লিবিয়ায় বিক্রি হওয়া দুই বাংলাদেশির ভয়াবহ বেঁচে ফেরার গল্প

লিবিয়ায় বিক্রি হওয়া দুই বাংলাদেশির ভয়াবহ বেঁচে ফেরার গল্প

প্রথম নিউজ, অনলাইন:  ঝিনাইদহের মতিউর রহমান সাগর ও কুষ্টিয়ার তানজির শেখ। ৯ মাস ধরে লিবিয়ায় বন্দি ছিলেন তারা। লিবিয়ায় দালালরা তাদের অসহ্য নির্যাতন করত। নির্যাতনের এক পর্যায়ে দালালরা ধরেই নিয়েছিল তারা মারা যাবেন।
তাই তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। এই ভয়াবহ গল্প শেয়ার করেছেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক আল আমিন নয়ন। আজ বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুকে ভুক্তভোগী দুজনের ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। 

ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, আজ সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের গল্প দেখার পর খোঁজ নিতে শুরু করি।
অনেক চেষ্টার পর পরিবারের সাথে যোগাযোগ হয়। জানা গেল ভয়ংকর এক বাস্তবতা—ভালো চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ।

গ্রামের দালালরা প্রতিজনের কাছ থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে ২০২৩ সালে তাদের লিবিয়ায় পাঠায়, প্রতিশ্রুতি ছিল কম্পানির ভালো কাজের। কিন্তু কাজের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
এরপর দালালরা তাদের ইতালি পাঠানোর লোভ দেখান। বাধ্য হয়ে সেই ফাঁদে পা দেন তারা। কিন্তু বাস্তবতা ছিল আরো ভয়ংকর।

দালালরা তাদের মাফিয়াদের হাতে বিক্রি করে দেন। অন্ধকার এক ঘরে ৮০ বাংলাদেশিকে বন্দি করে রাখা হয়।
শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। রড, লাঠি, বৈদ্যুতিক শকসহ প্রতিদিন চলত অসহ্য অত্যাচার। চোখের সামনে মৃত্যু দেখেছেন তারা, লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন অনেক বাংলাদেশির।

একসময় মাফিয়ারা নিশ্চিত হয় যে সাগর ও তানজিরের আর বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা নেই। মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা এই দুই তরুণকে ফেলে চলে যায় নির্যাতনকারীরা। ভাগ্য সহায় ছিল, তাই তারা বেঁচে গেছেন।

আজ দুপুরে তাদের সাথে কথা বলেছি। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বর্ণনা করেছেন সেই দুঃসহ দিনগুলোর কথা। ছবিগুলো ভয়ানক, চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার মতো। তাদের ক্ষতবিক্ষত শরীরই বলে দেয়, কেমন নরক পেরিয়ে এসেছেন তারা। এই প্রতারণার জাল গুটিয়ে দিতে হবে। দালালদের প্রতিরোধ করতে হবে। নয়তো আরো কত সাগর, কত তানজির এভাবে হারিয়ে যাবে, আমরা জানতেই পারব না!