারডোবে নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে।