যেসব কারণে কমছে রাইড শেয়ারিংয়ে অ্যাপের ব্যবহার

অ্যাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাইড শেয়ারিং যুগে প্রবেশ করলেও এখন সেই অ্যাপ থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বাইক রাইড শেয়ার করার চালকরা। অ্যাপ বদলে কন্ট্রাক্টে রাইড শেয়ার দেওয়াটা যেন নিয়মে পরিণত করেছেন চালকরা। রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর কেটে নেওয়া কমিশনকে অতিরিক্ত মনে করায় অ্যাপ ব্যবহারে এই অনীহা বলে জানান চালকরা।

যেসব কারণে কমছে রাইড শেয়ারিংয়ে অ্যাপের ব্যবহার

প্রথম নিউজ, ঢাকা: অ্যাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাইড শেয়ারিং যুগে প্রবেশ করলেও এখন সেই অ্যাপ থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বাইক রাইড শেয়ার করার চালকরা। অ্যাপ বদলে কন্ট্রাক্টে রাইড শেয়ার দেওয়াটা যেন নিয়মে পরিণত করেছেন চালকরা। রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর কেটে নেওয়া কমিশনকে অতিরিক্ত মনে করায় অ্যাপ ব্যবহারে এই অনীহা বলে জানান চালকরা। অন্যদিকে অ্যাপে চালক খুঁজে না পাওয়ায় যাত্রীরাও অ্যাপ ব্যবহারে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে যাত্রী এবং রাইড শেয়ার করা বাইক চালকদের উভয়ের কথা পর্যালোচনা করে দেখা যায় চালকদের সদিচ্ছার অভাব ও যাত্রীদের অসচেতনতাই অ্যাপ ব্যবহারের প্রধান প্রতিবন্ধকতা।

বর্তমানে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও পিক আওয়ারে (সকাল ৮টা থেকে ১১টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা) ১০ শতাংশ এবং অফ-পিক আওয়ারে ১৫ শতাংশ কমিশন রাখে। উবার ২৫ শতাংশ হারে কমিশন কাটে। অ্যাপ ব্যবহারে অনীহার কারণ জানতে চাইলে আগারগাঁও যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা বাইক চালক তারিক বলেন, বাইকে ৩০০ টাকার তেলে হাজার টাকার মতো আয় করা যায়। তার মধ্যে দুপুরের লাঞ্চসহ দৈনিক নিজের খরচই আছে ২০০ টাকা। বাকি থাকে ৫০০ টাকা। এইখান থেকে যদি ১৫ থেকে ২৫ পার্সেন্ট চলে যায় তাহলে আর থাকে কত? বাইকের খরচ আছে, নিজের পরিশ্রম আছে।

অ্যাপ ছাড়া রাইড শেয়ার করা বেআইনি বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, যদি কোম্পানিগুলা কমিশনের হার ১০ শতাংশের মধ্যে রাখে এবং প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ২৫ টাকা হলে আমার মনে হয় না অ্যাপ ব্যবহারে কারও আপত্তি থাকবে। অ্যাপ ব্যবহারের বিভিন্ন অসুবিধার কথা উল্লেখ করে মিরপুর ১০ এ অপেক্ষায় থাকা আরেক বাইক চালক মাহাবুব বলেন, অ্যাপে মাঝে মাঝে দেখা যায় যাত্রী অনেক দূরে অবস্থান করছেন। সেখানে আমার যেতে হয় বিনা পয়সায়। আর কন্ট্রাক্টে লোক নিলে জায়গায় দাঁড়িয়েই নেওয়া যায়। এছাড়া তেলের দাম বাড়লেও কোম্পানিগুলো যাত্রীদের ভাড়া বাড়ায় না। তাই অ্যাপে রাইড দিয়ে তেমন লাভ হয় না।

বাইক চালকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তাদের অনেকেই ৭-৮ মাস আগে অ্যাপ ব্যবহার করেছিলেন। আবার কোনও কোনও বাইক চালক অ্যাপ চালু করার দুই তিন দিন পর্যন্ত ব্যবহার করে এরপর পুরোপুরি ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়াও কিছু কিছু বাইক চালক আছেন যারা ভালো মোবাইল নেই বলে অ্যাপ ব্যবহার করেন না। তাদের প্রায় সবার মূল বক্তব্য আয়ের বড় অংশ রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানকে দিতে রাজি নন তারা। বাইক চালকরা অ্যাপ ব্যবহার না করায় শুধু যে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়। অসচেতনতা বাড়ছে বাইক চালকদেরও। গ্রাহক সেবা নিয়ে কোনও জবাবদিহি নেই বলে যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দরদাম করার সময় কটূক্তি করা, যাচ্ছেতাই ভাবে গাড়ি চালানো, ত্রুটিযুক্ত বাইকে রাইড দেওয়াসহ নানা বিষয়ে ঝুঁকি বাড়ছে। যাত্রী বা চালক কেউ কাউকে না চেনায় বিভিন্ন অপরাধও প্রায় প্রায় ঘটতে দেখা যায়।

কন্ট্রাক্টে যাওয়া কিছু যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে অ্যাপ ব্যবহার না করার কারণ হিসেবে জানা যায়, রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোতে এখন পর্যাপ্ত রাইডার পাওয়া যায় না। সময় নিয়ে রাইডার খুঁজে পেলেও যাত্রীর গন্তব্য পছন্দ না হলে কিংবা দূরে হলে চালকরা সেটা ক্যান্সেল করে। ফলে ধীরে ধীরে যাত্রীদের অ্যাপ ব্যবহারের আগ্রহ কমছে।

বনশ্রী যাওয়ার জন্য বাইক চালকদের সঙ্গে মূল্য ঠিক করছিলেন শ্যাওড়াপাড়ার বাসিন্দা মোহম্মদ সোহাগ। সোহাগের কাছে অ্যাপ না গিয়ে কন্ট্রাক্টে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে প্রায় অ্যাপ ব্যবহার করতাম। এখন আর সেটা হয় না। রাইডার পাওয়া যায় না। অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় লোকেশন শুনে রাইড ক্যান্সেল করে চালকরা।

কন্ট্রাক্টে গেলে কোনও অসুবিধা বোধ করে কি না জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, অ্যাপ আর কন্ট্রাক্টে যাওয়া বাইক রাইডারদের মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে। অ্যাপের বাইকাররা কন্ট্রাক্টে যাওয়া বাইক চালকদের থেকে অনেক সচেতন। কন্ট্রাক্টে গেলে মনে হয় কোনও মতে পৌঁছে দিতে পারলেই চলে। আকাশ দিয়ে যায় না মাটি দিয়ে যায় সেইটা বিষয় না।

বাইক চালক এবং যাত্রীদের অ্যাপ ব্যবহারে অনাগ্রহের বিষয়ে পাঠাও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ বলেন, পাঠাও সবসময় রাইডার এবং ইউজার উভয় পক্ষের কথা বিবেচনা করে সরকার নির্ধারিত নীতিমালার মধ্যে ভাড়া নির্ধারণ করে। কিন্তু কিছু অসাধু রাইডার বাড়তি ভাড়া আদায়ের জন্য দিনের বিশেষ কিছু সময়ে অফলাইন ট্রিপ দিয়ে থাকে। ইউজারদের একটি অংশ সচেতনতার অভাবে অফলাইন সার্ভিসটি গ্রহণ করছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা ইউজারদের এ বিষয়ে সচেতন করতে কাজ করছি। পাঠাও রাইডার এবং ইউজারদের জন্য বীমা সুবিধা দিচ্ছে। পাঠাও রাইডারদের কাছ থেকে মাত্র ১০ শতাংশ কমিশন নেয়। যা দেশের সর্বনিম্ন। এছাড়া রাইডারদের অতিরিক্ত আয় নিশ্চিত করতে কোয়েস্ট বা বোনাস দিয়ে আসছে পাঠাও।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom