ভাড়াটে চালকরা পালিয়েছেন, নগরজুড়ে বর্জ্যের স্তূপ
ডিএসসিসির নিজস্ব গাড়ি রয়েছে ৫৯১টি। কিন্তু ২২৫ জন। এর মধ্যে ভারী যানবাহন ৩৩৭টি। সেগুলোর চালক ১১০ জন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: শিক্ষার্থী চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনার পর দুই সিটি করপোরেশনের অবৈধ ও ভাড়াটিয়া চালকরা পালিয়েছেন। যে কারণে বৈধ চালক সংকটে রয়েছে সংস্থা দুটি। নগরজুড়ে দেখা যাচ্ছে বর্জ্যের স্তূপ। সিটি করপোরেশন বলছে, অবৈধ চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াতেই এ সংকট দেখা দিয়েছে। যে কারণে নগরীর অলিগলিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে বর্জ্য।
সকালে খিলগাঁও থেকে মলিবাগ রেলগেট পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশে বর্জ্যের স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এগুলো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। কিছুতেই বর্জ্য কমাতে পারছেন না তারা। জানতে চাইলে রবিউল ইসলাম নামে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, “আমাদের চারশ’র মতো গাড়ি ছিল। এখন গাড়ি আছে, চালক নেই। অবৈধ চালকদের বাদ দিয়েছেন মেয়র। তাই ময়লা কমছে না। দিন দিন বাড়ছে।”
একই চিত্র দেখা গেছে নগরীর মালিবাগ এলাকায়ও। সেখানেও বর্জ্যের একটি স্টেশনে বিশাল স্তূপ। অনেক জায়গায় বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এতে ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে স্থানীয়রা। রাতের আঁধারে কর্মীরা এসে বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
জানতে চাওয়া হলে সামছুল ইসলাম নামের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ‘রাত হলে ময়লার স্তূপ জমে। গাড়ি টেনে শেষ করতে পারে না।’
জানতে চাইলে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এসএম শফিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুই-একদিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে। চালক সংকট রয়েছে। বিকল্পভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।’
দক্ষিণ সিটির অবস্থাও একই। একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অবৈধ ও ভাড়াটে চালকরা পালিয়েছেন। অনেক বৈধ চালক তো দীর্ঘদিন না চালানোর কারণে গাড়ি চালানোই ভুলে গেছেন। তাদের নিয়ে ভয় আরও বেশি।’
গত ১০ বছর ধরে দক্ষিণ সিটির একটি বর্জ্যের গাড়ি চালাতেন করিম মিয়া। তার মূল গাড়ির চালক রহিম উদ্দিন নামের আরেকজন। রহিম উদ্দিন সিটি করপোরেশনের ড্রাইভার হলেও তিনি নিউমার্কেটে বইয়ের দোকান করেন। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম শিক্ষার্থী নাঈম নিহত হওয়ার পর গাড়ি রেখে পালিয়ে যান করিম।
দুই সিটির ডাম্পিং স্টেশন সূত্র জানিয়েছে, চালক কম থাকায় স্টেশনে পর্যাপ্ত ময়লা আসছে না। ফলে নগরে আবর্জনা বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও দক্ষিণ সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সিতওয়াত নাঈমকে পাওয়া যায়নি। এসএমএস পাঠালেও সাড়া দেননি।
জানা গেছে, ডিএসসিসির নিজস্ব গাড়ি রয়েছে ৫৯১টি। কিন্তু ২২৫ জন। এর মধ্যে ভারী যানবাহন ৩৩৭টি। সেগুলোর চালক ১১০ জন। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে চালক রয়েছে ২৬ জন। বাকি গাড়িগুলো সিটি করপোরেশন প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই পরিচ্ছন্নতা ও মশককর্মীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। একই অবস্থা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেরও। তাদের বর্জ্যবাহী ভারী যান ১৩৭টি। বিপরীতে চালক মাত্র ৪১ জন। এর মধ্যে ২৫ জনই দৈনিক মজুরিভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত। সংস্থা দুটির ৮০ ভাগ যানবাহনের ফিটনেস সনদও নেই।
পরিবহন চালকদের দুই সিটিতে দুটি সংগঠন রয়েছে। ড্রাইভার্স ইউনিয়ন নামে সংগঠন দুটির বিশাল কমিটিও আছে। তাদের নেতারা কে কবে গাড়ি চালিয়েছেন তার হিসাব নেই। প্রভাব খাটিয়ে ভাড়াটে চালক দিয়েই নিজের নামের গাড়িগুলো পরিচালনা করছেন তারা। এ কারণেই এ খাতে বিশৃঙ্খলা চলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৬ সালে চূড়ান্ত করা দুই সিটির অর্গানোগ্রামে ৩০৬টি করে চালকের পদ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২১৫টি ভারী যান ও ৯১ জন হালকা যানচালক। অথচ করপোরেশনের প্রয়োজন এর দ্বিগুণের বেশি। আবার সিটি করপোরেশন চাইলেই এর চেয়ে বেশি চালক নিয়োগ দিতে পারে না। ফলে অতিরিক্ত গাড়ি চালানোর জন্য মজুরিভিত্তিতে ভাড়াটে চালক নিয়োগ দিতে হচ্ছে।
এদিকে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরও ভারী যানের চালক খুঁজে পাচ্ছে না সিটি করপোরেশন। ৫০ জন ভারী যান চালক নিয়োগ দেওয়ার জন্য গত ২৯ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ডিএসসিসি। এতে আবেদন করেছে ৪১ জন। লাইসেন্সগুলো বিআরটিএতে পাঠালে দেখা যায়, মাত্র ১৯ জনের লাইসেন্স বৈধ। বাকিগুলো জাল।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: