শৈত্যপ্রবাহ ছাড়াই শীতে কাঁপছে দেশ
প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশে কাগজে-কলমে শৈত্যপ্রবাহ ছিল না গতকাল বৃহস্পতিবার। তা সত্ত্বেও রাজধানীসহ দেশের অনেক অঞ্চলেই অনুভূত হয়েছে হাড়-কাঁপানো শীত। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কাগজে-কলমে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শৈত্যপ্রবাহের মতোই বা তার চেয়ে বেশি শীত অনুভূত হয়েছে। মূলত ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো না আসায় এবং উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসের প্রভাবে দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক কমে যাওয়ায় শীতের এমন দাপট চলছে।
আজ শুক্রবারও এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদরা। আজ দুপুরের পর কিছুক্ষণের জন্য সূর্যের দেখা মিলতে পারে। তাতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও সামগ্রিকভাবে শীতের অনুভূতি খুব একটা কমবে না। তবে আগামীকাল শনিবার থেকে তাপমাত্রা বেড়ে শীতের অনুভূতি কিছুটা কমতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গতকাল রাতে বলেন, “শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শৈত্যপ্রবাহের মতোই শীত অনুভূত হচ্ছে। এটাকে বলা হয় ‘কোল্ড ডে কন্ডিশন’। অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না নামলেও তীব্র শীতের অনুভূতি হচ্ছে। মধ্যরাত থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা, উত্তরের বাতাস, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকা এবং ঊর্ধ্বাকাশের জেট স্ট্রিমের দক্ষিণমুখী বিস্তার ও নিম্নমুখী বিচরণ এই ঠাণ্ডার অনুভূতি হঠাৎ বাড়িয়ে দিয়েছে।
”
আবুল কালাম বলেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ ডিগ্রির নিচে নেমে এলে হাড়-কাঁপানো শীত অনুভূত হয়। এ রকম পরিস্থিতি শুক্রবারও থাকতে পারে। শনিবার থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। ৯ জানুয়ারি থেকে আবার তাপমাত্রা কমে তীব্র শীত শুরু হতে পারে। এ সময় দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহও শুরু হতে পারে।
গতকাল সারা দিনই রাজধানী ঢাকা ছিল কুয়াশার চাদরে ঢাকা। ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ছিল মাত্র ২.২ ডিগ্রি। সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৮ ডিগ্রি। বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মূলত এ কারণেই ঢাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেক আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘শীতকালে ঢাকার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামাও স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য বেশি থাকায় এতটা শীত অনুভুত হয় না।’ তিনি জানান, দেশের অনেক অঞ্চলেই গতকাল অনুভূত তাপমাত্রা ছিল অনেকটা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের মতো। কিন্তু প্রকৃত তাপমাত্রার হিসাবে দেশে মৃদু শৈত্যপ্রবাহও নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশের কিছু অঞ্চলজুড়ে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি বা তার নিচে নামলে এবং তা কিছুদিন অব্যাহত থাকলে তখন তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। গতকাল শুধু চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ছিল। এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৮ ডিগ্রি, যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও। এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি। বিক্ষিপ্তভাবে দু-একটি অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয় না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল ঢাকা বিভাগের বেশির ভাগ এলাকায়ই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ ডিগ্রির নিচে নেমে এসেছিল। ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জের নিকলী, মানিকগঞ্জের আরিচা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ ডিগ্রির নিচে ছিল। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ; রংপুর বিভাগের রংপুর; ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ; চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা ও চাঁদপুর এবং বরিশাল বিভাগের বরিশাল ও ভোলায় তাপমাত্রার এই পার্থক্য ৫ ডিগ্রির নিচে ছিল। ফলে এসব অঞ্চলে শীতের তীব্রতাও বেশি ছিল।
দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলেই গতকাল ঘন কুয়াশার দাপট ছিল। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম জানান, গতকাল দেশের দক্ষিণের বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে কুয়াশার ঘনত্ব তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ছিল। নদী অববাহিকায় ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা ১৫০ মিটারের নিচে নেমে এসেছে গতকাল।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, দেশের উত্তরাংশ, বিশেষ করে রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটে আগামী ৭ বা ৮ জানুয়ারি হালকা বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির পর ৯ ডিসেম্বর থেকে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের তীব্রতা আবার অনেকটাই বাড়তে পারে।
চুয়াডাঙ্গা : গতকাল সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এর আগে বুধবার রাত থেকেই তীব্র শীতের প্রকোপ ছিল।
বগুড়া : বগুড়ায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। দিনভর সূর্যের সঙ্গে মেঘের লুকোচুরি হয়েছে। দিনের বেলা মেঘ ঢেকে রাখায় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। গতকাল জেলায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম : শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও কমেনি শীতের তীব্রতা। কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে শীতকষ্টে পড়েছে মানুষজন। দুই দিন দেখা মেলেনি সূর্যের।
বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) : উত্তরের জেলা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় শীতের প্রকোপে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে দুপুর ১২টায়ও সূর্যের দেখা মেলেনি।
রংপুর : রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা। তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। হিমেল হাওয়া ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।