যৌতুক না পেয়ে গৃহবধূকে বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা
অভিযুক্তরা হলেন, মরিয়ম বেগমের স্বামী রাশেদ সরকার (৩০), শ্বশুর ফারুক সরকার (৫৫) ও শাশুড়ি রাশেদা বেগম (৫০)।
প্রথম নিউজ,গাইবান্ধা: গাইবান্ধায় যৌতুক না পেয়ে মরিয়ম বেগম (২২) নামে এক গৃহবধূকে বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।
গৃহবধূ মরিয়ম বেগম বর্তমানে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। এ নিয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী নারীর পরিবার।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে গাইবান্ধা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ওয়াহেদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ৪ জুন বিকেলে সদর উপজেলার বাদিয়খালী ইউনিয়নের তালুক রিফায়েতপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন, মরিয়ম বেগমের স্বামী রাশেদ সরকার (৩০), শ্বশুর ফারুক সরকার (৫৫) ও শাশুড়ি রাশেদা বেগম (৫০)।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আড়াই বছর আগে রাশেদ-মরিয়মের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মরিয়মের পরিবারের পক্ষ থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকাসহ প্রায় তিন লাখ টাকার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। পরে তাদের ঘরে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। পরবর্তীতে পরিবারের লোকের কুমন্ত্রণায় স্বামী রাশেদ পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি করেন।
সেই টাকা দিতে না পারায় রাশেদ বিভিন্ন সময়ে মরিয়মের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে দুই মাস আগে আবারও যৌতুকের টাকা আনতে বললে তাতে মরিয়ম অস্বীকৃতি জানান। তাকে মারধর করে এককাপড়ে কোলের শিশু সন্তানসহ বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন রাশেদ। তখন থেকেই স্ত্রী মরিয়ম বেগম তার বাবার বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন।
৪ জুন সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ রাশেদ মোবাইল ফোনে মরিয়মক বাড়িতে যেতে বললে তিনি শিশুসন্তানসহ স্বামীর বাড়ি যান। ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে রাশেদ তার বাবা ও মায়ের প্ররোচনায় আবারও যৌতুকের পাঁচ লাখ টাকা মরিয়মের বাবার বাড়ি থেকে আনতে বলেন। এতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর শুরু করেন রাশেদ।
এক পর্যায়ে বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি দিয়ে মরিয়মে পিঠের বিভিন্ন স্থানে, হাতে ও পায়ে ছ্যাঁকা দেন রাশেদ। এ সময় মরিয়ম অজ্ঞান হয়ে পড়েন। প্রতিবেশীরা মরিয়মের বাবার বাড়িতে খবর দিলে তারা গিয়ে গুরুতর আহত মরিয়মকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগী মরিয়ম বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন থেকেই যৌতুকের দাবিতে আমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করছিল। বিভিন্ন সময়ে অন্যত্র বিয়ে করে আমাকে তালাক দেওয়ার হুমকি-ধামকিও দিত। সংসারের চিন্তা করে চাপা কষ্টে সব মেনে চলছিলাম। কিন্তু সেদিন আমি মারাও যেতে পারতাম। পোড়া জায়গাগুলোতে অনেক যন্ত্রণা করছে।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) তানভীর রহমান বলেন, গৃহবধূ মরিয়ম বেগম এখন শঙ্কামুক্ত। তার চিকিৎসা চলছে। গাইবান্ধা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ওয়াহেদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।