রুম পরিবর্তনে দেরি করায় ঢাবি শিক্ষার্থীকে রড দিয়ে পেটাল ছাত্রলীগ

রুম পরিবর্তনে দেরি করায় ঢাবি শিক্ষার্থীকে রড দিয়ে পেটাল ছাত্রলীগ
রুম পরিবর্তনে দেরি করায় ঢাবি শিক্ষার্থীকে রড দিয়ে পেটাল ছাত্রলীগ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থীকে রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। গতকাল (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে আটটার দিকে হলের ১১০০১ নাম্বার রুমে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীর নাম মোনাফ প্রান্ত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সদ্য ঘোষিত  ছাত্রলীগের হল কমিটিতে তিনি সদস্য পদ পেয়েছেন। প্রান্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুসের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম রাসেল মাহমুদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, হল ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার পর গ্রুপের শীর্ষ নেতার নির্দেশে গতকাল এলাকাভিত্তিক গ্রুপ আলাদা হওয়ার কথা হচ্ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রুমে নতুন করে শিফট (কক্ষ পরিবর্তন) করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যে রুমে থাকতেন সেই রুমে শিফট করা হয় অভিযুক্ত প্রান্তকে। রাত সাড়ে আটটায় রুমে সবাই না থাকার কারণে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কিছুটা দেরিতে রুম থেকে বের হতে চেয়েছিল যাতে রুমের সবাই আসলে একসাথে বের হতে পারে। 

ওই রুমের সবাইকে আলাদা আলাদা রুমে শিফট করা হয়। ফলে সবাই নিজেদের নতুন রুমে চলে যায়। কিন্তু তিনজন শিক্ষার্থী রুম ছাড়তে একটু দেরি করে। তাদের মাঝে ভুক্তভোগী রাসেল একজন।  মারধরের ঘটনা সামনে থেকে দেখেছেন এমন একজন জানান, প্রান্ত রুমে এসে রাসেলের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে হাতের কাছে রড পেয়ে তা দিয়ে রাসেলকে মারধর করে। মুখে থাপ্পড় দেয়। মারধরের কারণে রাসেল তার কোমরে আঘাত পায়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয় রাসেল।   ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ বলেন, আমাদের রুম পরিবর্তন চলছে। তখন আমি রিডিং রুমে ছিলাম। রুমে এসে দেখি প্রান্ত (অভিযুক্ত) আমার রুমে শুয়ে আছে। আমি রুমে ঢুকার সাথে সাথে সে বলতেছে, এ এখনো রুম থেকে সব জিনিস নিয়ে যাস নাই কেন? তাড়াতাড়ি নিয়ে যা।

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমি তখন তাকে একটু দেরিতে বের হওয়ার কথা বলতেই সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপর রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট শুরু করে। আমি হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করি। পরে এসে এলোপাতাড়িভাবে আমার কোমর, হাত ও পিছনে রড দিয়ে পেটায়। তখন বন্ধুরা এসে আমাকে সেভ করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসে।
এ বিষয়ে হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, প্রান্ত খুবই উগ্র মেজাজের ছেলে। প্রায়ই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বন্ধুদের সাথে ঝগড়া করে। জুনিয়রদেরও মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। গভীর রাতে জুনিয়রদের রুমে গিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে গালাগাল ও হুমকি অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

তবে মানবজমিন-এর সাথে কথোপকথনকালে মারধরের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী মোনাফ প্রান্ত। তিনি বলেন, বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এরকম কোন কিছুই হয়নি। রাসেল আমার বন্ধু হয়। রুম নিয়ে জাস্ট একটু তর্কাতর্কি হয়েছে। পরে সিনিয়র ভাইরা এসে সমাধান করে দিছে।মারধর করা না হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল কেন-এমন প্রশ্ন করা হলে এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি অভিযুক্ত প্রান্ত।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক বক্তব্য জানতে হল প্রভোস্ট প্রফেসর আব্দুল বাছিরকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। তিনিও কোন প্রকার সাড়া দেননি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom