স্বৈরাচারের দোসর জামিল আহমেদ কীভাবে শিল্পকলা একাডেমির ডিজি হয়, প্রশ্ন রিজভীর

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকায় আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে  নিহত তিনটি পরিবারের মাঝে তারেক রহমানের অর্থ সহায়তা দিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

স্বৈরাচারের দোসর জামিল আহমেদ কীভাবে শিল্পকলা একাডেমির ডিজি হয়, প্রশ্ন রিজভীর

প্রথম নিউজ, অনলাইন : জামিল আহমেদের মত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর কিভাবে শিল্পকলা একাডেমীর ডিজি হয় এমন প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, 'আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি কেউ কেউ আবার বলেছে শেখ হাসিনার সাথে সংলাপ করা দরকার দেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশের জন্য। কিন্তু কেন? হিটলারের সাথে কি সংলাপ করা যায়? আবার কি আমরা ইয়াহিয়া খান, টেক্কা খানকে ডেকে নিয়ে এসে সংলাপ করব? এই সব বলা লোক সৈয়দ জামিল আহমেদকে শিল্পকলা একাডেমীর ডিজি বানানো হয়েছে। এগুলো হচ্ছে কেন? তিনি কয়েকদিন আগে বলেছেন পালিয়ে থাকা রামেন্দ্র মজুমদার, নাসির উদ্দিন বাচ্চু এদেরকে নিয়ে আসা দরকার। আমার প্রশ্ন, তারা পালিয়েছে কেন? ওরা আত্মগোপনে আছে কেন? আমরা তো দেখছি যারা ভদ্র আওয়ামী লীগের তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের দুর্বলতার সুযোগে কিংবা আপনাদের ভালো মানসিকতার সুযোগে ওই পরাজিত স্বৈরাচারের লোকেরা যেন কোনভাবেই প্রতিষ্ঠা না পায়। হিটলারের যারা সহযোগী ছিল তাদেরকে কি পরবর্তী সরকার কোন জায়গায় দিয়েছিল? এটাতো আমরা কখনোই শুনি নেই। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকায় আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে  নিহত তিনটি পরিবারের মাঝে তারেক রহমানের অর্থ সহায়তা দিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, 'তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা নানা কথা বলছেন। আপনি সৈয়দ জামিল আহমেদ এই সমস্ত বুদ্ধিজীবীদেরকে নিয়ে কিসের রাষ্ট্র তৈরি করতে চান। আবার আপনি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে চান? আপনি শেখ হাসিনাকে ফিরে আনলে হয়তো আপনাদের আবার সুবিধা হবে কিন্তু গোটা জাতি আবার ক্রীতদাস হয়ে যাবে, বন্দী হয়ে যাবে শেখ হাসিনার কাছে এবং তার প্রভু ভারতের কাছে। 
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, 'গতকাল ২৫ জন ডিসি দিয়েছেন। এই ২৫ জন ডিসির সবগুলোই ছিল ছাত্রলীগের। এরা এখন ডিসি হয়ে গেছে এরা তো গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করবে না। আজকে যারা আয়না ঘর করেছে, সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডকে যারা ধামাচাপা দিয়েছে, যারা একের পর এক দুষ্কর্ম করেছে তাদেরকেই তো এরা প্রশ্রয় দিবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সকলের আস্থা আছে। ডক্টর ইউনুস সকলের শ্রদ্ধাভাজন কিন্তু উনাদেরকে দেখতে হবে এই পরাজিত ভয়ংকর স্বৈরশক্তির দোসরা যদি মাথা ছাড়া দেয় তাহলে তো আবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হবে। রাস্তা দিয়ে কোন সুন্দরী নারী হেঁটে গেলে যাকে পছন্দ হয় তাকে তুলে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, 'শিশু-কিশোর ও ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ত নিতে যে মহিলাটি দ্বিধা করেনি, শ্রমজীবী-রিকশা চালকদের হত্যা করতে যার হৃদয় কাঁপে না তারা হয় দেশের প্রধানমন্ত্রী। যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তারা বিদেশি কোন শত্রু নয়। তারা দেশেরই মানুষ ইমন, বাবু, নুরু ব্যাপারীরা এই দেশের মানুষ। আপনি ১৬ বছর অবৈধভাবে, অন্যায় ভাবে, গায়ের জোরে অবৈধ ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন। আপনার নির্বাচন যে পাতানো ছিল, একতরফা ছিল সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আপনি ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন। এটা সারা বিশ্ববাসী জানে।
রিজভী বলেন, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোকেরা যে লুটপাট করেছে তিনি প্রকারন্তরে তাদেরকে সমর্থন দিয়েছে। আমরা বলেছিলাম না মেগা প্রজেক্ট, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার করে তারা অনেক টাকা পাচার করেছে সেটা তো সত্য হয়েছে। তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক, তিনি নিজে মুখে বলেছেন। তার লুট-পাটের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছে তাদেরকে হয় গুম করা হয়েছে না হয় আয়না ঘরে রাখা হয়েছে। আয়না ঘরটা কি তার হদিস কেউ জানে না কিন্তু তার অস্তিত্ব আছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনা তার বিরোধীদেরকে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া একটি কালো জায়গায় অন্ধকার ঘর যেখানে বন্দী করে রাখা হয়। এটা আমার কথা নয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার একটি রিপোর্ট থেকে বলা হয়েছিল।
তিনি বলেন, 'সম্প্রতি দুনিয়া কাঁপানো গণঅভ্যুত্থানে যারা অকাতরে জীবন দিয়েছে সেই ছাত্র-জনতা এবং শ্রমজীবী মানুষের উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের মধ্যে এই এলাকায় তিনজন যারা শহীদ হয়েছেন তার মধ্যে ইমন, নুরু বেপারী এবং বাবু তাদের পরিবার এখানে উপস্থিত রয়েছেন। আমরা এই তিন শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক সাংবাদিক আতকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মিথুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, ছাত্রদল নেতা তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।