ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন কার্যক্রম প্রায় বন্ধ

ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন কার্যক্রম প্রায় বন্ধ

প্রথম নিউজ, অনলাইনভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্সের (ভ্যাট) ম্যানুয়াল পদ্ধতির অডিট বন্ধ করে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট কমিশনারেটের অভ্যন্তরীণ অডিটের জন্য অটোমেশনের মাধ্যমে কোম্পানি নির্বাচন করা হবে। যদিও এখন পর্যন্ত অটোমেশন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে পারেনি এনবিআর। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্টের আওতায় অটোমেটেডভাবে অডিটের জন্য প্রতিষ্ঠান সিলেক্ট করা হবে। তবে ভাবনার বিষয় হলো, অটোমেটেড পদ্ধতি চালু না করেই ম্যানুয়াল পদ্ধতি বন্ধ করে দিয়েছে এনবিআর। এতে ভ্যাট আদায়ে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। এ সুযোগে অনেক অসাধু প্রতিষ্ঠান রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ নিচ্ছে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট কমিশনারেটগুলোর অভ্যন্তরীণ অডিট ও প্রিভেন্টিভ কার্যক্রম প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে এনবিআর। সংস্থাটি বিভিন্ন ভ্যাট কমিশনারেটে অটোমেটেড পদ্ধতি বাস্তবায়ন না করেই ম্যানুয়াল অডিট বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছে। এ ধরনের চিঠির একটি কপি কালবেলার হাতে এসেছে। 

এনবিআরের এই চিঠিতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল অটোমেটেড পদ্ধতি অডিট সিলেক্টিভিটি কার্যক্রম চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত এনবিআরের অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানকে অডিটের জন্য নির্বাচন করা যাবে না। যদিও দীর্ঘদিন ধরে এনবিআরের ভ্যাট কমিশনারেটগুলোর যেসব প্রতিষ্ঠান অডিট করা প্রয়োজন, তা সংশ্লিষ্ট কমিশনারের নির্দেশে নির্বাচন করা হতো। প্রায় দুই মাস ধরে এনবিআরের এ ধরনের নির্দেশনা জারি হওয়ার পর ভ্যাট কমিশনারেটের অডিট কার্যক্রম প্রায় বন্ধ। এ ছাড়া ভ্যাট কমিশনারটের অভ্যন্তরীণ প্রিভেন্টিভ কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে ভ্যাট আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন খোদ ভ্যাট কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, অডিট নিয়ে কিছু হয়রানির অভিযোগ থাকলেও বড় অঙ্কের ভ্যাট আদায় হয়েছে। অথচ দুই মাস ধরে এ ধরনের নির্দেশনার পর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভ্যাট আদায়ের গতি কমেছে। এ ছাড়া বড় ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নানা ধরনের চাপ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন একাধিক ভ্যাট কর্মকর্তা।

ম্যানুয়াল অডিট বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, নতুন পদ্ধতি চালু না করেই ম্যানুয়াল পদ্ধতি বন্ধ করা হয়েছে। মূলত ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। তবে এনবিআরের অনুমোদন সাপেক্ষে অডিট করা যাবে। সেক্ষেত্রে জটিলতা আরও বেড়েছে। আর অডিট ও প্রিভেন্টিভ কার্যক্রমে গতি না থাকায় ভ্যাট আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এনবিআরের ভ্যাট আদায়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৪৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ পাঁচ মাসে ভ্যাট আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ দাড়িয়েছে ১২ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। আর প্রতিটি ভ্যাট কমিশনারেটে ভ্যাট আদায়ের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

শুধু নভেম্বরের ভ্যাট তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রংপুর ভ্যাট কমিশনারেট ছাড়া প্রতিটি ভ্যাট কমিশনারেট নভেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। একক মাস হিসেবে নভেম্বরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ভ্যাট কমিশনারেটগুলো আদায় করেছে ১০ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। শুধু নভেম্বরে ভ্যাটে ঘাটতি তৈরি হয়েছে ২ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা।

ভ্যাট আদায় কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক কমিশনার কালবেলাকে জানিয়েছেন, ভ্যাট কমে যাওয়ার বেশকিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আগে অডিট ও প্রিভেন্টিভের মাধ্যমে বেশকিছু রাজস্ব আহরণ করায় এক ধরনের শ্লথগতি দেখা দিয়েছে। এনবিআরের সিলেক্টেড প্রতিষ্ঠান ছাড়া এসব কার্যক্রম নেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া বর্তমান সার্বিক ব্যবসায়িক পরিস্থিতিও ভ্যাট আদায়ের অনুকূলে নয়।