সেতু নির্মাণের ৬ বছরেও হয়নি সংযোগ সড়ক
প্রথম নিউজ, কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শিমুলকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের যোগাযোগের সুবিধার জন্য ছয় বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি সেতু। এত বছর পেরিয়ে গেলেও তৈরি হয়নি কোনো সংযোগ সড়ক। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে চার গ্রামের আট হাজার বাসিন্দা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গোছামারা ও রামশংকরপুর এলাকার দায়রার খালের ওপর নির্মিত ৬৯ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি। সংযোগ সড়ক না থাকায় গ্রামবাসীর কোনো উপকারেই আসছে না এ সেতুটি। বর্ষাকালে পানির নিচে তলিয়ে যায় সেতুটির দুই পাশের বেশ কিছু অংশ। শুকনো মৌসুমে সেতুতে উঠতে লাগে মই, এতে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু-কালভার্টের কর্মসূচির আওতায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার গোছামারা ও রামশংকরপুর এলাকার দায়রার খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার ১০৬ টাকা। কিন্তু কয়েক বছরের বর্ষা মৌসুমে সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটি সরে গিয়ে মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যার ফলে নির্মিত সেতুটি ব্যবহার হতে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামবাসী। শুকনা মৌসুমে ধানক্ষেতের আইল দিয়ে চলাচল করতে হয়। বর্ষাকালে এ সুযোগও থাকে না, এতে মালামাল পরিবহনে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। এই পাড়ের মানুষকে ওপারে যেতে হলে ঘুরতে হচ্ছে ছয় কিলোমিটার রাস্তা। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রামবাসী।
গোছামারা গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ মিয়া বলেন, সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি নষ্ট হচ্ছে। এতে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। সেতুটি প্রায় ছয় বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ সংযোগ সড়কের অভাবে কোনো সুফল পাচ্ছি না। কৃষক আবু তালেব মিয়া বলেন, ছয় বছর আগে সেতু নির্মাণ হলেও কোনো কাজে আসেনি । আগেই ভালো ছিলাম নৌকায় পার হতাম। এখন সেতু হয়েও বর্ষার সময়ে নৌকায় পার হতে হয়। শুধু নামেই সেতু আছে কাজে না। এই ধরনের সেতু আমাদের দরকার নেই।
রামশংকরপুর এলাকার শিক্ষার্থী জিনিয়া বলে, সংযোগ সড়ক না থাকায় ধানক্ষেত দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এতে বৃষ্টির দিনে বেশ দুর্ভোগে পড়তে হয়। অনেক সময় ক্ষেতের আইল দিয়ে চলতে গিয়ে পানিতে পড়ে পোশাক নষ্ট হয়। দ্রুত সংযোগ সড়ক তৈরির দাবি জানাই। শিমুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রিপন জানান, বর্তমান সরকারের আমলেই দুই গ্রামের খাল পারাপারের জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের পর মাটির রাস্তা ছিল তবে বর্তমানে রাস্তার দুই পাশের মাটি সরে যাওয়ায় সেতুটি গ্রামবাসী ব্যবহার করতে পারছে না। যার কারণে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুটি যেহেতু একপাশে ইউনিয়নের অন্যপাশে পৌরসভার আওতায় পড়েছে আমি পৌর মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনুর সঙ্গে কথা বলব। তবে আমার ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তা নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ পেলে সেতুর এক পাশে রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
ভৈরব পৌর মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনু বলেন, ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংযোগ স্থলে সেতুটি নির্মাণ হয়েছে অনেকদিন আগেই। তবে সেতুটির এক পাশের সীমানা যেহেতু পৌরসভার ভেতরে পড়েছে তাই পৌরসভার প্রকৌশলী সরেজমিনে সেতুটি দেখে পরবর্তীতে রাস্তা নির্মাণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ভৈরব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকত বলেন, ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার ১০৬ টাকা ব্যয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ওই স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুর দুই পাশের রাস্তায় অবশ্যই মাটি ভরাট করে দেওয়া হবে। সেতুটি সচল করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ জানান, সেতু আছে সড়ক নেই এই বিষয়টি জানা ছিল না। সরেজমিনে গিয়ে দেখে কীভাবে সেতুটি সচল করা যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে সেতুটির দুপাশে মাটি ভরাট করে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।