যুগপৎ কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা বিএনপি’র
কাল থেকে সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক
প্রথম নিউজ, অনলাইন: দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ও দুর্নীতিবিরোধী ইস্যুতে বড় কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামছে বিএনপি। এজন্য আন্দোলনের নতুন ছক তৈরি করছে। খুব শিগগিরই এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। যদিও এরইমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে তিনদিনের কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। সামনে এই ইস্যুতে আবারো কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতির প্রতিবাদেও কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই ইস্যুতে লিফলেট বিতরণ, সমাবেশ এবং মিছিলের মতো কর্মসূচি দেয়া হবে।
নভেম্বর পর্যন্ত জনসম্পৃক্ততামূলক ইস্যুতে জেলা, উপজেলা এবং মহানগর পর্যায়ে এসব কর্মসূচি চলবে। এরপর নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরের দিকে সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশের পর ঢাকায় বড় ‘সমাবেশ’ করার কথা ভাবছেন বিএনপি’র নীতিনির্ধারকরা। সমমনা দল ও জোটকেও এই কর্মসূচিতে আনতে চাইছে দলটি। এজন্য কর্মসূচি নির্ধারণে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলোর মতামত গ্রহণ করবে দলটি।
গত সোমবার রাতে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি এবং মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, নজিরবিহীন দুর্নীতির প্রতিবাদে কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল এক বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশগুলো সফল করায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, নজিরবিহীন দুর্নীতির প্রতিবাদেও কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বৈঠকে।
কর্মসূচির প্রসঙ্গে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জনসম্পৃক্তমূলক ও দুর্নীতিবিরোধী ইস্যুতে যুগপৎভাবে আন্দোলনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এসব ইস্যুতে সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে থাকতে চায় দলটি। এজন্য যুগপৎ আন্দোলনের বাইরেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা। সব রাজনৈতিক দলকে এক প্ল্যাটফরমে নিয়ে এসে বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় দলটি। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, কর্মসূচি ঘোষণার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। হলে আপনারা জানতে পারবেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্যদের আগে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারেক রহমান। যুগ্ম মহাসচিবরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে লিখিত প্রস্তাবও পাঠিয়েছেন। সেখানে দুর্নীতিবিরোধী, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি এবং চুক্তি-সমঝোতার প্রতিবাদে কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালনের কথা বলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিএনপি। এদিন গণফোরাম, বাম গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও এনডিএমের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য দল এবং জোটগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করবে দলটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুগপৎ আন্দোলনের এক শীর্ষ নেতা বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বিএনপি’র লিয়াজোঁ কমিটির ধারাবাহিক বৈঠক শুরু হবে। মূলত বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।
এ ছাড়া গত সোমবার বৈঠকে সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধের জন্য সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। নেতৃবৃন্দ মনে করেন, এই অবৈধ সরকার সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে ভারতের ওপরে প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় এই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটছে। অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বৈঠকে আহ্বানও জানান নেতৃবৃন্দরা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান।