বেড়েই চলছে আদা, রসুন, সবজির দাম

এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব থেকে বেশি লাফ দিয়েছে আদা-রসুনের বাজার। বেশ কিছুদিন ধরেই সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী।

বেড়েই চলছে আদা, রসুন, সবজির দাম

প্রথম নিউজ, অনলাইন: নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি নেই সাধারণ মানুষের। চলতি সপ্তাহে ডিম ও পিয়াজের দাম কিছুটা কমলেও অন্যান্য পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তেল ও চিনির মূল্য নির্ধারণ করা হলেও খুচরা বাজারে পূর্বের বর্ধিত দামেই বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব থেকে বেশি লাফ দিয়েছে আদা-রসুনের বাজার। বেশ কিছুদিন ধরেই সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী। প্রায় সব সবজিই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। মাছ-মাংসের দামও লাগামহীন। কাঁচাবাজার কিছুতেই আসছে না সাধারণ মানুষের নাগালে। কয়েক দিনের জন্য কিছুটা কম দামে বিক্রি হলেও আবার তা চলে যায় উচ্চ মূল্যে।

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের আমদানি মূল্য কমে যাওয়ায় গত রোববার নতুন দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ৫ টাকা কমিয়ে খোলা সয়াবিন তেল ১৫৪ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাজার ঘুরে দেখা যায়, কিছু দোকানে ১৭৪ টাকা লিটারে তেল বিক্রি হলেও এলাকার অধিকাংশ খুচরা দোকানে ১৭৮ থেকে ১৮০ টাকায় বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। দাম না কমানোর কারণ কি এমন প্রশ্নের জবাবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে নতুন আসা সয়াবিন তেলের দাম কমেছে। তবে পূর্বের পণ্য বেশি দামেই রয়েছে। 

একইদিনে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারি এসোসিয়েশন থেকে প্রতি কেজি চিনির মূল্য ৫ টাকা কমিয়ে খোলা চিনির দাম ১৩০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। নির্ধারিত দামের তুলনায় যে কোনো ধরনের চিনি ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

পূর্বের সকল রেকর্ড ভেঙে গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে ডজনপ্রতি ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। ডিমের এমন দাম বৃদ্ধির কারণে সোমবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ডিম উৎপাদনকারী, এজেন্ট, ডিলার ও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে বলা হয়, ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি রাখা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায়। সেই হিসাবে প্রতিটি ডিমের মূল্য রাখা হচ্ছে প্রায় ১৪ টাকা। এ ছাড়া স্থানভেদে প্রতি ডজন দেশি ও হাঁসের ডিম ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে পিয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি কাঁচা পিয়াজ ৯০ টাকায় ও আমদানিকৃত পিয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ও  আমদানিকৃত পিয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সকল ধরনের পিয়াজ ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৪০ ও আমদানিকৃত রসুন ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল সবধরনের রসুন ২৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব থেকে বেশি লাফ দিয়েছে আদার দাম। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি আদা ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল খুচরা বাজারে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে আদার দাম। বর্ষার কারণে দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এ আলুর দাম ছিল ৪০ টাকা। বড় আকারের কালো বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। করলার দাম ছুঁয়েছে ১০০ টাকা কেজি। গ্রীষ্মের সবজি ঢ্যাঁড়শ ও পটল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাজারে কাঁচা মরিচ ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং টমেটো ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সস্তার সবজি হিসেবে পরিচিত পেঁপের কেজিও ৪০ থেকে ৬০ টাকা।

মাছের দামও বেড়েছে। বাজারে এক কেজি ছোট ও মাঝারি আকারের পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। দাম বেড়ে তেলাপিয়া মাছের কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। মাঝারি ও বড় মানের তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। অন্যদিকে এক কেজি ওজনের চাষের রুই-কাতলা মাছের দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি। দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের রুই-কাতলার মাছের দাম প্রতি কেজি ৩৭৫ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছ বিক্রেতারা বলেন, গত শুক্রবারের চেয়ে এখন প্রতিটি মাছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।

মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। এ ছাড়া পাকিস্তানি মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। স্থানভেদে কিছুটা কম-বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।