রাষ্ট্রের কোথাও একটা গলদ আছে: মিজানুর রহমান
তিনি বলেন, দেশের একজন নাগরিকও কি জোর গলায় বলতে পারবেন সাম্য এবং সম্মানের সঙ্গে বেঁচে আছেন?
প্রথম নিউজ, ঢাকা: মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, পঞ্চাশ বছরে একটি অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মনিরপেক্ষ দেশ চেয়েছিলাম, কিন্তু তা থেকে এখনও আমরা অনেক দূরে আছি। দেশের একজন নাগরিকও কি জোর গলায় বলতে পারবেন সাম্য এবং সম্মানের সঙ্গে বেঁচে আছেন? যদি না পারেন তবে বুঝতে হবে, রাষ্ট্রের কোথাও একটা গলদ আছে।
আজ শনিবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘সংগঠন করার অধিকার সব নাগরিকের আছে। কিন্তু হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের মতো সংগঠন করতে হলে সেটা আমাদের নয়, রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার। আমরা কোন এবং কেমন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করি তা নতুন প্রজন্মকে বুঝাতে হবে। তাদেরকে সংগ্রামের জন্য তৈরি করতে হবে।’
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পরও জিয়া-এরশাদের প্রেতাত্মা থেকে দেশ ও জাতি এখনও মুক্ত হতে পারেনি উল্লেখ করে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘বিগত ১৩ বছরে দেশের উন্নতি হয়েছে এটি ঠিক, তবে জনগণের মানস গঠন অনেক দূর পিছিয়ে গেছে। অস্বীকারের উপায় নেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ আজ আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাঙালিত্বের পরিচয় নয়, ধর্মীয় পরিচয় আজ ব্যক্তি, সমাজ, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রজীবনে মূখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংকটটি এখানেই। এ সংকট থেকে উত্তরণে ৭২-র সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইকে অধিকতর শানিত করতে হবে। নতুবা বিপর্যয় অনিবার্য। মনে রাখতে হবে এ বিপর্যয়ের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি।’
রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ ১৯৮৮ সালে বাঙালী জাতিসত্তাকে নিশ্চিহ্নের জন্য সংখ্যাগুরু জনগণের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দিয়েছিলেন। একপর্যায়ে তৎকালীন পার্লামেন্টে বিল উত্থাপনের প্রতিবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনায় রাষ্ট্র এবং রাজনীতিকে পরিচালনার আকাঙ্ক্ষায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গঠিত হয়। এ ব্যাপারে উল্লেখ করতে চাই এ সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুক্তিযুদ্ধ করিনি। রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি এ সংগঠন গঠনে আমাদের বাধ্য করেছে। এটি আপামর জাতির জন্য লজ্জার।’
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘তাজউদ্দীনসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার উপেক্ষার স্বীকার হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুও উপেক্ষা শিকার হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় শরনার্থীদের কষ্টের কথা পাঠ্যপুস্তকে আসে না, চুকনগর গণহত্যার কথা পাঠ্যপুস্তকে আসে না। পাঠ্যপুস্তকে হেফাজত দখল নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকাণ্ড মুক্তিযুদ্ধের হত্যাকাণ্ড। পাকিস্তানিরা মুক্তিযুদ্ধে পারেনি, কিন্তু পরে পাকিস্তানপন্থীরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রকে মুক্তিযুদ্ধের মাহাত্ম্যে ফেরত চাই।’
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধঃ প্রসঙ্গ চুকনগর হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিওসহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews