রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ৩
গতকাল ভোরে উখিয়ার ৪ নম্বর (এক্সটেনশন) রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এফ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রথম নিউজ, কক্সবাজার: কক্সবাজারের উখিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে ৩ রোহিঙ্গাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও সাতজন। গতকাল ভোরে উখিয়ার ৪ নম্বর (এক্সটেনশন) রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এফ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। নিহত ও আহতরা আরএসও সদস্য। নিহতরা হলেন- ৪ নম্বর ক্যাম্পের জাফর আহমেদের ছেলে মো. ইলিয়াছ, মৃত আবদুর রকিমের ছেলে মো. ইছহাক ও ৩ নম্বর ক্যাম্পের মো. ইসমাইলের ছেলে ফিরোজ খান।
আহতদের মধ্যে তিন জন হলেন- ৪ নম্বর ক্যাম্পের মো. হাছানের ছেলে আব্দুল হক, নজির আহমদের ছেলে আব্দুস শুক্কুর ও মৃত ওমর মিয়ার ছেলে আব্দুল মোনাফ। তারা কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এনজিও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আহত বাকি ৪ জনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. ইকবাল বলেন, ভোরে ৪০-৪৫ জন আরসা সন্ত্রাসী পাহাড় থেকে কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে ৪ নম্বর ক্যাম্পে আসে। ঘটনাস্থলে এসে ক্যাম্পে পাহাড়ারত রোহিঙ্গা ইলিয়াছকে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাতে, পায়ে ও তলপেটে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে।
পরে তারা গুলি চালিয়ে এবং কুপিয়ে আরও দুই রোহিঙ্গাকে হত্যা করে। এ সময় গুরুতর আহত হন ৭ জন। এ সময় ঘটনাস্থলে গেলে এপিবিএন সদস্যদের ওপরও গুলিবর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা। সরকারি সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষার্থে পুলিশ সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে পাল্টা ১৬ রাউন্ড গুলি চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন করে সংঘটিত এবং নাশকতার চেষ্টা করছে আরসা। মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সঙ্গবদ্ধ হয়ে হামলা চালায় আরসা সন্ত্রাসীরা। তারা গুলি এবং কুপিয়ে ৩ রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। হতাহতরা আরএসও সদস্য। উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন বলেন, নিহত ৩ রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার শীর্ষ কমান্ডারসহ আটক ৫
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে আরসার শীর্ষ কমান্ডারসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি এলজি, ১টি ওয়ানশুটার গান, ১০ রাউন্ড কার্তুজ, ২ কেজি বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া ৩টি মোবাইল ও ২ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- উখিয়ার কুতুপালং ৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি ব্লকের বাসিন্দা মৃত আবুল বাশার এর ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম প্রকাশ মৌলভী অলি আকিজ (৫০), উখিয়ার কুতুপালং ৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি ব্লকের বাসিন্দা মৌলভী আনোয়ার এর ছেলে মো. ফয়সাল প্রকাশ মাস্টার ফয়সেল (২৮)।
উখিয়ার ক্যাম্প-২০ এক্সটেনশন এর বি-৫ ব্লকের বাসিন্দা রহমত উল্লাহর ছেলে হাফেজ ফয়জুর রহমান (২৪), উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-৪৪ ব্লকের বাসিন্দা মৃত করিম উল্লাহর ছেলে মো. সালাম প্রকাশ মাস্টার সালাম (২০) ও উখিয়ার ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আনু মিয়ার ছেলে মো. জুবায়ের (২৪)। গ্রেপ্তারকৃতদের দুপুরে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। রোববার রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪-এ বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান র্যাব ১৫-এর কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মিডিয়া মো. আবু সালাম চৌধুরী। র্যাবের দাবি, আরসার শীর্ষ নেতা মৌলভী আকিজ রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, অপহরণসহ ২১টির বেশি মামলা রয়েছে।
তিনি জানান, আরসার শীর্ষ নেতা মৌলভী আকিজসহ সন্ত্রাসীরা ক্যাম্প-৪ -এ অবস্থান করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার গভীর রাতে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে আরসার শীর্ষ নেতা মৌলভী আকিজসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের র্যাব-১৫-এর কার্যালয়ে প্রেস বিফ্রিংয়ের এ তথ্য জানানো হয়।
এ ছাড়া আরসা প্রধান আতাউল্লাহর দেহরক্ষী আকিজসহ সর্বমোট ১১২ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এসব সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ৫১.৭১ কেজি বিস্ফোরক, ৫টি গ্রেনেড, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৪টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৬৮ রাউন্ড গুলি-কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৪টি আইডি ও ৪৮টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলছে।