সুনামগঞ্জে আতঙ্কে চালকেরা, এক মাসে চুরি ২৫টি অটোরিকশা

গত ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে কয়েকটি চক্র। আশঙ্কাজনক হারে চুরির বাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গাড়ির মালিক ও শ্রমিক।

সুনামগঞ্জে আতঙ্কে চালকেরা, এক মাসে চুরি ২৫টি অটোরিকশা

প্রথম নিউজ, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ পৌর শহরে বেড়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরির উপদ্রব। গত ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে কয়েকটি চক্র। আশঙ্কাজনক হারে চুরির বাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গাড়ির মালিক ও শ্রমিক। চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে শহরের হাজীপাড়া, মাহমুদপুর, বড়পাড়া, তেঘরিয়া, কোর্ট পয়েন্ট এলাকায়। গাড়ি চালিয়ে সারাদিন পরিশ্রম করে রাতে ভয়ে-আতঙ্কে ঘুমাতে পারছেন না চালকরা। গাড়ি রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে। শিকল দিয়ে তালা মেরেও চুরি থেকে বাঁচানো যাচ্ছে না উপার্জনের একমাত্র উৎস অটোরিকশাটি।

বড়পাড়া এলাকার অটোরিকশা চালক মিজান মিয়া বলেন, গাড়ি ইদানিং বেশি চুরি হওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে আছি। অন্যের বাড়িতে রাতে গাড়ি রাখতে হচ্ছে। এতদিন নিজ বাসার সামনেই গাড়ি রাখতাম কোনো সমস্যা হয়নি। এখন সারাদিন পরিশ্রম করে এসে রাতে ঘুম হয় না গাড়ির চিন্তায়। গরিব মানুষ, আমার গাড়িটা চুরি হয়ে গেলে আরেকটি গাড়ি কেনার ক্ষমতা নেই।  

পৌর শহরের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন জানান, তিনি প্রত্যেকদিন বাসার সামনে একটি ব্যক্তিগত কালভার্টের ওপর অটোরিকশাটি পার্কিং করে রাখতেন। তিনি ভাড়ায় অন্যজনের গাড়ি চালান। গত ১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টায় গ্যাস ভরে এনে অটোরিকশাটি রাখেন ওই কালভার্টের ওপর। ভোর ৬টায় দেখেন তালা ভেঙে শিকল ৪ টুকরা করে তার গাড়িটি চুরি করে নিয়ে গেছে। ওই গাড়িটি ছিলো তার পরিবারের আয়ের একমাত্র মাধ্যম। তিনি ৫ দিন ধরে হন্নে হয়ে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় তার চুরি হওয়া গাড়িটি খুঁজে বেড়াচ্ছেন। 

ওই অটোরিকশাটির মালিক মোস্তাদির আলী রাহাত বলেন, আমার দুইটা গাড়ি। তার মধ্যে একটি গত ১৬ তারিখ  রাতে চুরি করে নিয়ে গেছে চোরের দল। শুধু আমার না,  এই কয়েকদিনের ভেতর জানা মতে অন্তত ৭-৮টি গাড়ি চুরি হয়েছে। আমি থানায় ওই দিনই অভিযোগ করেছি। খুঁজে পেতে পুলিশও সহযোগিতা করছে। 

মাহমুদপুর পয়েন্টের সালাহউদ্দিন মাহবুবের গ্যারেজ থেকে দুটি ইজি বাইক চুরি হয়ে গেছে গত ১৭ ডিসেম্বর। গ্যারেজের ভেতরে সিসি ক্যামেরা থাকায় অভিনব কায়দায় চুরি করা হয় ইজি বাইক দুটি। চুরির আগে ধোঁয়া দিয়ে পুরো অন্ধকার করে ফেলে গাড়ির ভেতর। পরে দরজার তালা ভেঙে তাদের কাজ সম্পন্ন করে। যার কারণে সিসি ক্যামেরায় কোনো কিছুই ধরা পড়েনি।  সালাহউদ্দিন মাহবুব বললেন, চুরি হওয়ার পরে থানায় আমার ড্রাইভার জিডি করতে গেলে জিডি গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের লিখিত আবেদন রেখে কোনো কপি বা জিডি নাম্বার দেয়া হয়নি। জিডি হয়েছে কি না কিছুই জানি না। থানায় সাহয্য চাইতে গেলেও ঝামেলা। 

শুধু এই দুই ঘটনা নয়, গত একমাসে অন্তত ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি চুরি হয়েছে বলে জানায় জেলা সিএনজি অটোরিকশা, মিশুক, ট্যাক্সিকার শ্রমিক ইউনিয়ন। পুলিশের ঝামেলার ভয়ে অনেকেই থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান না। নিজ উদ্যোগেই খোঁজার চেষ্টা করে চলেছেন।  জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মিশুক, ট্যাক্সিকার শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক বাবু উত্তম ধর বলেন, গত কয়েকদিনে আমাদের অন্তত ২০-২৫টি গাড়ি চুরি হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে মাত্র দুটি। উদ্ধারের পর আমরা চুরির জায়গা চিহ্নিত করেছি। ওয়েজখালি, জলিলপুর, ইকবালনগর এই জায়গায় ভালোভাবে পুলিশ অভিযান চালালেই চুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। 

একই সংগঠনের সভাপতি ছুরত আলী বললেন, গাড়ি চুরির ঘটনায় সব শ্রমিক আতঙ্কিত হয়ে আছেন। চুরি যাওয়া গাড়ি উদ্ধারে পুলিশ প্রশাসনের বিশেষ ভূমিকা পালন এবং গাড়ি চুরি রোধে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে টহল বাড়ানোর দাবি জানাই। ভুক্তভোগীদের মতে গাড়ি চুরির ঘটনায় চালকদের মধ্যে আতঙ্ক ও থানায় অভিযোগ থাকলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom