সাড়ে চার মাস পর কারামুক্ত ,গোটা দেশই এখন কারাগার: রিজভী
সাড়ে চার মাসেরও বেশি সময় কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
প্রথম নিউজ, ঢাকা :সাড়ে চার মাস পর কারামুক্ত হয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। আজ মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এসময় জেলগেটে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান তার সহধর্মিণী আরজুমান আরা বেগমসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কয়েকশ' নেতাকর্মী।
রিজভীর মুক্তির সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম,মীর নেওয়াজ আলী, আমিনুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারন সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের ডা. জাহিদুল কবির, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. আউয়াল, ইউনির্ভাসিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের রাশেদুল হক কারাগারের সামনে উপস্থিত ছিলেন।
কারামুক্ত হয়ে রিজভী বলেন, গোটা দেশই এখন কারাগার। বর্তমানে মানুষের কোনো অধিকার নেই। ভোটের অধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই। গণতন্ত্রের মুক্তি মিললেই মানুষ সকল অধিকার ফিরে পাবে। তিনি বলেন, ছোট কারাগার থেকে বৃহত্তর কারাগারে প্রবেশ করেছি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। এসময় তিনি আটক যুবদল নেতা আব্দুল মুনায়েম মুন্না, এসএম জাহাঙ্গীর, গোলাম মওলা শাহীনসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করেন। পরে প্রাইভেট গাড়িতে করে সরাসরি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন । রুহুল কবির রিজভী বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে বাসায় পৌঁছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাসায় পৌঁছলে সেখানে তার স্ত্রী তাকে স্বাগত জানান। পরে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা নায়ক আশরাফ উদ্দিন উজ্জল, ডা. রফিকুল ইসলাম, মীর শরাফত আলী সপু, আসাদুল করিম শাহীন, মীর নেওয়াজ আলী, খন্দকার আবু আশফাক,ব্যারিস্টার মীর হেলাল, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম তেনজিং, মেয়র মজিবুর রহমান, ছাত্রদলের সভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন , গাজীপুর মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক এম মঞ্জুরুল করিম রনি, যুগ্ম আহবায়ক সুরুজ আহমেদ, তাতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎসজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. আউয়ালসহ বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
তার আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ জানান, রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ৫০টি মামলায় জামিন পান। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং কুমিল্লার আদালত থেকে এসব মামলায় জামিন পান। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা বেশির ভাগ মামলায় নাশকতার অভিযোগ আনা হয়। সর্বশেষ মানহানির মামলায় গোপালগঞ্জের আদালত থেকে জামিন পান তিনি।
ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে রুহুল কবির রিজভীসহ চার শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করে। পরদিন পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাহজাহানপুর থানায় পৃথক চারটি মামলা করে পুলিশ। পল্টন ও মতিঝিল থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রুহুল কবির রিজভীকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে আরও বিভিন্ন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
কারাগারে থাকাকালীন কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল কবির রিজভী। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল দুপুরে পুরান ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে তাকে প্রিজনভ্যানে করে কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার পথেই অসুস্থ হন। তার অসুস্থতায় চিন্তিত ছিল তার পরিবার। তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে উন্নত ও সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছিলেন তার স্ত্রী আরজুমান আরা বেগম। অসুস্থতার কথা শুনে কারাগারে ও আদালতে রিজভীর সঙ্গে দেখা করতে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় নেতা রুহুল কবির রিজভী। তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরেরও দায়িত্বে রয়েছেন। আশির দশকে আন্দোলনের সময় রুহুল কবির রিজভী পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তখন দেশে ও পরে বিদেশে তার পেটে অস্ত্রোপচার হয়। এর পর থেকেই তার পেটের সমস্যা জটিল হয়ে আছে।
চিকিৎসকের পরামর্শে প্রায় ৩০ বছর ধরে রিজভী হাতের স্পর্শে খাবার খান না। খোলা পানি খেতে পারেন না। বোতলজাত পানি পান করতে হয়। মহামারি করোনাকালেও তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় চার মাস হাসপাতালে ছিলেন। এর আগে তার হার্ট অ্যাটাকও হয়েছিল। চিকিৎসকের পরামর্শে খুবই সতর্কভাবে জীবনযাপন করতে হয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রিজভীকে।