৪ হাজার টাকা দিয়েও সাফিয়ার ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড
সাবেক এক ইউপি সদস্যকে ৪ হাজার টাকা ঘুষও দিয়েছেন। কিন্তু আশ্বাস পেলেও জোটেনি কোনো কার্ড।
প্রথম নিউজ, শেরপুর: সাফিয়া খাতুনের বয়স ৮৩ বছর। বয়সের ভারে চলাফেরা করতে হয় কুঁজো হয়ে। দীর্ঘ দিন ধরে ভুগছেন নানা রোগে। চিকিৎসা দূরের কথা, তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা তার জন্য কষ্টসাধ্য। জীবনের শেষ সময়ে এসে একটু সচ্ছলতার আশায় বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ধরনা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। এজন্য সাবেক এক ইউপি সদস্যকে ৪ হাজার টাকা ঘুষও দিয়েছেন। কিন্তু আশ্বাস পেলেও জোটেনি কোনো কার্ড।
সাফিয়া খাতুনের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামে। তার স্বামী আব্দুল আজিজ মারা গেছেন প্রায় আট বছর আগে। সহায়-সম্পদ বলতে এক খণ্ড ভিটে ছাড়া তেমন কিছু নেই। ছেলে-মেয়েরা যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ফলে এই বয়সে এসে বৃদ্ধা সাফিয়াকে কখনো এক বেলা, কখনো না খেয়ে থাকতে হয়। সাফিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী মইরা গেছে ৮ বছর অইবো। উনি মারা যাওয়ার পর আমি ছেলের কাছে থাকতাম। কিন্তু ছেলের বউ খালি আমার সাথে ঝগড়া করে। তাই অনেক দিন অইলো, ছোট একডা ঝুপড়ি ঘরে একলাই থাহি।’
তিনি আরও বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর ম্যালা কষ্টে আছি। অসুখ অইলে ঠিকমতো ওষুধ কিনবার পারি না। একটু খাইয়া-পইরা চলার জন্য ম্যালা দিন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে গেছি। কেউ আমারে সাহায্য করে নাইক্যা। সবশেষ একজনের কাছ থাইক্যা ৪ হাজার ট্যাহা ধার কইরা কহিনুর মেম্বাররে দিছি। ট্যাহা পাইয়াও সে তার কতা রাহে নাই। পরে ম্যালা বিচার, সালিস কইরা ট্যাহা কয়ডা ফেরত পাইছি।
স্থানীয় এলাকাবাসী এস এম শহীদুল ইসলাম বলেন, এই বৃদ্ধ বয়সে সাফিয়া অনেক কষ্ট করছেন। উনার ছেলে-মেয়েরা তার খোঁজ নেয় না। অনেক সময় ক্ষুধার জ্বালায় লোক-লজ্জা ভেঙে সাফিয়া মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে হাজির যান শুধু এক বেলা খাওয়ার জন্য।
চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সেদিন আমি বাড়ি ছিলাম না। বৃদ্ধা সাফিয়া জোর করে আমার স্ত্রীর কাছে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য ৪ হাজার টাকা দিয়ে আসে। তাহলে টাকা দিতে বিচার, সালিস করতে হলো কেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে সাবেক এই ইউপি সদস্য বলেন, টাকাটা আমি খরচ করে ফেলেছিলাম।
চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সেলিম রেজা বলেন, আমি নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছি। এত বয়সী একজন বিধবা নারীর যে বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি, সেটা আমি জানতাম না। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি আমার কাছে আসেননি। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলে তার জন্য একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করব। এছাড়া আমার ইউনিয়নে যদি সাফিয়ার মতো বয়স্ক কেউ ভাতা কার্ড থেকে বঞ্চিত থাকে, তাহলে তাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহনাহ ফেরদৌস বলেন, বৃদ্ধা সাফিয়া সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আবেদন করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বয়স্ক ভাতা পাওয়ার মতো উপযুক্ত হলে তাকে অবশ্যই কার্ড করে দেওয়া হবে। এটার জন্য তাকে অন্য কোথাও হয়রানি হতে হবে না।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews