রাজস্ব আদায় না বাড়লে ঋণের ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডার মন্ট্রিলের কনর্কডিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সৈয়দ এম. আহসান।
প্রথম নিউজ, ডেস্ক: রাজস্ব আদায় বাড়ানো না গেলে ঋণ (দেশি ও বিদেশি) পরিশোধে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ। কেননা এখনো বার্ষিক রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে ঋণের সুদের পেছনে। এটি যদি বৃদ্ধি পায় এবং রাজস্ব এক জায়গার স্থির থাকে তাহলে পরিস্থিতি সুখকর হবে না। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডার মন্ট্রিলের কনর্কডিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সৈয়দ এম. আহসান। তার প্রবন্ধের শিরোনাম হচ্ছে- ‘আর্থিক অবস্থান : বাংলাদেশের উন্নয়ন কোন দিকে যাচ্ছে।’ এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
সেমিনারে সৈয়দ এম. আহসান বলেন, বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতি এখনো স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে। কিন্তু আমাদের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কম। মোট দেশজ উৎপাদনের তুলনায় কর জিডিপি রেশিও অনেক কম। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই জায়গায় কাজ করছি। তবে সেখানে খুব বেশি উন্নতি হচ্ছে না। নানা নীতিমালা করা সত্ত্বেও গত ৩ বছর ধরে কর জিডিপি রেশিও থমকে আছে। কোনো ভাবেই কর আহরণ ৯ থেকে ১০ শতাংশের বেশি হচ্ছে না জিডিপির তুলনায়। তিনি বলেন, বর্তমানে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো তাদের ঋণের শর্ত কঠিন করছে। দিন দিন এই শর্ত তারা আরও কঠিন করবে। পাশাপাশি আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করার পর অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হব। সে জায়গায় এখনই সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এম. আহসান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের যে দেশীয় ও বৈদেশিক ঋণ রয়েছে এই ঋণের বিপরীতে রাজস্ব আয়ের ১৮ শতাংশ যায় সুদ দিতে। তবে এখনো পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। আমাদের জিডিপি বাড়ছে। কিন্তু যদি রাজস্ব আয় না বেড়ে ঋণ বেড়ে যায় তাহলে পরিস্থিতি ভালো হবে না। এখনো ঋণের সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা সামাজিক নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা যাচ্ছে না। বিষয়টি তাই গভীরভাবে ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র ঋণের তুলনায় অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদের হার অনেক বেশি। এখানে সংস্কার করে সামঞ্জস্য আনতে হবে। ২০২৩ সালে দেখা যাচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। ফলে সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। ঋণ নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুশাসন এবং বাস্তবায়নের মান বজায় রাখা দরকার। বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়েছে। মোট অর্থনীতির তুলনায় এটা স্বাস্থ্যকর নয়। এ দেশে ব্যাংককে ফেল করতে দেওয়া হয় না। এটা ঠিক নয়। বরং ব্যাংকের সংখ্যা কমানো উচিত। আমেরিকায় এবং সুইস ব্যাংক ধসে গেছে। সেগুলো আবার অন্য ব্যাংক কিনে নিচ্ছে। এটা ঠিক আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে এম. আহসান বলেন, শ্রীলংকা ঋণ নিয়েছে তাদের আয়ের শতভাগ। এক্ষেত্রে রাজস্বের সঙ্গে ঋণের সমন্বয় ছিল না। ফলে তাদের অবস্থা সবারই জানা। তবে ইতালি ঋণ নিয়েছে শতভাগেরও বেশি। জার্মানির ঋণ ২০০ ভাগের উপরে। তবে তাদের ক্যাপাসিটি আছে। এই ক্যাপাসিটি নির্ভর করে রাজস্ব আদায়ের ওপর। কালো অর্থনীতি কোথায় আছে খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে কালো অর্থনীতিকে সাদা অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বল্প মেয়াদে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক হতে হবে। তিনি তার প্রবন্ধে তিনটি বিষয়ে পরামর্শ দেন। এগুলো হলো- জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। ঋণের পেছনে খরচ কমাতে হবে এবং জিডিপির তুলনামূলক কর আদায় বাড়াতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. বিনায়ক সেন বলেন, এখন পর্যন্ত ঋণ গ্রহণের পরিস্থিতি অনুকূলে আছে আমাদের। সে বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী। তবে আমাদের কিছু কিছু খাতে দুর্বলতা আছে। যেগুলো নিয়ে আরও ভালো কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের যে ক্ষতি করেছে সেগুলো আমরা ভালোভাবেই ম্যানেজ করেছি। সামনের দিকে আশা করি এই পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে। কিন্তু যদি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয় তখন কি পরিস্থিতি তৈরি হবে। সেটি নিয়ে এখন থেকেই গভীরভাবে ভাবা দরকার।