২০০৮ এ নির্দলীয়, ৯৬ এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল: এলজিআরডি মন্ত্রী
নেদারল্যান্ডসের রাজা ভিলেম–আলেকজান্ডার এর অফিসিয়াল জন্মদিন (জাতীয় দিবস) উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় অবস্থিত দেশটির দূতাবাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এলজিআরডি মন্ত্রী এমন কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: ২০০৮ সালে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী (এলজিআরডি) তাজুল ইসলাম। তাছাড়া, ১৯৯৬ সালে এবং তার আগেও তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করেন তিনি। নেদারল্যান্ডসের রাজা ভিলেম–আলেকজান্ডার এর অফিসিয়াল জন্মদিন (জাতীয় দিবস) উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় অবস্থিত দেশটির দূতাবাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এলজিআরডি মন্ত্রী এমন কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান ভ্যান লিউয়েন বলেন, "নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। জাতীয় নির্বাচন সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের জন্যেও একটি মাইলস্টোন। আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য নব দুয়ার উন্মোচন করবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সহ মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সাথে সাথে প্রাণবন্ত সুশীল সমাজ স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটায়। নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও অবস্থানের বিষয়টি গভীরভাবে অনুসরণ করছে।
আমরা অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের গুরুত্ব সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে একমত। আমরা কামনা করি এবং প্রত্যাশা করি যে বাংলাদেশের সকল জনগণ তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে এবং তাদের নেতা নির্বাচন করার জন্য নিজেদের অধিকার পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারবে।"
এলজিআরডি মন্ত্রী এরপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেশে অনুষ্ঠিত বিগত কয়েকটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানে এসব নিয়ে কথা বলা সমীচীন না হলেও যেহেতু অনেক প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সেহেতু এসব নিয়ে বলতে হয়। তিনি বলেন, "২০০৮ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল নির্দলীয় সরকারের অধীনে। ১৯৯৬ সালেও হয়েছিল তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এর আগেও হয়েছিল। কিন্তু নিজেরা নির্বাচিত না হলে কোনো নির্বাচনকেই বিরোধীরা স্বীকৃতি দেয় নি।
সুতরাং, এটা একটা অনেক বড় সমস্যা। কারণ, তারা রাজনৈতিকভাবে জন্ম নেয় নি। তারা সেনা শাসকদের পকেট থেকে জন্ম নিয়েছে। সুতরাং, এখানে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তারপরও আমরা সহযোগিতার চেষ্টা করে যাচ্ছি কারণ নির্বাচনী ইস্যু আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা আশাবাদী। এক দল কর্তৃক লাগাতার একটি দেশ শাসিত হওয়া আবশ্যক নয়। কিন্তু, নিজেদের অধিকার নিয়ে অন্য দলগুলোকেও সামনে এসে দাঁড়াতে হবে। এটা অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ।"
বঙ্গবন্ধুর সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছেন মন্তব্য করে মন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, "সব মানুষ যদি না খেয়ে মারা যায় তাহলে সেটা কি গণতন্ত্র? কারো যদি কোনো থাকার ঘর না থাকে সেটা কি গণতন্ত্র? কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা, কোনো শিক্ষা এবং কোনো নিরাপত্তা না থাকলে..." তিনি বলেন, আমরা রাস্তায় হাঁটতে পারতাম না। সংবিধান অনেকবার 'সাসপেন্ড' করা হয়েছিল। ২১ বছর ধরে আমরা এরকম ভয়াবহ এবং জটিল সময় অতিক্রম করেছি। সুতরাং, শত শত বছর ধরে যারা গণতান্ত্রিক সুবিধা ভোগ করে আসছেন তাদের যাত্রা আর বাংলাদেশের যাত্রা এক নয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ এবং সাংবাদিকদের ডাচ রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের প্রতিনিধিরা বরণ করে নেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইউরোপের উন্নত দেশ নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। পানি ব্যবস্থাপনা, অর্থনতিক উন্নয়ন, দারিদ্র দূরীকরণের পাশাপাশি সুশাসন, মানবাধিকার, দুর্নীতি রোধ, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি নানা বিষয়ে দেশটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছে।