ভারতীয় পণ্য বর্জন মানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারকে বর্জন: রিজভী 

আজ বুধবার(২০ মার্চ)দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ভারতীয় পণ্য বর্জন মানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারকে বর্জন: রিজভী 

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ভারতীয় পণ্য বর্জন মানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারকে বর্জন মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন,'কারণ আওয়ামী লীগ একটি ভারতীয় পণ্য। মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ‘পিন্ডির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্যে নয়।’ সেই চেতনা এখন ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে, পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়ার ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ শ্লোগান এখন জনগণের মুখে মুখে। 

তিনি বলেন,'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে ঢেউ দৃশ্যমান তাতে মনে হয় দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী ভারতীয় পণ্য বর্জনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে। সুতরাং জনগণের দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপিসহ ৬৩টি গণতন্ত্রকামী দল এবং দেশপ্রেমিক জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জনের এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছে।

আজ বুধবার(২০ মার্চ)দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভারতের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন,' সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্রই এখন ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইনে উত্তাল। ভারতীয় পণ্য বর্জন করে জনগণ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। রাজধানীতে মিছিল সমাবেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হচ্ছে। সচেতন মানুষ বলছেন, ভারতের পণ্য কিনলে তা বুলেট হয়ে জনগণের রক্ত ঝরাচ্ছে। আর এতে অঁাতে ঘা লেগেছে ওবায়দুল কাদেরদের। তিনি রবিবার বলেছেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতবিরোধী মনোভাব জাগ্রত করে ‘ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইন’ সমীচীন নয়।”

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন,' জনগণের সামনে পরিস্কার যে, গত তিন দশক আওয়ামী লীগ ভারতের সহযোগিতায় নির্বাচনের নামে তামাশা করে আসছে। গত ৭ জানুয়ারী বিনা ভোটে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। ভারতের সমর্থন মানে ভোট না দিলেও আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারে। জনগণের সমর্থনের প্রয়োজন হয় না।
সুতরাং জনগণের ভোটাধিকার হরণ, গণতন্ত্র হত্যা, গুম—খুন—অবিচার—কুশাসনের জন্য ভারত দায়ী বলে জনগণ মনে করে। ভারত বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে নয়, আওয়ামী লীগের পক্ষে। জনগণ তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন ভারতীয় পণ্য বর্জন করে। জনগণ স্বত:স্ফুর্ত প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ‘ভারত হটাও’ আন্দোলনের ডাক দিয়ে। 

রিজভী বলেন,'নিরস্ত্র মানুষের একটাই ব্রত এখন তারা কষ্টার্জিত পকেটের পয়সায় গণধিকৃত আওয়ামী লীগ সরকারের মদদদাতা ও শক্তির উৎস ভারতের পণ্য কিনবে না। এটা কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী নয়, বাংলাদেশের অধিকার হারা মানুষের স্বত:স্ফুর্ত আন্দোলন। সারাদেশের দেশপ্রেমে শাণিত মানুষের এই ভারতীয় পণ্য বর্জনকে আমরা যৌক্তিক মনে করি। সর্বহারা জনগণের এই  আবেগকে আমরাও ধারণ করি। আওয়ামী লীগকে জোরপূর্বক ক্ষমতায় বসে থাকতে সহযোগিতাকারী ভারতীয় পণ্য বর্জন হোক মানুষের প্রতিবাদের হাতিয়ার। 

তিনি বলেন,'গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জনগণের ভোটাধিকার হরণ, গণতন্ত্র হত্যা এবং বিনা ভোটে অবৈধ ক্ষমতার অমরত্ব লাভের অপচেষ্টায় প্রতিবেশী ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও মদদের স্বীকারোক্তি প্রদান করে জোর গলায় বক্তৃতা দিচ্ছেন। কথায় কথায় প্রায় সব মন্ত্রী ভারত বন্দনায় মত্ত হচ্ছেন। তাদের কথাবার্তা ও আচার—আচরণে মনে হচ্ছে—বাংলাদেশ এখন ভারতের স্যাটেলাইট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের শনিবার সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে এবং পরদিন রোববার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের অনুষ্ঠানে বলেছেন—“ভারত আমাদের পাশে ছিল বলেই বাংলাদেশের নির্বাচনে বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র অশুভ হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। যখন দেশ—বিদেশে নির্বাচন বিরোধী ষড়যন্ত্র, তখন ভারত স্ট্রংলি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতবিরোধী মনোভাব জাগ্রত করে ‘ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইন’ সমীচীন নয়। হাছান মাহমুদ বলেছেন, “দেশে ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল, ওই সময় ভারত আমাদের পাশে ছিল। ২০১৮ সালে নির্বাচনে ভারত আমাদের সাথে ছিল। এবারও ভারত আমাদের পাশে ছিল ও আছে।”
তার মানে হলো—গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন বা শক্তিতে নয়, ভারতের শক্তি ও সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতার সিংহাসনে টিকে আছে। আর এই টিকে থাকার জন্য যত দলন—পীড়ণ, গুম—খুন—হত্যা—মামলা—হামলা— অবিচার—অনাচার সব কিছু করছে সরাসরি ভারতের মদদে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন,'ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদের অকপট স্বীকারাক্তি প্রমাণ করে জাতিসংঘ সনদের ২ (৪) ধারা সরাসরি লংঘন করে ভারত আমাদের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার সব কিছুর উপর সরাসরি নগ্ন হস্তক্ষেপ করে চলেছে। ২ (৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সকল সদস্য—রাষ্ট্র আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন থেকে এবং জাতিসংঘের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো উপায় গ্রহণ করা থেকে নিবৃত্ত থাকবে’। আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় ষ্পষ্ট যে, ভারত এ নীতি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। ভারত বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অরাজক লুটেরা খুনি গণধিকৃত বাকশালী শাসনের পক্ষে সহযোগিতা করছে।গণনিপীড়ক—হন্তারক—মাফিয়া সরকারকে প্রকাশ্যে মদদ ও সমর্থন দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ এখন একটি ভারতীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। যা স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বার্থ ও মর্যাদার পরিপন্থী।

তিনি বলেন,'আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের জনগণের ভোটের আশা করে না এবং বাংলাদেশের জনগণের ভোটের প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস নেই। মোদি সরকারের ক্ষমতার জোরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে। তারা ভারতের কাছে দাসখত দিয়ে ক্ষমতায় থাকছে। আওয়ামী লীগের কাছে স্বাধীন বাংলাদেশকেও এখন ডামি রাষ্ট্র মনে হয়। বিনাভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য তারা পুরো দেশটাকেই ডামি রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়। ক্ষমতার উৎস ভারত। ভারতই সরাসরি পৃষ্টপোষকতা দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে রেখে সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। বাংলাদেশের জনগণের অধিকার তছনছ করছে।

রিজভী আরও বলেন,'গত ১৫ জানুয়ারি সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন নিয়োগ ও প্রার্থিতায় ভারত হস্তক্ষেপ করে আসছে।এতদিন আমরা শুনেছি, বিভিন্ন মানুষ বলে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান, বিডিআর প্রধান, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের প্রধান কে হবেন—সেটি নিয়ে নাকি ভারতের সুপারিশ থাকে। ভারত যদি কারও বিরুদ্ধে আপত্তি দেয়, তাহলে তিনি নিয়োগ পান না। গত নির্বাচনে জনগণ দেখেছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসে একদলীয় নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। ভারতীয় কুটনীতিকরা বাংলাদেশে এসে বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তারা স্থিতিশীলতা চান। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র—মানুষের অধিকার চান না। ভারত মনোনীত প্রার্থীরা বীরদর্পে বলছেন—‘আমাকে ভারত মনোনয়ন দিয়েছে। আমি ভারতের প্রার্থী। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি।’ তাহলে বাংলাদেশ কি পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ ? তলে তলে দেশের স্বাধীনতা—সার্বভোমত্ব কি বিকিয়ে দেয়া হয়েছে ?

তিনি বলেন,'আওয়ামী লীগের নেতারা ভারতের গোলামি করলেও এ দেশের মানুষ ভারতের গোলামি করবে না। ভারতের জনগণের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নাই। তবে আমাদের আপত্তি ভারতের শাসকদের পলিসি, নীতি নিয়ে। তাই দলমত নির্বিশেষে ভারতীয় এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। আওয়ামী লীগ নয়, ১৮ কোটি মানুষের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের ভূমিকায় ফিরে আসবে ভারত সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক,ডা:আব্দুল কুদ্দুস,সহ-দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ মুনির হোসেন,তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।