প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ২০২৪ বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গতকাল সোমবার আজারবাইজানে রাজধানী বাকুতে শুরু হওয়া কপ২৯ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে এই সতর্কতা জানায় জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। জলবায়ু ও পরিবেশের ওপর নানা নেতিবাচক প্রভাবের কারণে উনিশ শতকের শেষের তুলনায় চলতি বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধের চেষ্টা করতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক জটিলতার কারণে এই লক্ষ্য অর্জনে এখনো দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে সামনের দিনগুলোতে এই জলবায়ু সংকট থেকে উত্তরণে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের এই সংস্থা।
এর আগে, গত ৭ নভেম্বর একই কথা জানিয়ে সতর্ক করেছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা। কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানিয়েছে, তাপমাত্রা রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে যাচ্ছে এটি। উষ্ণতায় এই বছরটি ২০২৩ সালকে যে পেছনে ফেলে দেবে এ বিষয়টি তখনই নিশ্চিত করেছিল তারা।
সি৩এস জানিয়েছিল, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে, এটি প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়, বছরের বাকি অংশে তাপমাত্রার বৈপরীত্য শূন্যের কাছাকাছি না এলে ২০২৪ সালই হবে বিশ্বের উষ্ণতম বছর। জলবায়ু পরিবর্তনকে চলতি বছরের রেকর্ডের মৌলিক ও প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন সংস্থাটির পরিচালক কার্লো বুওনটেম্পো।
তিনি বলেন, সাধারণত জলবায়ু উষ্ণ হচ্ছে। এটি সব মহাদেশে, সব সাগর অববাহিকায় উষ্ণ হচ্ছে। তাই আমরা সেই রেকর্ডগুলো ভাঙতে দেখতে বাধ্য।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ২০২৪-ই হবে প্রথম বছর যখন প্রাক-শিল্প যুগের (১৮৫০-১৯০০) তুলনায় বিশ্ব ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি উষ্ণ হবে। প্রাক-শিল্প যুগে মানুষ শিল্প খাতে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াতে শুরু করেছিল। কয়লা, তেল ও গ্যাস পোড়ানোর ফলে নির্গমন হওয়া কার্বন ডাই অক্সাইড বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রধান কারণ।
তবে সি৩এস বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যেই বিশ্ব প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাপমাত্রার প্রতিটি ভগ্নাংশই আবহাওয়ার চরম অবস্থাকে ত্বরান্বিত করছে।
জলবায়ুর এমন পরিবর্তনের কারণে চলতি বছর বিশ্ব জুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যাও বেড়েছে। আকস্মিক বন্যায় স্পেনে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়। ভিয়েতনাম-থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে টাইফুন আঘাত হানে। পেরু ও ব্রাজিলে রেকর্ড দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রে তা-ব চালায় হারিকেন মিলটন। ফলে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে জলবায়ু সংকট সমাধানে সামনে আসা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার আহ্বান জাতিসংঘের।