মোহাম্মদপুরে সেনা ক্যাম্প টহল জোরদার

এলাকায় স্বস্তি ফেরাতে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশ, র‌্যাব, সেনা বাহিনী, আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। 

মোহাম্মদপুরে সেনা ক্যাম্প টহল জোরদার

প্রথম নিউজ, অনলাইন : রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় একের পর এক দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনার জেরে সেখানে যৌথ অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানে আটক করা হয়েছে ৪৬ জনকে। এলাকায় স্বস্তি ফেরাতে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশ, র‌্যাব, সেনা বাহিনী, আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। 

গত কয়েকদিন ধরে অপরাধীরা মোহাম্মদপুরের বসিলা, নবোদয় হাউজিং, ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, বসিলা গার্ডেন সিটি, ৪০ ফিটসহ বিভিন্ন এলাকায় ধারালো অস্ত্রের মুখে সাধারণ মানুষের সব লুটে নিচ্ছে। যেসব ঘটনার বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরমধ্যে গত ২৪শে অক্টোবর মোহাম্মদপুর বসিলা ৪০ ফিট এলাকার মুদি দোকানের ভেতর ঢুকে টাকা লুট, ২১শে অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মোহাম্মদপুর নবোদয় হাউজিং এলাকায় নারী শিক্ষার্থীর ব্যাগ ছিনতাই, ২০শে অক্টোবর সকাল পৌনে ১০টার দিকে মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেড এলাকায় নেসলে  কোম্পানির গাড়ি থেকে ১১ লাখ টাকা ছিনতাই, ১৯শে অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টায় বসিলা ৪০ ফিট সড়কে খাবার খেয়ে ফেরার পথে তিন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা-মোবাইল ফোন ছিনতাইসহ বেশ কয়েকটি ঘটনা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এলাকাবাসীর মধ্যে।

এরই প্রেক্ষিতে গত শনিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর থানায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। এরপর যৌথ অভিযানে নামেন র‌্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা। মধ্য রাত পর্যন্ত চলা ওই যৌথ বাহিনীর অভিযানে মোট ৪৫ জনকে আটক করা হয়। ওইদিন রাত ১টায় মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপনের ঘোষণা দেন ২৩ ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর নাজিম আহমেদ। 

মেজর নাজিম আহমেদ বলেন, র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ এ অভিযানে ছিনতাই করা অবস্থায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের ৪০ জনের মতো সদস্যকে ধারালো অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। গতকাল সকালে আরও একজনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের অনেকের হাতে ট্যাটু ছিল। এরমধ্যে কারও কারও হাতে ডাবল স্টার খোঁচানো ট্যাটুও দেখা গেছে। সাধারণত একেকটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা একেক ধরনের ট্যাটু ব্যবহার করে। তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরে অন্তত ২৭ থেকে ২৮টি কিশোর গ্যাংয়ের তথ্য পেয়েছে সেনাবাহিনী। এসব  এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন হাউজিং এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে। যেখান থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুরো এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন।

সরজমিন দেখা যায়, মোহাম্মদপুরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা উদ্যান আবাসিক এলাকার সি-ব্লকের ৩ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়ির উদ্যান ভবনে অবস্থিত ‘ঢাকা উদ্যান বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’র অফিসে গতকাল সকালে অস্থায়ী ক্যাম্প গঠন করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেখানে অবস্থান নিয়ে এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার দিকে পর্যালোচনা করছেন তারা। মো. জাহিদ হাসান নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, গেল কয়েকদিন যেই অবস্থা। দিনের বেলাতেও দোকান খুলতে ভয় লাগতো। সন্ধ্যা নামলেই ছুরি-চাপাতি নিয়ে লোকজন মহড়া দেয়। যার যা পায় সব কেড়ে নেয়। এখন আমাদের এলাকায় সেনাবাহিনী ক্যাম্প গঠন করেছে। সেনাবাহিনীকে দেখে বুকে সাহস পাচ্ছি। আশা করছি আগের মতো আবারো রাত ১০-১১টা পর্যন্ত দোকানদারি করতে পারবো। বিল্লাল হোসেন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, অস্ত্র গলায় ধরে দিনদুপুরে মানুষের সব কেড়ে নিয়ে চলে যায়। এখন আমাদের এলাকায় সেনা ক্যাম্প হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চলছে। আশা করছি এইসব দুর্বৃত্তদের হাত থেকে আমরা মুক্তি পাবো। শঙ্কা ছাড়া আবারো ঘর থেকে বের হবো। 

এসব বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান বলেন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করছি। সকলের ওয়ার্কিং আওয়ার বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনীর সহায়তায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমরা অভিযান চালিয়ে ৪৬ জনকে আটক করেছি। তাদের সকলকেই আদালতে চালান করে দেয়া হয়েছে। আমরা জেনেভা ক্যাম্পেও অভিযান পরিচালনা করেছি। সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। টহল জোরদার করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। 

মোহাম্মদপুরের সার্বিক বিষয় নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) তালেবুর রহমান বলেন, সেনা ক্যাম্পের সঙ্গে আমরা পুলিশি টহলও জোরদার করেছি। চোর, ছিনতাইকারী ধরতে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। তাতে অনেকেই আটক হচ্ছে। আমরা ব্লক রেডও পরিচালনা করেছি। একই সঙ্গে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।