৩ পিলার নিয়ে আমরা এগোচ্ছি : ড. আতিউর
প্রথম নিউজ, ঢাকা : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, বাজারকে অস্বীকার করার উপায় নেই। বাজারকে বাদ দিয়ে শুধু সরকার বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে এ অবস্থায় আনতে পারত না। বাজারের সরবরাহ চেইন থেকে আমরা সবাই সুবিধা নিচ্ছি। সুতরাং পিলার কিন্তু ৩টি। রাষ্ট্র, বাজার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগুলো নিয়েই আমরা এগোচ্ছি।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে 'শোভন কাজ ও সামাজিক সুরক্ষা : সকলের জন্য সমান মর্যাদা' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ (এডাব) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) যৌথভাবে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
আতিউর রহমান বলেছেন, আমাদের দেশের সরকার চেয়েছে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেরা কিছু করুক। সেই সুযোগ না দিলে কাজটা সরকারকেই করতে হতো। সরকারের হাতে এত অর্থ কোথায়? তখন সরকার আপনাদের উপর আরও কর আরোপ করত। এই করের টাকা দিয়ে সামাজিক সুরক্ষার নামে সরকার কিছু সুযোগ-সুবিধা করে দিত। আমার বিশ্বাস, শুধু সরকারি ব্যবস্থায় আজকের অবস্থান তৈরি হতো না। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগেই বাংলাদেশের আজকের এই অবস্থান।
তিনি বলেন, আমরা হয়তো আজকে অনেক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কথা বলছি। কিন্তু একটা সময় তো ছিল আমাদের, যেখানে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই সময়মতো খেতে পারত না, একটির বেশি পোশাক পড়তে পারত না। শীতের সময় শীতবস্ত্র ছিল না। পায়ে কোনো জুতো ছিল না। বেশিরভাগই কুঁড়েঘরে থাকতো। সেই জায়গাগুলো তো বদলেছে। সেই বদলটা একা কেউ পারেনি। সবাই মিলেই আমরা করেছি। যেখানে রাষ্ট্র, বাজার, সামাজিক সংগঠন সকলেরই অংশগ্রহণ ছিল। এই কথাগুলো মেনে নেওয়া ভালো। তথ্য যাই বলুক না কেনো, এগুলো আমরা খালি চোখে দেখতে পাই। তবে নিঃসন্দেহে আরও অনেক বেশি পরিবর্তনের সুযোগ আছে। আরও বড় ধরনের জীবনমান পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা আমাদের আছে। কিন্তু যতটুকু আমরা পেরেছি সেটি স্বীকার করে আরও কী করা যায় তা নিয়ে আমরা আলাপ করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ। সেই সময়ে অন্য রাষ্ট্র থেকে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ হয়েছে। তখনও মানুষ ঐক্যবদ্ধ ছিল, সক্রিয় ছিল উন্নয়ন। সবচেয়ে বড় পুঁজি ছিল আমাদের সামাজিক উন্নয়ন। ওই সময়ে আমরা আমাদের মনের দারিদ্র্য দূরীকরণে সবচেয়ে ভালো করেছি। সুতরাং দারিদ্র্য দূর করতে হলে মানুষের ঐক্যবদ্ধ ও সামাজিক পুঁজিটাই সবচেয়ে বড় পুঁজি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি শারমীন রিনভী বলেন, আমরা পরিসংখ্যান ও অনুসন্ধানে দেখছি আমাদের দারিদ্র্যর হার কমেছে। বাস্তবে কিন্তু তা হচ্ছে না। উন্নয়ন হয়েছে অবকাঠামোগত। সরকারি কর্মকর্তাদের সবচেয়ে বেশি বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে বাজারে আরও প্রভাব পড়েছে। আমরা এখন তথ্য দিয়ে মিথ্যাকে জায়েজ করার চেষ্টা করছি। কারণ তথ্য যারা বানাচ্ছে তারা যদি সত্য না বলে তাহলে তথ্যও সত্য হয় না।
সভাপতির বক্তব্যে এডাবের কোষাধ্যক্ষ মাসুদা ফারুক রত্না বলেন, আমাদের মানসিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। আমাদের গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির কারণে সরকারি পর্যায়ে গবেষণা বিকশিত হচ্ছে না। শুধু এনজিও কর্মীরাই গবেষণা এগিয়ে নিচ্ছে। নতুন করে বেসরকারি চাকরিজীবীদের উপর ট্যাক্স চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেটা দারিদ্র্য বিমোচনে অন্তরায়। আমাদের টেকসই উন্নয়নের দিকে এগুতে হবে।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডাবের কর্মসূচি পরিচালক কাউসার আলম কনক।