সাড়ে ৮ ঘণ্টা ধরে চার ছাত্র তালাবদ্ধ, উদ্ধার করলেন ইউএনও
বুধবার (২০ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে তাদের তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভুইয়া ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
প্রথম নিউজ, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের চার ছাত্রকে স্টাফ কোয়ার্টারে টানা সাড়ে ৮ ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২০ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে তাদের তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভুইয়া ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ আলোমতি বেগমের নির্দেশক্রমে তালাবদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইনস্টিটিউটের দুই কর্মচারী ও ভুক্তভোগী ছাত্ররা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইনচার্জ আলোমতি বেগম। এদিকে নার্সিং ইনস্টিটিউটের কোয়ার্টারে স্টাফ ছাড়া ছাত্রদের রাখার কোনো বৈধতা নেই। টানা সাড়ে ৮ ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রাখার বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন নার্সিং খুলনা বিভাগের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সহকারী পরিচালক ও খুলনা নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ আছমাতুন নেছা।
জানা গেছে, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ আলোমতি বেগমের অনুমতি সাপেক্ষে নোয়াখালীর তৌফিকুল ইসলাম (২০), নরসিংদীর আজিজুর রহমান সিয়াম (২০), পটুয়াখালী সাকিব (২০) ও টাঙ্গাইলের শওকত (২০) নার্সিং ইনস্টিটিউটের সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে ওঠেন। ৩ মাস ধরে তাদের কোয়ার্টার ছাড়তে নির্দেশ দিলেও বাড়ি ভাড়া না পাওয়ার কারণে তারা কোয়ার্টার ছাড়েননি। বুধবার সকাল ১০টার দিকে তাদের তালাবন্ধ করে দেওয়া হয়।
খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূইয়া, ভূমি কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেড মাজহারুল ইসলাম, পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ ও প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি শাহ আলম সনির সহযোগিতায় দারোয়ানের কাছে থাকা চাবি দিয়ে তালা খুলে তাদের উদ্ধার করা হয়। ভুক্তভোগী ছাত্ররা বলেন, আমাদের কোয়ার্টার ছাড়তে বলেছিলেন ইনচার্জ। আমরা ব্যাচেলর হওয়ায় বাড়ি ভাড়া কেউ দিতে চাচ্ছে না। রাতেও ক্লাস করা লাগে। সব দিক বিবেচনা করে আমাদের কাছে কোনো বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া দিতে চাইছে না।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ ইনচার্জের নির্দেশে অফিসের হিসাবরক্ষক রফিকসহ দুজন কোয়ার্টারের মেইন গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। আমরা সারা দিন না খেয়ে আটকে ছিলাম। আমাদের ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। কেউ কোনো খাবারও দেয়নি। সাংবাদিক শাহ আলম সনির সঙ্গে যোগাযোগ করলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ইউএনও, সংবাদকর্মী ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসে আমাদের উদ্ধার করেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূইয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করি। আমরা না আসলে হয়তো তাদের এভাবেই সারা রাত কাটাতে হতো। বিষয়টি অমানবিক। তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যতদিন তাদের থাকার ব্যবস্থা না হয়, তারা এই কোয়ার্টারেই থাকবে বলে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছি।
চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ আলোমতি বেগম বলেন, স্টাফ কোয়ার্টারে ছাত্র থাকার বৈধতা নেই। তারা বাড়ি ভাড়া করে থাকবে। করোনার সময় মানবিক কারণে তাদের এখানে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। ৩ মাস ধরে মৌখিকভাবে তাদের কোয়ার্টার ছাড়তে বলা হলেও তারা ছাড়েনি। তিনি আরও বলেন, গতকাল আমি ছুটিতে ছিলাম। কে বা কারা তালাবদ্ধ করে রেখেছিল তা আমার জানা নেই। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে চরম অন্যায় করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) অফিসে গিয়ে বিষয়টি খোজঁ-খবর নেব। সত্যতা পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাদ বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। নার্সিং ইনস্টিটিউটের চতুর্থ শ্রেণির কিছু কর্মচারী এই ছাত্রদের উৎখাত করার জন্য পেছনে লেগে আছে। গতকাল সকালে তাদের তালাবদ্ধ করে দেয়। নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জকে ফোন করা হলে তিনি কিছুই জানি না বলেন। রবিউল নামে এক কর্মচারী ফোনে বলেন, ইনচার্জের নির্দেশেই তালা দিয়েছি। তিনি না বললে আমার তালাবদ্ধ করার সাহস হয় কীভাবে? তিনি আরও বলেন, জনগণের সেবাদানের জন্য যারা আমাদের জেলায় শিক্ষাগ্রহণ করতে এসেছে, তাদের তালাবদ্ধ করে রাখা মোটেও ঠিক হয়নি। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সাংবাদিক শাহ আলম সনি বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ইউএনওকে জানাই। পরে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আটকে থাকা চার ছাত্রকে উদ্ধার করি। তালাবদ্ধ করাকে কেন্দ্র করে ইনচার্জ ও হিসাবরক্ষক দুইজন পারস্পারিক দোষারোপ করছেন। যে কাজটা হয়েছে তা অমানবিক। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তারা কিছুই খাইনি। এই অমানবিক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হওয়ার দরকার বলে মনে করি। নার্সিং খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক ও খুলনা নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ আছমাতুন নেছা বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। প্রথমত স্টাফ কোয়ার্টারে নার্সিং ইনস্টিটিউটের কোনো ছাত্র থাকতে পারবে না বলে নির্দেশনা রয়েছে। দ্বিতীয়ত তাদের তালাবদ্ধ করে রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews