৩২১ কোটি টাকা জলে, ব্যয় করা হচ্ছে আরও ৪১ কোটি

যশোর-খুলনা মহাসড়ক সংস্কার

৩২১ কোটি টাকা জলে, ব্যয় করা হচ্ছে আরও ৪১ কোটি

প্রথম নিউজ, যশোর: যশোর-খুলনা মহাসড়কে দফায় দফায় সড়ক সংস্কারের কাজ করলেও মিলছে না স্থায়ী সমাধান। ফলে এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবহন ও যাত্রীদের ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। সংস্কার কাজের জন্য সৃষ্ট ধুলাবালু অতিষ্ঠ করে তুলেছে সড়কের দুই পাশের বাসিন্দাদের।

প্রায় বছরখানেক আগে যশোর-খুলনা মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটার সড়কের শেষ হওয়া পুনঃনির্মাণ কাজের সুফল মেলেনি। পুনঃনির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ছয় মাসের মাথায় আবারও খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে সড়কটিতে। তবে চলতি বছরের জুনে আবারও এই ৩৮ কিলোমিটার সড়কের ৩ দশমিক ৯৩০ কিলোমিটার সড়কে ঢালাইয়ের কাজ শুরু করেছে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের মে মাসে যশোর খুলনা মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটার সড়কের পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০২০ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও কাজে ধীরগতির কারণে তা গড়িয়ে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয়। এ সময় পুনঃনির্মাণ কাজে ব্যয় হয় ৩২১ কোটি টাকা। নির্মাণ কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। তবে এই কাজ শেষ হওয়ার মাত্র ছয় মাসের মাথায় আবারও খানাখন্দের সৃষ্টি হয় এই সড়কটিতে। নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতে সড়কের অবস্থা পূর্বের মতো হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, রাস্তার কাজে দুর্নীতি ও লুটপার হওয়ায় নতুন করে নির্মাণ করা রাস্তার আবারও বেহাল দশা। এরপর সড়কে সৃষ্ট খানাখন্দ ঢাকতে জোড়াতালির কাজও করা হয়। 

রুপদিয়া এলাকার ইজিবাইক চালক ইসতিয়াক হোসেন বলেন, করোনার মধ্যে যখন দেশের লোকজন ব্যস্ত তখন এই যশোর-খুলনা মহাসড়কে পুনঃনির্মান কাজের নামে লুটপাট চলেছে। যার ফলে এই কাজের সুফল আমরা পাইনি। কাজ শেষ করার কিছুদিনের মধ্যে আবারও আগের অবস্থা হয়ে গেছে।  একই এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বাসিন্দা অমল কৃষ্ণ বলেন, যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে কাজ করা হতো তাহলে সরকারের ৩২১ কোটি টাকা জলে যেত না। কাজে ফাঁকি দেওয়ার মাধ্যমে সরকারকে ফাঁকি দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টরা। আর এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। অন্যদিকে প্রতিবছর সরকারকে গুনতে হচ্ছে শত শত কোটি টাকা।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যশোর-খুলনা মহাসড়কের দীর্ঘ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে ৩ দশমিক ৯৩০ কিলোমিটার সড়কের ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে চলতি বছরের জুন মাসে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এই ঢালাইয়ের কাজে ব্যয় করা হচ্ছে ৪১ কোটি টাকা। ঢালাই কাজ করছে খুলনা মোজাহার কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ উদ্যোগও কতটুকু সুফল বয়ে নিয়ে আসবে তা নিয়েও চিন্তিত এ এলাকার বাসিন্দারা।

বসুন্দিয়া চেঙ্গুটিয়া এলাকার বাসিন্দা রাজিবুল ইসলাম বলেন, দফায় দফায় কাজ করা হচ্ছে, তাও আবার জোড়াতালি। তাতে কোনো সুফল আসছে না। আবারও এই সড়কে সরকার ৪১ কোটি টাকা ব্যয় করছে। তাহলে আগের ৩২১ কোটি টাকার হিসাব সরকারের নেওয়া উচিত। ট্রাকচালক রমজান আলী বলেন, এই সড়ক পুনঃনির্মাণের পর ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। গাড়ি চালাতে গেলে ঢেউয়ের মতো রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে অনেক। সর্বশেষ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সড়ক বিভাগকে হুঁশিয়ারি দিলে আবারও নড়েচড়ে বসে সরকারের আরও ৪১ কোটি টাকা এই সড়কে ব্যয় করছে। তবে এতো এতো কাজের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু কাজের জন্য যানজট আর ধুলাবালুর ভোগান্তিই পোহাতে হচ্ছে। 

এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, যশোর-খুলনা মহাসড়কের নওয়াপাড়া থেকে বসুন্দিয়া, রুপদিয়া পর্যন্ত কয়লা ও অনান্য ভারী বস্তু বহন ও ওভার লোডিংয়ের কারণে আগের পুনঃনির্মাণ করা সড়কটি ফুলে ফেঁপে ওঠে এবং খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। 

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, যশোর-খুলনা মহাসড়কে ২০২২ সালে শেষ হওয়া পুনঃনির্মাণ কাজের পর ওভার লোডিংয়ের কারণে আবারও রাস্তা ফুলে ফেঁপে ওঠে। আমরা চলতি বছর বুয়েটের একজন শিক্ষকের গবেষণা অনুযায়ী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের গবেষণা অনুযায়ী ৩৮ কিলোমিটার সড়কের প্রথম পর্যায়ে ৩ দশমিক ৯৩০ কিলোমিটার সড়কের ঢালাইয়ের কাজ শুরু করেছি। আগামী বছরের মে মাসে এটি শেষ করতে পারব বলে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, এরপরের ধাপে বাকি অংশ ঢালাইয়ের কাজের জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি, তবে সেটি এখনো অনুমোদন হয়নি। আমরা আশা করছি এবারে এ সড়কের একটি স্থায়ী সমাধান মিলবে।