২৬০০ টাকায় শুরু, এখন মাসে আয় লাখের বেশি

চাকরি ছেড়ে মৌ চাষ শুরু করেন। এখন মাসে আয় লাখ টাকার বেশি। সেইসঙ্গে মৌ খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ যুবকের। তার উৎপাদিত মধু দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। সবাই তাকে ‘মধু মামুন’ নামেই চেনেন।

২৬০০ টাকায় শুরু, এখন মাসে আয় লাখের বেশি

প্রথম নিউজ, ঢাকা: একসময় এনজিওতে চাকরি করতেন। পাশাপাশি যাত্রাপালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় গম্ভীরা, পথনাটক, একক নারী-পুরুষ কণ্ঠের গান করতেন। এসবে জীবন-জীবিকা চলছিল না। একপর্যায়ে চাকরি ছেড়ে মৌ চাষ শুরু করেন। এখন মাসে আয় লাখ টাকার বেশি। সেইসঙ্গে মৌ খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ যুবকের। তার উৎপাদিত মধু দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। সবাই তাকে ‘মধু মামুন’ নামেই চেনেন।

মধু মামুনের পুরো নাম মামুন অর রশিদ। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গেটপাড়া গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে। মৌ চাষের মাধ্যমে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে সফল হয়েছেন তিনি।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামুনের সফলতার গল্পটা সহজ ছিল না। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছিল দারুণ প্রতিভা। জীবিকার তাগিদে যাত্রাপালা, গম্ভীরা, পথনাটক, একক নারী-পুরুষ কণ্ঠে গান করেছেন। পাশাপাশি এনজিওতে চাকরি করেছেন। তবু সংসারের অভাব-অনটন দূর হচ্ছিল না। 

এসব ছেড়ে ১৯৯৭ সালে কারিগরি প্রশিক্ষণ ছাড়াই দুই হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে চারটি মধুর বাক্স নিয়ে মৌ চাষ শুরু করেন। এ সময় পুরোদমে মৌ চাষে মনোনিবেশ করেন। বর্তমানে মামুনের তিনটি মৌ খামারে সাড়ে ৪০০ বাক্স রয়েছে। একেকটি বাক্স থেকে প্রায় সাত-আট কেজি মধু পান। গত বছর তিনটি মৌ খামারে ১০ টন মধু উৎপাদন করেছেন। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০ টন। প্রতি কেজি মধু ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। এতে মাসে আয় লাখ টাকার বেশি। আয় থেকে শ্রমিকদের বেতন দেন।

মিরপুর উপজেলার ধুবইল মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত। শীত মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ-চাষের বাক্স বসিয়েছেন মামুন। বাক্স থেকে মৌমাছির দল সরিষা ক্ষেতে উড়ে উড়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আবার বাক্সে ফিরে আসে। বাক্স থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয় মধু।

বর্তমানে খামারে ২০ জন কর্মচারী কাজ করছেন জানিয়ে মামুন অর রশিদ বলেন, ‌‘১৯৯৮ সালে মাস্টার্স পাস করেছি। তখন এনজিওতে চাকরি নিই। পরে অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে দিই। এরপর সংসারের অভাব দূর করতে চাকরির আশা না করে বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষ শুরু করি। এতে সফল হয়েছি। খুব ভালোভাবে চলছে আমার সংসার। বর্তমানে আমার খামারে ২০ কর্মচারী কাজ করছেন।’

আমার তিন খামারে সাড়ে ৪০০ বাক্সে মধু সংগ্রহ করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাড়াশের কেন্দুয়িল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুকনাপাড়া এবং মিরপুর উপজেলার ধুবইল মাঠে মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতি বছর সরিষা, কালোজিরা, ধনিয়া, বরই, টমেটো ও লিচুসহ বিভিন্ন ফুলের মধু সংগ্রহ করি। মেয়ের নাম অনুসারে খামারের নাম দিয়েছি মিষ্টি মৌ খামার। কুষ্টিয়ার বিসিক থেকে মধু বাজারজাত করার সনদ পেয়েছি। চলতি মৌসুমে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। চলবে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত।’

একসময় যাত্রাপালা, গম্ভীরা, পথনাটক, একক নারী-পুরুষ কণ্ঠে গান করেছি জানিয়ে মামুন অর রশিদ বলেন, ‘আমার এক ছেলে এক মেয়ে। স্ত্রী রাশিদা আক্তার খুলনা বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী। মেয়ে মায়মুনা রশিদ মিষ্টি চলতি বছর জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেছে। ছেলে আহনাফ তাহমিদ মুন (১০) পড়াশোনা করছে। বর্তমানে দেশে-বিদেশে মধু বিক্রি করি। অনেকে বাড়িতে এবং খামারে এসে সরাসরি মধু কিনে নিয়ে যান।’

বেশিরভাগ কোম্পানি স্বল্পমূল্যে মধু কিনে কেমিক্যাল মিশিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে অভিযোগ তুলে মামুন বলেন, ‘অনেকে মৌচাকে চাপ দিয়ে মধু সংগ্রহ করেন। এতে মধুর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। মৌ খামারে যন্ত্রের সাহায্যে বাতাস দিয়ে মধু সংগ্রহ করি আমি। এতে মধুর গুণগত মান ভালো থাকে। আমার খামারে উৎপাদিত মধু দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে যায়। সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খামার আরও বড় করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার ইচ্ছে আছে।’

নাটোর থেকে ধুবইল মাঠে মধু কিনতে আসা ফারুকুল আলম তুষার বলেন, ‘মধু মামুনের নামডাক শুনে নাটোর থেকে মধু কিনতে এসেছি। দেখে এবং নিজে খেয়ে পাঁচ কেজি মধু কিনে নিয়ে যাচ্ছি। মিরপুর উপজেলার মাহমুদা চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহ আক্তার মামুন বলেন, ‘মধু মামুন দীর্ঘদিন ধরে মৌ খামার গড়ে মধু বিক্রি করছেন। সারা দেশে তার নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য সরেজমিনে দেখে তার কাছ থেকে মধু কিনেছি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom