সূর্যের মধ্যে 'বিশাল গর্ত ': পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারে সৌর বায়ু

পৃথিবীর আকারের ৩০গুণ বড় একটি গর্ত তৈরি হয়েছে সূর্যের উপর।

সূর্যের মধ্যে 'বিশাল গর্ত ': পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারে সৌর বায়ু
সূর্যের মধ্যে 'বিশাল গর্ত ': পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারে সৌর বায়ু

প্রথম নিউজ, ডেস্ক: সূর্যের পৃষ্ঠে একটি বিশাল 'গর্ত' তৈরি হয়েছে। যার জেরে শুক্রবারের মধ্যে পৃথিবীর দিকে ১.৮ মিলিয়ন মাইল-ঘণ্টা বেগে ধেয়ে আসতে পারে সৌর বায়ু। পৃথিবীর আকারের ৩০গুণ বড় একটি গর্ত তৈরি হয়েছে সূর্যের উপর। এই প্রথম এতো বড় একটি সৌর গর্ত পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হয়েছে। এই গর্তগুলি মহাকাশে সৌর বায়ু নিঃসরণ করে, যা উপগ্রহগুলির ক্ষতি করতে পারে। পৃথিবীতে পৌঁছলে অত্যাশ্চর্য অরোরা প্রকাশ করতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই গর্ত নিয়ে ততটা উদ্বিগ্ন নন, তারা উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে এর থেকে উৎপন্ন অরোরা পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে।

'করোনাল হোল' সূর্যের বিষুবরেখার কাছাকাছি অবস্থিত

সূর্যপৃষ্ঠের গর্ত সাধারণ একটি ঘটনা, সূর্যের মেরুগুলির দিকে এগুলি দেখা যায়। এই গর্ত থেকে সৌর বায়ু মহাকাশে প্রবাহিত হয়। রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেস ফিজিক্সের অধ্যাপক ম্যাথিউ ওয়েনস 'ইনসাইডারকে' বলেছেন, ১১ বছর পর পর এই গর্তগুলি সূর্যের বিষুব রেখার কাছে উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এটি বিষুব রেখার কাছে থাকার অর্থ হল মধ্য মেরিডিয়ান অতিক্রম করার কয়েকদিন পর পৃথিবীতে সৌর বাতাস প্রত্যক্ষ করার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনাল হোল খুব দ্রুত সৌর বায়ু বিস্ফোরিত করতে পারে, প্রতি সেকেন্ডে ৮০০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে, প্রায় ১.৮ মিলিয়ন মাইল প্রতি ঘন্টা। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের স্পেস এবং ক্লাইমেট ফিজিক্সের সহযোগী অধ্যাপক ড্যানিয়েল ভার্সচারেন ইনসাইডারকে বলেছেন- ''এই করোনাল হোলের আকৃতি বিশেষ নয়। তবে এর অবস্থান এটিকে খুব আকর্ষণীয় করে তোলে। এই সপ্তাহে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সেই করোনাল গর্ত থেকে দ্রুত বাতাস পৃথিবীতে ধেয়ে আসবে বলে আমি আশা করছি।'

সৌর গর্তগুলি বায়ুকে দ্রুত নিঃসরণ করে

সূর্য হল প্লাজমার একটি বড় বল। সেই প্লাজমা সূর্যের অভ্যন্তর থেকে তার পৃষ্ঠে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে। NASA অনুসারে এই চৌম্বকীয় ক্ষেত্রগুলি সরাসরি মহাকাশে উঠে গেলে একটি করোনাল গর্ত দেখা দেয়।এটি সূর্য থেকে প্লাজমার বিট অর্থাৎ সৌর বায়ু উচ্চ গতিতে মহাকাশে নিঃসরণ অনেক সহজ করে তোলে। এই অঞ্চলগুলি সাধারণত আশেপাশের উত্তপ্ত, মন্থনকারী প্লাজমার তুলনায় শীতল এবং কম ঘন। যদি সেই চৌম্বক রেখাগুলি পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে, তবে সেই বাতাস আমাদের বায়ুমণ্ডলকে  বিধ্বস্ত করবে। ভার্সচারেন ইনসাইডারকে বলেছেন -
"যদি এর অভিমুখ দক্ষিণ দিকে হয়, তাহলে আমাদের এই সৌর বায়ু প্রত্যক্ষ করার সম্ভাবনা বেশি।'

অরোরা আরো উজ্জ্বল হতে পারে

যেহেতু এই সৌর বায়ুগুলির সাথে আমাদের বায়ুমণ্ডলের সংঘর্ষ বাধে, যার জেরে অরোরা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু ফ্লোরিডায় যেমন উজ্জ্বল অরোরা দেখা গেছে এটি তেমন উজ্জ্বল নাও হতে পারে। গত সপ্তাহে যখন আকাশ উজ্জ্বল অরোরায় আলোকিত হয়েছিল সেগুলি দক্ষিণে অ্যারিজোনা পর্যন্ত দেখা গিয়েছিল, এটি কেবল করোনাল গর্তের কারণে হয়নি। সূর্য থেকে প্রচুর পরিমাণে প্লাসমা নিঃসরণের কারণে এতো উজ্জ্বল অরোরা দেখা গিয়েছিলো। শুধু তাই নয় এটি পৃথিবীর বুকে একটি বিশাল ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় তৈরি করেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি আবার ঘটবে এমন সম্ভাবনা নেই। যা আমাদের গ্রহের জন্য ভালো খবর। কারণ শক্তিশালী ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় উপগ্রহ, অবকাঠামো এবং রেডিও সংকেতকে বিপর্যস্ত করতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন - মহাকাশের আবহাওয়া সঠিকভাবে অনুমান করা সবসময়ই কঠিন।ভার্সচারেন বলেছেন -আমরা মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার ক্ষেত্রে এখনো অনেকটাই পিছিয়ে আছি। তাই কি ঘটবে তা জানার জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। নির্ভর করতে হয় তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা, সুপার কম্পিউটারে প্লাজমা সিমুলেশন এবং সর্বশেষ মহাকাশযানের অত্যাধুনিক পর্যবেক্ষণের ওপর। '' সূত্র : সায়েন্স এলার্ট

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: