বিশেষজ্ঞদের অভিমত: মোমেনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সফরে যুক্তরাষ্ট্র তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছে-এমন মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ক্রমাগত বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির স্বার্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত: মোমেনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ

প্রথম নিউজ ডেস্ক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সফরে যুক্তরাষ্ট্র তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছে-এমন মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ক্রমাগত বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির স্বার্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। বৈঠকে ব্লিংকেন উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ মিডিয়া ও সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক গভীরতর করতে চেয়েছেন এবং বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার, মিডিয়া ও সুশীল সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। ব্লিংকেন আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের দিকে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। বাংলাদেশে যেন এমন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা হয়, যাতে এই অঞ্চলে এবং বিশ্বে তা ‘মডেল’ নির্বাচন হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের এসব উদ্বেগ নিরসনে অঙ্গীকার করেন। তবে এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ব্লিংকেন এসব বার্তা দেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্যে বিশ্বের সহায়তা কমলেও যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে যা ইতিবাচক। তাছাড়া, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগেও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চমাত্রার অবদান রয়েছে।

এদিকে, ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন। নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় উষ্মা প্রকাশ ছিল তার বক্তব্যে। তবে স্বাধীনতা দিবসে শুভেচ্ছা জানানোর কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।

জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমশের মবিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে খুব ভালো বৈঠক হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে বৈঠকটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে ব্লিংকেন যে বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে গোটা পৃথিবী তাকিয়ে রয়েছে; সেটা তিনি কীভাবে বিশ্বের দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কামনা করে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র যা বলেছে; এবারও তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। এটা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। বৈঠকটি তাই সময় উপযোগী। এটি কোনো সৌজন্য বৈঠক নয়। সম্পূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।’ তিনি মনে করেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্থিতিশীল।’

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শমশের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যের ওপর আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বার্তাকে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সারা বিশ্বের নেতা মনে করে। যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, জাপানও একই কথা বলছে। একেক দেশ একেকভাবে বলার চেষ্টা করছে। আমরা কী করব সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত। তবে বাংলাদেশ ক্রমাগত বৈশ্বিক প্রক্রিয়ার অংশ হচ্ছে। ফলে বিশ্বের মানদণ্ড ও প্রত্যাশার প্রতিও আমাদের যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। আধুনিক রাষ্ট্র গড়তে হলে আধুনিক সমাজ, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়তে হবে। এই সমাজ গড়ে তোলার প্রাথমিক ধাপই হলো নির্বাচন পদ্ধতি। বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি করেছে তা টেকসই করার জন্য সব মৌলিক জায়গাকেও আধুনিক করতে হবে।