১০ বছর ধরে জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে চলছে হাজারো মানুষ

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের দক্ষিণ পাড়া খালের ওপর নির্মিত সেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

১০ বছর ধরে জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে চলছে হাজারো মানুষ

প্রথম নিউজ, মুন্সীগঞ্জ: ১০ বছর ধরে জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছে হাজারো মানুষ।  মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের দক্ষিণ পাড়া খালের ওপর নির্মিত সেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, যেকোনো মুহূর্তে এটি ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই অবস্থায় সেতুটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পাশাপাশি নতুন সেতু নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের দুই পাড়ের বাসিন্দাদের চলাচলের সুবিধার্থে প্রায় ৩৫ বছর আগে ধনু হাজী জামে মসজিদ সংলগ্ন এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘ দিন সেতুটি সংস্কার না করায় একেবারে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে সেতুটি। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে ওই এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসার হাজারো কোমলমতি শিক্ষার্থী ও মসজিদের মুসল্লিরা। বিকল্প কোনো যাতায়াত পথ না থাকায় মরণ ফাঁদ জেনেও সেতুটি দিয়ে প্রতিনিয়ত বাধ্য হয়ে চলাচল করছেন ওই এলাকার লোকজন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুপাশের রেলিং ভেঙে গেছে। সেতুর উপরের অংশের ঢালাই উঠে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেতুটির নিচের পিলারের পলেস্তারা খসে সেতু হতে পাথর খসে খসে পড়ছে।  শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর খেলাধুলা করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বর্তমানে সেতুটির অবস্থা খুবই করুন। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই সেতুটি দিয়ে চলাচল করছেন আড়ালিয়া গ্রামের হাজারো মানুষ। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

আড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আল আমিন জানান, সুষ্ঠু যাতায়াত ব্যবস্থায় সেতুটি এই গ্রামের একমাত্র ভরসা। তবে মূল অবকাঠামো হারিয়ে সেতুটি এখন রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে এখনো এলাকাবাসীর অবিরাম সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে সেখানে প্রাণঘাতি দুর্ঘটনার ও আশঙ্কা রয়েছে।

একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা আব্দুর রসিদ সরকার জানান, সেতুটির এ করুন পরিণতি আরও ১০ বছর আগে থেকেই। ১০ বছর যাবৎ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়েই যাতায়াত করছেন এই এলাকার লোকজন। উপজেলাসহ স্কুল-কলেজে যেতে সেতুটি এই গ্রামের একমাত্র ভরসা। সেতুটি এখন রীতিমতো মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সম্পূর্ণ সেতুর পিলার বা খুঁটিগুলোসহ সমুদয় পলেস্তার খসে পড়ছে। নতুন সেতু নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে ওই গ্রামের সন্তান মুন্সীগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজীবী আরফান সরকার খোকন বলেন, সেতুটি অনেক দিনের পুরানো জরাজীর্ণ। বেশ কয়েক বছর যাবৎ ওই সেতুর রেলিং ভেঙে গেছে। ৩ বছর আগে আমি ওই সেতুর রেলিংয়ের জন্য কিছু অর্থ দিলে এলাকার লোকজন বাঁশ কিনে এনে ওই সেতুটিতে বাঁশের রেলিং দেয়। বর্তমানে ওই বাঁশগুলোর কিছু অংশ রয়েছে। তবে অধিকাংশ বাঁশ পচে ভেঙে গেছে। তিনি আরও বলেন, ওই সেতুটি দিয়ে গ্রামের ৪/৫ শত জন ছাত্রছাত্রী পাশের রায়পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে  ও সোনারগাঁ কলেজে যায়। প্রতিদিন হাজারো লোক এই সেতুটি দিয়ে যাতায়াত করে। তাই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানাচ্ছে।  

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান জুয়েল সরকার বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটির খুবই বেহাল দশা। সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। এ ব্যাপারে গজরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী  ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, আড়ালিয়া গ্রামে অন্য একটি ৬০ ফিট দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির এখনো প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়নি। পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর স্থানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।