মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে শতাধিক ভারতীয়কে পুশইন করলো বিএসএফ

মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে শতাধিক ভারতীয়কে পুশইন করলো বিএসএফ

প্রথম নিউজ, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে গত দু’দিনে শতাধিক ভারতীয় নাগরিককে জোরপূর্বক পুশইন করেছে বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে বিজিবি। এদিকে অবৈধভাবে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশইন ঠেকাতে সবাইকে সতর্ক পাহারায় থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বড়লেখা, কুলাউড়া, জুড়ী, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল সীমান্তবর্তী উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ নিয়ে তারা চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। তারা বলছেন- গভীর রাতে অথবা ভোরবেলায় ভারত থেকে অনেককেই বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক জোর করে অনুপ্রবেশ করানো হচ্ছে। যাদের ভাষা বাংলা আবার বাংলার সাথে হিন্দিমিশ্রিত। হঠাৎ করে সীমান্ত এলাকায় পুশ ইন নিয়ে স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকরা আতঙ্কে  রয়েছেন।

ওদিকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও পুলিশসহ স্থানীয় বাসিন্দারা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। বুধবার ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশইনের সময় জেলার কমলগঞ্জের ধলই সীমান্তে থেকে নারী-পুরুষ শিশুসহ ১৫ জনকে আটক করেছে বিজিবি। বিষয়টি নিশ্চিত করে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিব নারায়ণ শীল বলেন, বুধবার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের বিজিবি আটক করেছে।

আটককৃতদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৩ জন মহিলা ও ৩ জন শিশু রয়েছে। আটককৃতরা জানায়, তারা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভারতের আসামে বসবাস করে আসছিল। হঠাৎ করে ভারতীয় পুলিশ তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে হেলিকপ্টারে করে ত্রিপুরার মানিক ভান্ডারে নিয়ে বিএসএফ এর হাতে তুলে দেয়। তারা প্রায় তিন শতাধিক লোক ছিলেন। বিএসএফ তাদের কয়েকজনকে ধলই সীমান্ত দিয়ে গেইট খুলে ‘পুশ ইন’ করলে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তবে অন্যদের কোন সীমান্তে নিয়ে গেছে তা তারা বলতে পারেননি।

বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার লোকজন জানান, বুধবার ভোর ৫টার দিকে নিউ পাল্লাথল বিজিবি ক্যাম্পের আওতাধীন এলাকার সীমান্ত দিয়ে ৩২ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে পুশইন করেছে বিএসএফ। অপরিচিতি ও সন্দেহজনক চলাফেরার কারণে পাল্লাথল চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের আটক করে বিজিবির কাছে সোপর্দ করে। গতকাল সকালে বোবারথল সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ আরো ২৩ জনকে পুশইন করেছে জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই লোকজনকেও আটক করে তারা বিজিবির কাছে সোপর্দ করেছেন। গত দু’দিনে শতাধিক লোক এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে। অনুপ্রবেশকারীরা জানিয়েছে, ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ তাদের ধরে এনে জোর করে বর্ডার পার করে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা অনেক বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করছেন। সীমান্তের ওপারে তাদের মতো আরো অনেককে পুশইন করার জন্য বিএসএফ ধরে রেখেছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বুধবার ভোরে নিউ পাল্লা বিজিবি ক্যাম্প এলাকা দিয়ে বিএসএফের পুশইন করা ৩২ জনের অনেকে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর বাজার থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বড়লেখা ত্যাগ করেন। কেউ কেউ সিএনজিযোগে অন্যত্র চলে গেছেন। বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হাসান পিপিএম বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে বেশকিছু মানুষকে আটক করা হয়েছে। সীমান্তে বিজিবির নজরদারি আরো জোরদার করা হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের ঠিকানা নিশ্চিত করণের কাজ চলছে। পরিচয় যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এইচকেএম জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘটিত যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে কোনো সন্ত্রাসী ও দাঙ্গাবাজ অবৈধভাবে যাতে বাংলাদেশের সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আইজিপি থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কারণে সীমান্ত এলাকায় আমরা চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি জোরদার করেছি। তবে পুশইন বা কোনো নাগরিক আটক হওয়ার খবর আমাদের জানা নেই।