হামজার অপেক্ষায় পুরো বাংলাদেশ

হামজার অপেক্ষায় পুরো বাংলাদেশ

প্রথম নিউজ, অনলাইন:‘স্যরি, আপনার কল ধরতে একটু দেরি হলো। হামজার ব্যাপারে একটা মিটিংয়ে ছিলাম’—এভাবেই ব্যস্ততার কথা শুনিয়েছেন হামজা চৌধুরীর বাবা মোর্শেদ দেওয়ান চৌধুরী। লাল-সবুজের জার্সিতে ছেলে খেলতে আসবে। পৈতৃক ভিটায় হামজা আসছেন ১৭ মার্চ।

এ উপলক্ষে ইংল্যান্ড থেকে সপ্তাহ তিনেক আগেই বাংলাদেশে চলে এসেছেন তাঁর বাবা। এরপর ব্যস্ততার মধ্যে ঢুকে পড়তে হয়েছে মোর্শেদ দেওয়ানকে। হবিগঞ্জে হামজার আগমনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছেন মোর্শেদ দেওয়ান। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকেও নিরাপত্তার বিষয়ে অবহিত করেছেন তিনি।

আজ ইংল্যান্ড সময় দুপুরে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে ম্যাচ খেলে রাতেই বাংলাদেশের বিমান ধরবেন হামজা। আগামীকাল সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন তিনি। ইংল্যান্ড থেকে তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে স্ত্রী, তিন সন্তান, মা, দুই ভাইসহ ৯ জন আসছেন। হামজা এর আগেও হবিগঞ্জে এসেছেন।

কিন্তু এবারের আগমন বিশেষ বলা যায়। একজন বাংলাদেশি হয়ে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আসছেন যে তিনি। বাবা মোর্শেদ দেওয়ানের মধ্যেও তাই রোমাঞ্চ খেলে যাচ্ছে, ‘আমার জন্য সত্যি বিশেষ ব্যাপার। এবার খানিকটা অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে আমার। শুধু আমার ছেলে হয়ে এবার আসছে না, পুরো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আসছে।

আমার ভালো লাগা যেমন আছে, তেমনি ভয়ও লাগছে কিছুটা।’ কী সেই ভয়? তিনি বলেছেন, ‘সবাই ভাবছে হামজা আসছে, এবার শুধু আমরা জিতব। ভারতকে হারিয়ে দেব। আমিও বিশ্বাস করি, এবার ভারতকে হারাতে পারব। যদি না জিততে পারি তাহলে তো সমালোচনা হবে। এটা নিয়েই ভয় লাগা কাজ করছে। তবে সব ম্যাচ জিতব বা করব এমনটা ভাবা যাবে না। হামজাকে নিয়ে যেন বাংলাদেশের ফুটবল কিভাবে এগিয়ে নিতে পারি সেই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’

সিলেটে নেমে সরাসরি হবিগঞ্জের বাহুবল থানার স্নানঘাট গ্রামে নিজ বাড়িতে যাবেন হামজা। আগামীকাল সেখানে পরিবারের সঙ্গে রাত কাটাবেন তিনি। পরের দিনের অনেকটা সময়ও গ্রামের বাড়িতেই থাকবেন হামজা। এরপর দিনের শেষ ফ্লাইট ধরে ঢাকায় এসে যোগ দেবেন দলের সঙ্গে। ১৯ মার্চ দুপুরে টিম হোটেলে অফিশিয়াল প্রেস কনফারেন্সে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন তিনি। তার আগে সকালে হবে দলীয় ফটোসেশন। এরপর বিকেল অথবা সন্ধ্যায় অনুশীলনে নামার কথাও রয়েছে হামজার। দলের অনুশীলনের ব্যাপারটি অবশ্য নির্ভর করছে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ওপর। ইংলিশ ফুটবলে বেড়ে ওঠা ও ইংলিশ লিগ মাতানো ফুটবলার আসার খবরে স্থানীয়দের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ দেখছেন মোর্শেদ দেওয়ান। আত্মীয়-স্বজনও হামজার অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। বাড়িতে খুব বড় কোনো আয়োজন রাখছি না। যেহেতু অল্প সময়ের জন্য আসছে। স্থানীয়দের মধ্যেও অনেক আগ্রহ দেখছি। অনেক মানুষের সমাগম হবে। এতে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারে। কিভাবে সব কিছু সামাল দেব সেটাও ভাবতে হচ্ছে। তবে প্রশাসন সব সময় তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে নিশ্চয়তা দিয়েছে।’ জানা গেছে, হামজাকে বরণ করে নিতে স্থানীয় খুদে ফুটবলাররা ক্রেস্ট ও ফুল নিয়ে অপেক্ষায় থাকবে।

হামজার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বদা নিয়োজিত থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এত কাছ থেকে তারকা ফুটবলারকে দেখতে পাবেন ভেবে বাড়তি ভালো লাগা কাজ করছে বাহুবল থানার ওসি মশিউর রহমানের, ‘আমরা জেনেছি তিনি আসছেন। আমাদের সব ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমি গর্বিত তাঁর মতো একজন খেলোয়াড়ের অঞ্চলের মানুষ হতে পেরে। তিনি বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। ইংল্যান্ডের শীর্ষ পর্যায়ে খেলা মানে তো বিশাল ব্যাপার!’

শুধু হামজার পরিবার কিংবা হবিগঞ্জের মানুষ নয়, পুরো বাংলাদেশই এখন হামজার অপেক্ষায়।