৭ বছর পর রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন, নেতৃত্বে আলোচনায় যারা
প্রথম নিউজ, রাজশাহী : প্রায় সাত বছর পর সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলন ঘিরে ইতোমধ্যে নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে আছেন অনেকে। এখন শুধু অপেক্ষা পদপদবির জন্য। ফলে দীর্ঘদিন পর নেতাকর্মীদের মধ্যে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। সভাপতি-সম্পাদক পদে আসতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের কাছে ধরনা দিয়েছেন পদপ্রত্যাশীরা।
নেতৃত্বে কে আসবেন, এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা নেতারাও শীর্ষ পদে আসতে চালাচ্ছেন জোর তৎপরতা। তবে দলীয় আদর্শে আপসহীন, দক্ষ সংগঠক, নিয়মিত ছাত্র এবং যোগ্য ও ত্যাগীদের নেতৃত্বে আনার দাবি সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের।
রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক, কাজলা গেট, প্যারিস রোড, টুকিটাকি ও পরিবহন চত্বরে ব্যানার, ফেস্টুন ও সাইনবোর্ডে ছেয়ে গেছে। শাবাশ বাংলাদেশ মাঠে প্রস্তুত করা হচ্ছে সম্মেলন মঞ্চ। মিটিং-মিছিল ও শোডাউন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন পদপ্রত্যাশীরা। রুটিন করে দলীয় টেন্টে বেড়েছে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। পাল্লা দিয়ে চলছে ক্যাম্পাসে শোডাউন ও নেতাকর্মীদের স্লোগান। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
সবশেষ ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় রাবি ছাত্রলীগের ২৫তম সম্মেলন। ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর প্রায় ছয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। হিসাব অনুযায়ী ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালে ১১ ডিসেম্বর।
গত বছরের ২৫ অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১২ নভেম্বর শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দেন ৯৪ জন পদপ্রত্যাশী। কিন্তু পরে সেই সম্মেলন কোনও এক অজানা কারণে স্থগিত করা হয়। পরে চলতি বছরের গত ৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ১৮ সেপ্টেম্বরকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করেন। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যতা লক্ষ করা গেছে।
তবে গত সাড়ে ছয় বছরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তিনবার পরিবর্তন হলেও এই কমিটি তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ সময় আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া এ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, প্রক্সিকাণ্ড, ছিনতাই, অপহরণ, আসন-বাণিজ্য, চুরি ও মাদকসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন।
নেতৃত্বের দৌড়ে আলোচনায় যারা
সভাপতি ও সম্পাদক আসতে পারেন, এমন কয়েকজন পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতার নাম ক্যাম্পাসে বেশি আলোচিত হচ্ছে। নতুন নেতৃত্বে আসার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার ওরফে ডন, গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, উপধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয়, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব, সহসভাপতি মেজবাহুল ইসলাম ও জাকিরুল ইসলাম ওরফে জ্যাক, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মানুন। এ ছাড়া আলোচনায় রয়েছে আরও বেশ কয়েকজনের নাম।
তবে তাদের মধ্যে প্রায় সবাই পড়ালেখা শেষ করেছেন। আছেন ড্রপআউট ও দলীয় কমিটিতে কোন্দল তৈরি করার অভিযোগ। অনেকেই ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি আছেন।
পদপ্রত্যাশী অন্তত ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলছেন, নেতৃত্বে এলে আসন-বাণিজ্য, মাদকমুক্ত ও স্মার্ট ক্যাম্পাস গড়তে তারা কাজ করবেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে পাশে থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে সামনের জাতীয় নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে চান। এ ছাড়া ছাত্রলীগের এই ইউনিটকে শক্তিশালী ও শিক্ষার্থীদের আস্থার জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করতে চান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, যারা জন্মগতভাবে আওয়ামী পরিবারের সন্তান, স্বাধীনতা সপক্ষের শক্তি, ক্লিন ইমেজধারী ও সৎ, এমন কেউ দায়িত্বে আসুক। দীর্ঘদিন ধরে যারা রাজনীতি করছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপদে-আপদে যে পাশে থাকবে, সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ভূমিকা রাখতে পারবে এমন কাউকেই নেতৃত্বে চাই। বাইরের কোনও সংগঠন থেকে আসা এবং বিতর্কিত এমন কাউকে নেতৃত্বে চাই না।
যা বলছেন সাবেক নেতারা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বলছেন, এবারের সম্মেলন বেশ তাৎপর্যবাহী। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ সময় যারা ভূমিকা রাখতে পারবে এবং ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে পারবে, এমন কাউকে নেতৃত্বে আনা হোক। পাশাপাশি ক্লিন ইমেজধারী, দক্ষ সংগঠক, মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী ও নিয়মিত ছাত্রদের নেতৃত্বে চায় তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন বলেন, ক্লিন ইমেজধারী, দক্ষ সংগঠক, মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী, স্বচ্ছ ও ত্যাগীরা নেতৃত্বে আসুক। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় অনেক নেতাকর্মী ঝরে গেছে। যারা ২০১৩-১৪ সালে জামায়াত-শিবিরের সময়ে রাজপথে ছিল, সেই পরীক্ষিতদের মধ্যে থেকে সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারবে, তাদের কেউ নেতৃত্বে আসুক।
শীর্ষ দুই পদে একজন স্থানীয় ও অন্যজন বাইরের নেতৃত্বের আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এতে করে কমিটিতে সাংগঠনিক গতিশীলতা বজায় থাকবে।
সার্বিক বিষয়ে বর্তমান কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউনিট। একটু সুষ্ঠু ও সুন্দর সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে আমরা নেতৃত্ব হস্তান্তর করতে চাই। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আছে। এ সময় অনেক কুচক্রী মহল ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইবে।
তিনি আরও বলেন, যারা আওয়ামী পরিবারের সন্তান, দক্ষ সংগঠক, পরিশ্রমী, রাজপথের ত্যাগী সৈনিক, সংগঠনের প্রতি নিবেদিত হয়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করবে, দলের নীতি-আদর্শ বজায় রাখবে এবং এই ইউনিটকে গতিশীল ও সুসংগঠিত করতে যারা কাজ করতে পারবে, তাদের নেতৃত্বে দেখতে চাই।