যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় এলসি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে র্যাব
পুরোনো ৯টি এলসি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে র্যাব। এর মধ্যে দুটি এলসির বিপরীতে সাইপ্রাস থেকে ২১ কোটি টাকার 'নজরদারি যন্ত্রপাতি' প্রস্তুত রয়েছে; কিন্তু আনা সম্ভব হচ্ছে না। অন্য দুটি এলসির বিপরীতে ৩২ কোটি টাকার একই যন্ত্রপাতি দেশে এলেও বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আরও পাঁচটি এলসি নিয়ে প্রায় একই রকম সমস্যায় পড়েছে সংস্থাটি।
প্রথম নিউজ ডেস্ক: মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে কোনো কিছু আমদানি করতে পারছে না র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আগেই খোলা আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) বিপরীতে কেনা যন্ত্রপাতি তৈরি অবস্থায় থাকলেও তা দেশে আনা যাচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত র্যাবের নামে আর নতুন করে এলসি খোলাও যাবে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরোনো ৯টি এলসি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে র্যাব। এর মধ্যে দুটি এলসির বিপরীতে সাইপ্রাস থেকে ২১ কোটি টাকার 'নজরদারি যন্ত্রপাতি' প্রস্তুত রয়েছে; কিন্তু আনা সম্ভব হচ্ছে না। অন্য দুটি এলসির বিপরীতে ৩২ কোটি টাকার একই যন্ত্রপাতি দেশে এলেও বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আরও পাঁচটি এলসি নিয়ে প্রায় একই রকম সমস্যায় পড়েছে সংস্থাটি।
সরকারের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ ও ২০২১ সালে এসব পণ্য আমদানির জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল র্যাব।
র্যাবের যে ৯টি এলসির দায় পরিশোধে সমস্যা হয়েছে, তার মধ্যে চারটির বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। এ তালিকায় রয়েছে- মোবাইল কমিউনিকেশন অ্যানালাইজার, ব্যাকপ্যাক আইএমএসআই ক্যাচার, জিএসএম ইউএমটিএস ভেহিকুলার সাপোর্ট সিস্টেম এবং ব্রেইন ফিঙ্গারপ্রিন্ট। সাধারণভাবে মোবাইল ফোনে নজরদারি, ব্যক্তির অবস্থান শনাক্তের কাজে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এসব প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে প্রথম তিনটি পণ্যের উৎপাদনকারী দেশ সাইপ্রাস। তবে পণ্য আসার কথা সিঙ্গাপুর থেকে। শেষ পণ্যটির জন্য এলসি খোলা হয়েছে যুক্তরাজ্যের সরবরাহকারীর অনুকূলে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি, চীনের দুটি এবং অস্ট্রেলিয়ার একটি এলসির ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সিপিটিইউর ওয়েবসাইটে এসব পণ্য ক্রয়কারী সত্তা হিসেবে নাম রয়েছে র্যাবের মহাপরিচালকের। চার পণ্যের মধ্যে মোবাইল কমিউনিকেশন অ্যানালাইজার এবং ব্যাকপ্যাক আইএমএসআই ক্যাচার কেনার ক্ষেত্রে 'এক ধাপ, দুই খাম' দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এর অর্থের উৎস সরকারের অনুন্নয়ন ব্যয় খাত। এ ছাড়া জিএসএম ইউএমটিএস ভেহিকুলার সাপোর্ট সিস্টেম ও ব্রেইন ফিঙ্গারপ্রিন্ট কেনার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এর অর্থ এসেছে সরকারের উন্নয়ন বাজেট থেকে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী ও জনতা ব্যাংকে এলসি খোলা হয়েছিল। সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, র্যাবের পণ্য আমদানির এলসির বিল পরিশোধ করতে না পারার বিষয়টি তারা এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছেন। তবে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বিকল্প কোনো উপায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের জানায়নি। নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অর্থ পরিশোধ করলে সেই ব্যাংকও কালো তালিকায় পড়ার আশঙ্কা থাকে। ওই কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক বাণিজ্যের বড় অংশই নিষ্পত্তি হয় ডলারে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর নস্ট্রো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এসব লেনদেন করা হয়। যে কারণে র্যাবের পরিশোধের ক্ষেত্রে হয়তো সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।
সূত্র জানায়, ১৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মোবাইল কমিউনিকেশন অ্যানালাইজার কিনতে এলসি খোলা হয়। এ জন্য ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করে র্যাব। এতে গুলশানের থ্রিসিক্সটি টেকনোলজিস নামের লোকাল এজেন্ট এবং সিঙ্গাপুরের প্যানমার্ক ইমপেক্স বিদেশি এজেন্ট মনোনীত হয়। সোনালী ব্যাংকের ঢাকার ওয়েজ আর্নার করপোরেট শাখার মাধ্যমে এলসির বিদেশি ব্যাংক ছিল এইচএসবিসি সিঙ্গাপুরের একটি শাখা।
সোনালী ব্যাংকের একই শাখার মাধ্যমে ব্যাকপ্যাক আইএমএসআই ক্যাচার কিনতে দুই কোটি ৯৯ লাখ টাকার এলসি খোলা হয়। এই পণ্য কেনার দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। বনানীর ফাগুন ট্রেডিং লোকাল এজেন্ট এবং সিঙ্গাপুরের প্যানমার্ক ইমপেক্স বিদেশি এজেন্ট ছিল। পণ্য দুটি শিপমেন্টের তারিখ ছিল গত ২৬ জানুয়ারি। জাহাজীকরণের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি। প্রাক্-জাহাজীকরণ পরিদর্শন রিপোর্ট ব্যতীত পণ্য ছাড় করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের কপি জমা দেওয়া হয়েছে। কোনো বিল পরিশোধ করা যায়নি। শিপমেন্টের তারিখ পার হলেও সাইপ্রাস থেকে মালপত্র জাহাজীকরণ হয়নি।
জিএসএম ইউএমটিএস ভেহিকুলার অ্যাকটিভ সাপোর্ট সিস্টেম কিনতে গত বছরের মার্চে দরপত্র আহ্বান করে র্যাব। সোনালী ব্যাংকের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ শাখার মাধ্যমে এইচএসবিসি ব্যাংকের সিঙ্গাপুরের একটি শাখায় এলসি খোলা হয়। এলসি মূল্য ছিল ২৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ পণ্যের উৎপাদনকারী দেশও সাইপ্রাস। লোকাল এজেন্ট গুলশান-১ নম্বরের থ্রিসিক্সটি টেকনোলজিস এবং বিদেশি এজেন্ট সিঙ্গাপুরের প্যানমার্ক ইমপেক্স। গত বছরের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে এই যন্ত্র দেশে এসেছে। এর বিপরীতে ১০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করলেও বাকি অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না।
যুক্তরাজ্য থেকে 'ব্রেইন ফিঙ্গারপ্রিন্ট' আমদানির দরপত্র আহ্বান করা হয় গত বছরের মার্চে। দুই কোটি ৩৭ লাখ টাকায় এ পণ্য কেনার জন্য জনতা ব্যাংকের পুরানা পল্টনের ফরেন এক্সচেঞ্জ করপোরেট শাখায় এলসি খোলা হয়। এলসির বিদেশি ব্যাংক জনতা ব্যাংক আবুধাবি শাখা। পণ্য জাহাজীকরণের তারিখ ছিল গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি। এই পণ্যটিও দেশে আনার পর এনডোর্সমেন্টের মাধ্যমে ১০ শতাংশ বিল পরিশোধ হয়েছে। এখন বাকি ৯০ শতাংশ বিল পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি এজেন্ট ছিল মিরপুরের সাউথ এশিয়ান সফটওয়্যার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। আর বিদেশি এজেন্ট দুবাইয়ের স্পিডপিয়াল ট্রেডিং।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক দুই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমাদের দেশের ব্যাংকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা পরিপালনের আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে এখানকার ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্যের বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। আবার 'ইউএস প্যাট্রিয়েট অ্যাক্ট'র আওতায় দেশটির নিষেধাজ্ঞায় থাকা সত্তার অনুকূলে লেনদেন করলে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, আমদানিকারকের সঙ্গে রপ্তানিকারকের সম্পর্কের ভিত্তিতে পণ্যমূল্য পরিশোধ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে পুরো অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করতে হয়। কখনও পণ্য আসার আগে আংশিক পরিশোধ করতে হয়। তবে সাধারণভাবে পণ্য দেশে আসার সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের মধ্যে পুরো বিল পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অবশ্য করোনার কারণে নীতি শিথিলতার ফলে আগামী জুন পর্যন্ত আমদানি দায় পরিশোধে ২৭০ দিন পর্যন্ত সময় দেওয়া আছে। কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে পুরো বিল পরিশোধ না হলে দেশের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর র্যাব এবং সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি বিভাগ ও পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে আলাদাভাবে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়। ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কর্মকর্তারা হলেন- র?্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খান।
দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের আলাদা এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭-এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাে র মধ্য দিয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ততার জন্য এ দু'জনের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থার কথা জানানো হয়। বিষয়টি সুরাহার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে 'নেলসন মুলিন্স' নামের একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে সরকার। প্রতি মাসে ২০ হাজার ডলারে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে এক বছরের চুক্তি করা হয়েছে বলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
র্যাবের বক্তব্য: আমদানি দায় পরিশোধ করতে না পারার বিষয়ে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে টেলিফোন করে জানতে চাইলে তিনি সংস্থাটির মুখপাত্রের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সমকালকে জানান, র্যাব খুব বেশি জিনিস আমদানি করে, তেমন নয়। র্যাবের প্রয়োজনীয় অধিকাংশ জিনিস আসে পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে। শুধু গোয়েন্দা সরঞ্জাম আলাদাভাবে কেনা হয়। তিনি বলেন, এর আগে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার ধারাবাহিকতায় এবারও দেশটির কিছু দরপত্র গ্রহণ করা হয়। এটা করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞার আগে। নিষেধাজ্ঞার পর এখন যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক দরপত্রের বিপরীতে সরাসরি পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে। তবে এমন না যে, জিনিস আসেনি বা আর আসবে না। বরং পরিশোধ পদ্ধতি কী হবে, কীভাবে পরিশোধ করা হবে- এসব নিয়ে আমাদের ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সঙ্গে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের আলোচনা চলছে।
সাইপ্রাসে উৎপাদিত সরঞ্জাম সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি এবং যুক্তরাজ্য থেকে আমদানির দায় পরিশোধে সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার আল মঈন বলেন, মূল সমস্যা যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পণ্যের পরিশোধের ক্ষেত্রে। যেহেতু আমাদের পণ্য কেনা হয় উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে। দেখা গেল নিলামে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে। কিংবা পণ্যটি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক। তবে সরাসরি তারা অংশ না নিয়ে হয়তো অন্য দেশে নিবন্ধিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ক্রয়াদেশ পেয়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews