‘ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল’ গানের মডেল হেলাল সিরিয়াল কিলার: র‌্যাব

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বাউল ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ানাে সিরিয়াল কিলার খ্যাত দুর্ধর্ষ ফেরারি আসামী ও ‘ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল’ গানের বাউল মডেল মাে. হেলাল হােসেন সেলিম ওরফে ফকির বাউল সেলিমকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বাউল সেলিম খুনের পর আত্মগোপনে চলে যায়। সে মূলত ভেবেছিল তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এজন্য সে ছদ্মবেশে জীবন যাপন শুরু করে বলে জানায় র‌্যাব। 

র‌্যাব আরও জানায়, আনুমানিক ৬ মাস পূর্বে জনৈক ব্যক্তি ইউটিউবে প্রচারিত একটি গানের বাউল মডেল সম্পর্কে আমাদের নিকট তথ্য প্রদান করে যে, উক্ত মডেল সম্ভবত বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামী। এরই প্রেক্ষিতে বর্ণিত বিষয়ে র‌্যাব তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে র‌্যাব নিশ্চিত হয়।

আজ বৃহস্পতিবার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগ্যাল মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন খান এ তথ্য জানান।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন খান বলেন, গ্রেফতারকৃত এসব অপরাধের তথ্য প্রমাণ নিশ্চিত করে র‌্যাব-৩ এর অভিযানে গতকাল ১২ জানুয়ারি  রাতে কিশােরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন এলাকা হতে খুনি হেলালকে (৪৫) গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত তার অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছে। গ্রেফতারকৃত জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে ২০০১ সালের বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামী। আরও ২টি হত্যা মামলার আসামী। ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার আসামী বলে জানায় সে নিজেই।

তিনি জানান, এভাবেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হতে শুরু করে এবং এলাকায় দুধর্ষ হেলাল নামে পরিচিতি পায়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ধারালাে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তার বাম হাতে মারাত্মক জখম হয় এবং বাম হাত পঙ্গু হয়। এই ঘটনার পর হতে সে বিভিন্ন নামে যেমনঃ দুধর্ষ হেলাল, হাত লুলা হেলাল হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত হেলাল ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করে এবং এলাকায় মুদি দোকানদারী শুরু করে। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে পড়লে এলাকায় তার কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে ২০১০ সালে দায়েরকৃত চুরির মামলায় ২০১৫ সালে জামিন প্রাপ্তির দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলে সে সু-কৌশলে এলাকা ত্যাগ করে এবং ফেরারি জীবন। যাপন শুরু করে। প্রথমে সে বগুড়া থেকে ট্রেনযােগে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসে। পরবর্তীতে কমলাপুর হতে ট্রেনযােগে সে চট্টগ্রামে চলে যায় এবং সেখানকার আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থান করে। সেখান থেকে ট্রেনযােগে সিলেটের শাহজালাল মাজারে চলে যায়।

কমান্ডার মঈন বলেন, সিলেটে গিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরও কিছুদিন অবস্থান করে। জানা যায় যে, বিভিন্ন সময়ে সে বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করত। সে কিশােরগঞ্জ ভৈরব রেলস্টেশনে নাম-ঠিকানা ও পরিচয় গােপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করে। আনুমানিক ৫ বছর পূর্বে গ্রেফতারকৃত হেলাল নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশাের পলাশ ওরেফে গামছা পলাশ এর একটি গানের শুটিং চলাকালে রেললাইন এর পাশে বাউল গান গাচ্ছিল। তখন শুটিং এর একজন ব্যক্তি তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে বহুল জনপ্রিয় ‘ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল’ শিরােনামের গানের বাউল মডেল হিসেবে তাকে দেখা যায়।
 
তিনি জানান, সে প্রায় ৭ বছর যাবৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারী জীবন যাপন করছে এবং গত প্রায় ৪ বছর যাবৎ কিশােরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে একজন মহিলার সাথে সংসার করে আসছে। বিভিন্ন রেলস্টেশনে সে বাউল গান গেয়ে মানুষের নিকট হতে সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।