এবার ৩১ দফা নিয়ে জোরালোভাবে জনগণের কাছে যাবে বিএনপি

দলটির নেতারা বলছেন, এই ৩১ দফা হচ্ছে আগামী দিনে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার একটি দলিল।

এবার ৩১ দফা নিয়ে জোরালোভাবে জনগণের কাছে যাবে বিএনপি

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম সামনে রেখে দলের পূর্বঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা ৩১ দফাকে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, এই ৩১ দফা হচ্ছে আগামী দিনে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার একটি দলিল। এখন পর্যন্ত যারা রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে নানা কথা বলছেন, বিভিন্ন ফর্মুলা দিচ্ছেন, তাদের কোনো ভাবনাই ৩১ দফা রূপরেখার বাইরে নয়। গত বছর এই রূপরেখা ঘোষণা করা হলেও নানা কারণে এটি জনগণের মাঝে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা যায়নি। ফলে ৩১ দফা সম্পর্কে মানুষের ধারণাও স্পষ্ট নয়। তাই রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের এই রূপরেখাকে আবারও আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির সামনে তুলে ধরবে বিএনপি। চলতি মাসে এটি ফের ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সংস্কারে ১০টি কমিশন গঠন করেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এমন প্রেক্ষাপটে ৩১ দফাকে ব্যাপক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। দলটির চাওয়া, আগামীতে হাটে-ঘাটে-মাঠে সর্বত্রই ৩১ দফা আলোচিত হবে। আর বিশেষজ্ঞ মতামতে সংযোজন-বিয়োজনে সমৃদ্ধ ৩১ দফা বিএনপির আগামী নির্বাচনী ইশতেহারেও তুলে ধরা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তিন ধাপে ৩১ দফা রূপরেখাকে ব্যাপক আকারে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চায় বিএনপি। সেটি হলো প্রচার, বিতরণ ও মতামত গ্রহণ। এর অংশ হিসেবে দল, অঙ্গসহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তারা। এরই মধ্যে অনেককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগামীতেও এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে দলটি। প্রশিক্ষিত লোকরা সারা দেশের বিভাগীয় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে ওয়ার্কশপের মাধ্যমে জনগণকে ৩১ দফা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবে। একই সঙ্গে এই রূপরেখাকে আরও সমৃদ্ধ করতে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মতামতও গ্রহণ করবে দলটি। এ লক্ষ্যে বিভাগীয় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে পর্যায়ক্রমে সেমিনার আয়োজন করা হবে। সেখানে প্রাপ্ত মতামতগুলো সন্নিবেশিত করে ৩১ দফাকে আরও যুগোপযোগী ও সমৃদ্ধ করা হবে। আর বিএনপি আগামীতে নির্বাচনে বিজয়ী হলে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে দলগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠন করে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের এই রূপরেখা বাস্তবায়ন করবে।

২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পর আন্দোলনরত সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৩১ দফা প্রণয়ন করে বিএনপি। যেটা গত বছরের ১৩ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে দলটি। সেটি মানুষের কাছে তখন ব্যাপক আকারে তুলে ধরতে পারেনি। এজন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দমনপীড়নসহ উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার কথা বলেছে বিএনপি।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে ৩১ দফার প্রচার-প্রচারণায় নামে বিএনপি। এক মাস ধরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সারা দেশে যৌথ ক্যাম্পেইন চলছে। তারা একদিকে ৩১ দফা রূপরেখা এবং অন্যদিকে ধানের শীষ-সংবলিত লিফলেট বিতরণ করছেন। গ্রামেগঞ্জে, হাটে-বাজারে, অফিস-আদালতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই প্রচার চলছে। তাদের দাবি, প্রচারে তারা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।

জানা গেছে, প্রচার লিফলেটে জনগণকে ৩১ দফা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে (bnpbd.org অথবা bnpmediacell.org.bd) এবং মতামত জানাতে ([email protected] অথবা [email protected]) এই ওয়েবসাইট ও ইমেইল অ্যাড্রেস দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না কালবেলাকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের মাঝে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা এবং ধানের শীষ-সংবলিত লিফলেট বিতরণ করছি। এতে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে এটি গ্রহণ করছেন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ৩১ দফার বর্তমান প্রচারকালে এবং পুনরায় আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর দেশব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য সেমিনার থেকে প্রাপ্ত মতামত কিংবা কোনো স্টেকহোল্ডার বা বিশেষজ্ঞ কারোর লিখিত মতামত পেলে সেটা নতুন করে এই রূপরেখায় সন্নিবেশিত করা হবে। কারণ, তারা ৩১ দফাকে আরও যুগোপযোগী ও সমৃদ্ধ করতে চান। প্রয়োজনে সময়ের আবর্তে এটি সংযোজন-বিয়োজন করা যাবে। যাতে এর বাইরে আর কোনো প্রস্তাবনা না থাকে।

৩১ দফার প্রচারণার গুরুত্ব তুলে ধরে দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি আগামী দিনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে কী কী করতে চায়, এর মধ্য দিয়ে সেটা যেমন জনগণের কাছে তুলে ধরা যাবে; ঠিক তেমনি আগামী নির্বাচনেরও একটি প্রাক-প্রস্তুতি নেওয়া যাবে।

৩১ দফা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য আমরা গত বছরের জুলাইয়ে ৩১ দফা প্রস্তাব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলাম। এর বাইরে অন্য কোনো সংস্কার প্রস্তাব কোনো কর্নার থেকে এখনো আসেনি। কারণ, আমরা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, অনেক সময় নিয়ে ৩১ দফা প্রণয়ন করেছি। বলা ছিল, আমরা যদি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করার সুযোগ পাই, তখন ৩১ দফার আলোকে রাষ্ট্র কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো আমরা করব। এখন আমরা এই ৩১ দফাকে ব্যাপক আকারে সারা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত এবং সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে আমরা এমন একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে চাই। যে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি হবে, এটা আমাদের লক্ষ্য। ৩১ দফার ১ নম্বর দফায় রয়েছে, সংবিধান সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া মিডিয়া সংস্কার কমিশন, জুডিশিয়ারি সংস্কার কমিশন, পুলিশ বিভাগ সংস্কার কমিশনসহ প্রয়োজনীয় সব জায়গায় আমরা সংস্কার প্রস্তাব রেখেছি। এগুলো চলমান প্রক্রিয়া।