কলকাতায় বিলাসী ফ্ল্যাট কিনেছেন বাহাউদ্দিন নাছিম

প্রথম নিউজ, অনলাইন: জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের পতন হলে দলের অন্যদের মতো ভারতে পালিয়ে যান দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের এই নেতা কলকাতায় খুুঁটি গেড়ে বসেছেন। বাংলাদেশ থেকে পাচার করা টাকায় কলকাতায় তপসিয়া সায়েন্স সিটি বাইপাসের একেবারে কাছে সানফ্লাওয়ার গার্ডেনে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি।
জানা গেছে, প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ রুপিতে ফ্ল্যাটটি কিনেছেন নাছিম।
ফ্ল্যাটটির অবস্থান তপসিয়া সায়েন্স সিটির ১৮-সি ব্লকে।
সূত্র বলছে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্যদের মতো বাহাউদ্দিন নাছিমও ভারতে পালিয়ে যান। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আশায় ছিলেন দুই-তিন মাসের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে, তারপর দেশে ফিরবেন। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলে সেই আশা উড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু বাড়িই নয়, কলকাতায় বেশি কিছু ব্যবসায় বিনিয়োগও রয়েছে নাছিমের। স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ভারতেও নিজের ব্যবসা প্রসারিত করছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতার প্রভাবশালী এক আমলা তার ‘বাংলাদেশি বন্ধুর’ সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে রাজি হলেন। প্রথমে ‘বাংলাদেশি বন্ধু’ কথাটি শুনে একটু সন্দেহ হয়।
কারণ কলকাতায় কোনো মুসলিম বাংলা ভাষায় কথা বললেই অনেক সময় তাকে বাংলাদেশি বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু ওই আমলা ভুল ভাঙালেন। বললেন, ‘তার কথায় বাংলাদেশি টান আছে। কথা বললেই বুঝতে পারবেন।’
স্থানীয় তপসিয়া সায়েন্স সিটি বাইপাসের একেবারে কাছে সানফ্লাওয়ার গার্ডেন।
সেখানেই থাকেন কলকাতার আয়কর বিভাগে কর্মরত এই আমলা। সেই আবাসনেই গত বছর থেকে আছেন তার বাংলাদেশি বন্ধুটি। বহুবার তার সঙ্গে দেখা করানোর কথা বললেও এড়িয়ে গেছেন তিনি। তবে এখন আর আগের পরিস্থিতি নেই। কলকাতায় খুঁটি গেড়ে বসেছেন আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা। এখানকার নানা ধরনের ব্যবসায় তারা বিনিয়োগও করছেন। সে সব খবর জানালেন ওই কর্মকর্তা।
সানফ্লাওয়ার গার্ডেনে ঢোকার মূল ফটকে ছিল তিন-চার জন সিকিউরিটি গার্ড। এই আবাসন প্রকল্পে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি ব্লক। এই প্রতিবেদককে নিয়ে ওই কর্মকর্তা তার বন্ধুর ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়ালেন। ১৮ সি ব্লকের ফ্ল্যাটটির বেল টিপলেন। ভেতর থেকে দরজা খুলে জানানো হলো, তিনি নেই। পার্ক সার্কাস গিয়েছেন। তাই ওই কর্মকর্তার ফ্ল্যাটে বসেই অপেক্ষা করতে হলো। কথায় কথায় জানালেন, তার বন্ধুর নাম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি আওয়ামী লীগের বড় নেতা। ঢাকার সংসদ সদস্যও ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে গুগলে সার্চ দিয়ে জানা গেল নাছিমের পরিচয়। জানা গেল আওয়ামী লীগের এই নেতা বাইপাসের কাছের এই আবাসন প্রকল্পের ফ্ল্যাটে লুকিয়ে আছেন। আর তাকে সাহায্য করছে একজন সরকারি আমলা।
নাছিমের কালো টাকার বিনিয়োগ
কথায় কথায় ওই সরকারি কর্মকর্তা জানান, নাছিম প্রথমে কলকাতার হায়াত হোটেলে উঠেছিলেন। ভেবেছিলেন সমস্যা কেটে যাবে দ্রুত। তারপর ঢাকায় ফিরে যাবেন। কিন্তু বছর পার হতে চলেছে। ‘ইউনূস সরকার’ বাংলাদেশে অবস্থান শক্ত করেছে। শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাদের ফেরাও অনিশ্চিত। তাই ‘থ্রি বিএইচকে’ ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছেন বাহাউদ্দিন নাছিম। দাম প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ রুপি।
কলকাতার আয়কর বিভাগের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছিম এখন ব্যবসাতেও যুক্ত হয়েছেন। সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতা ফয়েজ আহমেদ খানকে হাত করে বেশ কয়েকটা ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। ‘কলিম রিয়ালটি’ নামে একটি ফ্ল্যাট তৈরির কোম্পানিতেও কালো টাকা বিনিয়োগ করেছেন এই আওয়ামী লীগের নেতা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সরকারি বিভিন্ন সূত্র বলছে, বাহাউদ্দিন এখন টয়োটাতে ঘুরে বেড়ান পার্ক সার্কাস, নিউটাউন ও রাজারহাটে। তার যুক্ত থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেখে এবং ওই সরকারি কর্মকর্তা বন্ধুর কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে-স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও আমলারাও সমানে সাহায্য করছেন পালিয়ে আসা আওয়ামী লীগ নেতাদের।
এদিকে কথাবার্তার কিছুক্ষণ পরেই ওই আমলার ফোনে কল বেজে উঠল। ফোন ধরার পর কিছুটা অপ্রস্তুত মনে হলো তাকে। একজন সাংবাদিককে নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করানোর জন্য এসেছেন এ কথা বুঝে গেছেন নাছিম। তাই তাকে আর সামনাসামনি দেখা সম্ভব হলো না। দেখা না করার কথা জানিয়ে দিলেন ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা নাছিম।