প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো পরিতর্বন দেখছে না বিএনপি: আমীর খসরু

প্রথম নিউজ, অনলাইন: প্রস্তাবিত বাজেটে গুণগত দিক থেকে ‘আওয়ামী লীগ’ সরকারের ধারাবাহিকতা রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেয়া বাজেট নিয়ে ৪ঠা জুন (বুধবার) বিএনপি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেবে বলেও জানান তিনি। বলেন, ৪ঠা জুন সকাল ১১টায় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলনে আছে, বাজেটের উপরে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। এদিন বিএনপি বাজেটের উপর দলের ভাবনা জানাবে। সোমবার বিকালে রাজধানীর হোটেল সারিনায় বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, আগে যেভাবে বাজেট চলে আসছে মূলত সেখান থেকে আমরা খুব বেশি সংখ্যার তারতম্য ছোটখাটো হয়েছে, বাজেটের যে প্রিন্সিপাল ওই জায়গাটায় আমরা আগের মতো রয়ে গেছি। গুণগত দিক থেকে আমরা এই বাজেটে কোনো কিছু পরিবর্তন দেখি না। শুধুমাত্র সংখ্যার সামান্যতম, কিন্তু ওই প্রিন্সিপাল একই রয়ে গেছে, ওদের যে কাঠামো সেটা একই রয়ে গেছে। এটা (এরকম বাজেট) আগামীদিনের সরকারের জন্য খুব একটা সহজ কিছু হবে না।
তিনি আরও বলেন, গতানুগতিক আমি বলছি না, কিন্তু সেই জায়গা থেকে আমরা বের হতে পারি নাই। বিগত সরকারের ধারাবাহিকতা থেকে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ বের হতে পারে নাই। রাজস্ব আয়ের ওপর ভিত্তি করে বাজেট করা উচিত। তাহলে প্রাইভেট সেক্টরে টাকার সরবরাহ থাকবে, বিনিয়োগ থাকবে, ইন্টারেস্ট কমে আসতো, বিদেশি ঋণের পরিমাণ কমে আসতো এবং সুদের হারও কম পেমেন্ট করতে হতো। কিন্তু আমরা সেই জায়গা থেকে সরে আসতে পারি নি। আমি মনে করি, এই মৌলিক জায়গায় গলদটা রয়ে গেছে।
এই বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব আয়কে মাথায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে গুণগত দিক থেকে এই বাজেটে আমরা কোনো পরিবর্তন দেখি নাই। কাঠামো কিন্তু একই রয়ে গেছে। সুতরাং এটা কিন্তু আগামীদিনের সরকারের জন্য খুব একটা সহজ কিছু হবে না।
আমীর খসরু বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা সীমিত, কারণ তাদের একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে তাদের ক্ষমতায় থাকার মেয়াদের ব্যবধান রয়েছে-এটা মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, বিগত সরকার বাজেটের আকার বাড়াতে বাড়াতে যে জায়গায় নিয়ে গেছে, সেটার সঙ্গে রাজস্ব আয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয়ত, রাজস্ব আয়ের পুরোটাই পরিচালনা ব্যয়ের মধ্যে ব্যয় হয়ে যাবে। উন্নয়ন বাজেট দেশের ভেতর বা বাইরে থেকে ঋণ নিয়ে চালাতে হচ্ছে। সরকার দেশের বাইরে থেকে ঋণ নিলে এর বোঝা বাড়তে থাকে এবং বছরের পর বছর দেশের মানুষকে এই সুদ দিতে হয়। এই কারণেই কিন্তু দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ভুগতে থাকে। আর দেশের ভেতরে থেকে নিলে আবার বেশি ক্ষতি। কারণ দেশের ব্যাংক থেকে লোন নিলে ইন্টারেস্ট বেড়ে যায়। আবার ব্যক্তিখাতে লোনও কমে যায়। এর ফলে দেশে বিনিয়োগ হয় না, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় না, মানুষের আয় বৃদ্ধি পায় না। প্রাইভেট সেক্টর লোন না পেয়ে অনেকে বিনিয়োগও করতে পারে না।
বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমি মনে করি, রাজস্ব আয়ের সঙ্গে বাজেটের আকারের একটা সম্পৃক্ততা থাকা উচিত ছিল। আমি মনে করি সেটা হয়নি। রাজস্ব আয় যেটা আছে তার পুরোটাই পরিচালনা ব্যয়ের মধ্যে চলে যাবে। দেশের বাইরে ও ভেতর থেকে লোন নিতে গেলে, এসব প্রভাবের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বৈদেশিক ঋণ ৩ দশমিক ৫ বিলিয়নের মতো। আমি মনে করি, বিদেশি ঋণ ও রাজস্ব আয়কে মাথায় রাখলে এই বাজেটের আকার আরও ছোট হওয়া উচিত ছিল। গুণগত দিক থেকে এই বাজেটে কোনো পরিবর্তন হয়নি, শুধু সংখ্যায় সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। কাঠামো কিন্তু একই রয়েছে।