Ad0111

হায়রে, উন্নয়নের নেশা!

হায়রে, উন্নয়নের নেশা!
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ঢাকা থেকে একদিন গাড়িতে করে বাড়ি ফিরবেন। রাষ্ট্রপতি পদে বসার পর সেই স্বপ্নকে জেদে পরিনত করেন। শুরু হয়, কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলার মধ্যে সারা বছর চলাচলের জন্য হাওড়ের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক নির্মান। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৭৪ দশমিক ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণ করে। ২০২০ সালের অক্টোবরে সড়কটি ঘটা করে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। কিশোরগঞ্জের হাওড়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন অলওয়েদার সড়ক এখন এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের দুঃখ-কষ্টের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুমানগঞ্জে সাম্প্রতিক অকাল বন্যায় ব্যাপক ফসলহানির জন্যও এই সড়কটি দায়ী। তো সড়কটি স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে উজানে (সুনামগঞ্জ) বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে কিশোরগঞ্জেও বন্যা ও ফসলহানির আশঙ্কা দেখা দেবে।

উপযুক্ত সংস্কার এবং খনন কাজের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে পলি জমে হাওড়াঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলো এম্নিতেই নাব্য হারিয়ে ফেলেছে। তার ওপর অলওয়েদার সড়ক নতুন করে উন্মুক্ত পানি প্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে এ জেলার উজানে অবস্থিত জেলাগুলো থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে পারছে না। ফলে ওইসব জেলার নিুাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। একইসঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলের ফসল ও ফসল রক্ষা বাঁধও। পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা জানান, বর্ষাকালে হাওড়াঞ্চলের বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত নিম্নাঞ্চল হয়ে ওঠে অবাধ পানি প্রবাহের উৎস। তখন নদীপথ এবং নিম্নাঞ্চলের পানি সরবরাহ পথ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তখন সকল প্রকার নৌযানও বাধাহীনভাবে ইচ্ছামতো দিগ্বিদিক চলাচল করতে পারত। এটিই ছিল এ হাওড়াঞ্চলের শত বছরের ঐতিহ্য। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে সড়কপথ নির্মাণে সেই স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে ভাটিকন্যাখ্যাত এ হাওড়াঞ্চলের জীববৈচিত্র্যেও।
এ অঞ্চলে নদ-নদী ও খাল-বিলে যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খরচও হতো খুবই অল্প। এখনকার উন্নয়নের সঙ্গে প্রকৃত অর্থে জীবনমান উন্নয়নের সাদৃশ্য খুবই কম। এসব দৃষ্টিনন্দন সড়কপথ ঘিরে পর্যটন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে সত্যি, কিন্তু এখানকার অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের ধারায় খুব একটা প্রভাব পড়েনি। কেননা, এখানকার বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা চাষাবাদ ও মাছ আহরণের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে উন্নয়নের পাখায় ভর করে যেসব সুবিধা আসছে তাও ভোগ করছে সচ্ছল ও ধনাঢ্য শ্রেণির মানুষ। হাওড় উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা কাজে নিয়োজিত একটি সংগঠনের সংগঠক জানান, এসব উন্নয়ন অনেকাংশেই অপরিকল্পিত। এখানে কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী সমাজের জীবনমান উন্নয়ন ভাবনা অনুপস্থিত।
উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত সড়ক,মহাসড়ক আর সেতু নির্মানের অপরিনামদর্শী কর্মকান্ড আজ দেশের বিরাট একটা মানুষকে নিত্য দুর্ভোগ বিধিলিপি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হায়রে উন্নয়নের নেশা!????
মুজতবা খন্দকার : সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক (ফেইসবুক ওয়াল থেকে)

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news