Ad0111

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের শীর্ষে ঢাকা

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের শীর্ষে ঢাকা
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ১১ মিনিটে ঢাকার বাতাসের মান সূচক (একিউআই) ২৬৯ রেকর্ড করা হয়েছে। তালিকায় এরপর রয়েছে যথাক্রমে চীনের উহান ও ভারতের দিল্লি। উহান ও দিল্লির একিউআই স্কোর যথাক্রমে ২৫২ ও ২১৪।

সাধারণত ১০০ থেকে ২০০-এর মধ্যে একিউআই সংবেদনশীল মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকলে সংশ্লিষ্ট শহরের পরিবেশ বসবাসের জন্য খারাপ এবং ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকলে বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচিত হয়। 

বাতাসের মান নির্ণয়ের জন্য একিউআই একটি সূচক। সরকারি সংস্থাগুলো একটি নির্দিষ্ট শহরের বায়ু কতটা পরিষ্কার বা দূষিত ও এজন্য মানব স্বাস্থ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বা তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে কিনা তা জানতে সূচকটি ব্যবহার করে থাকে।

বাংলাদেশের সামগ্রিক একিউআই পাঁচটি দূষণকারী মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে কণা পদার্থ (পিএম১০ এবং পিএম২.৫), কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও ওজোন। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণ সমস্যায় জর্জরিত। ঢাকার বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়।

এর আগে, গত বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকার বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) ১৫৯ রেকর্ড করা হয়েছিল। তখন ঢাকাকে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। একিউআইয়ের এ মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত।

২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই) এবং বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণাধীন স্থাপনার ধুলা। সাধারণত জুনের মাঝামাঝিতে বর্ষাকাল শুরু হলে ঢাকার বাতাস সতেজ হতে শুরু করে। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বায়ু নির্মল থাকে। 

শুধু বাংলাদেশেই নয়, বায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ও অক্ষমতার শীর্ষ ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে একটি। দূষিত বাতাসে দীর্ঘদিন শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের ফলে হূদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় বলে বিভিন্ন গবেষণায় স্বীকৃত হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) জানায়, বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে, যা মূলত স্ট্রোক, হূদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার ও তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে হচ্ছে।

সম্প্রতি শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত সর্বশেষ ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’-এর প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে ঢাকায় বসবাসরত মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। আর সারা দেশের মানুষের কমেছে পাঁচ বছর চার মাস।

লাইফ ইনডেক্সের তথ্যমতে, বায়ুদূষণের কারণে সারা বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু কমেছে দুই বছর দুই মাস। স্থায়ীভাবে দূষণ বন্ধ করা গেলে বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু ৭২ থেকে ৭৪ বছর হতো, যা সার্বিক হিসাবে ১৭ বিলিয়ন জীবন-বর্ষ। নির্মল বায়ুর জন্য স্থায়ী কোনো নীতি যেটি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে পারে, সেটা গড় আয়ু বাড়ানোর পাশাপাশি জলবায়ুর ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে গবেষকরা মনে করেন। তারা এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে চীনকে উল্লেখ করে বলেছে, ২০১১ সালের তারা যে নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে তাদের গড় আয়ু বেড়েছে আড়াই বছর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার ভয়ানক ধুলো দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্তৃপক্ষকে একটি বিশেষ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। কেননা প্রতি বছর শীতকালে, বিশেষ করে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বায়ুদূষণের পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। যা নগরবাসীর মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে শহরের বাতাসের গুণমানের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। 

পাশাপাশি নির্মাণাধীন স্থাপনা, ভাঙাচোরা রাস্তা, ইটভাটা এবং অন্যান্য উৎস থেকে দূষিত কণা প্রচুর পরিমাণে বাতাসে মিশে যাওয়ার কারণে এমন হচ্ছে। ধুলো দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য শহরের রাস্তাগুলোয় নিয়মিত পানি ছিটিয়ে দেয়া এবং শহরে অযোগ্য মোটরযানের চলাচল বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে, সব নির্মাণাধীন সাইট আচ্ছাদিত করে রাখার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (আইন) খোন্দকার মো. ফজলুল হক বলেন, বায়ুদূষণে ইটভাটার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু ঢাকা থেকে ইটভাটা কমানোর পরও আমাদের বায়ুদূষণ কমছে না। এর কারণ হলো মোটরযানের ধোঁয়া। তাছাড়া নির্মাণাধীন ভবনের সামনে যে সিমেন্ট ও বালি ফেলে রাখে এবং ট্রাকে করে যে বালি ও সিমেন্ট বহন করা হয়, সেগুলোও বায়ুদূষণে মারাত্মক ভূমিকা রাখে। 

‘এজন্য আমরা আইন করেছি, নির্মাণাধীন ভবনের জন্য ব্যবহূত সিমেন্ট ও বালি ঢেকে রাখতে হবে। ট্রাকে পরিবহনের সময়ও ঢেকে রাখতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমেই বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news