বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ কমেছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

বৃহস্পতিবার ঘোষিত বাজেটে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ কমেছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঘোষিত বাজেটে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি এবং জ্বালানি খাতে ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে  ৪ হাজার ৫০২ কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে।

এদিকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট ও টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির গুরুত্ব বিবেচনায় এর উন্নয়ন ও ব্যবহার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। গ্রিড যুগোপযোগী করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম হিসেবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ছিল মাত্র ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াটে (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ) উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে ৯ হাজার ১৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। এতে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট আওয়ার থেকে বেড়ে ৬০২ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত হয়েছে।

বিগত ১৫ বছরে মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ১৫ হাজার ২৪৬ সার্কিট-কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। মোট বিতরণ লাইনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৩ হাজার কিলোমিটার। বিদ্যুতের বিতরণ সিস্টেম লস ২০০৯ সালের ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ সালে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

তিনি জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনের দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০৪১ সালের মধ্যে পাশের দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভারতের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান বলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে জ্বালানি তেলের মজুতক্ষমতা ৪৫ দিনের পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে ৬০ দিনে উন্নীত করার লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

দেশে নিরাপদ ও পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আমাদের গ্যাসের উৎপাদন ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি দৈনিক প্রায় ১০০০ থেকে ১০৫০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৪ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। উত্তোলিত কয়লা বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাস দেশের মোট বাণিজ্যিক জ্বালানির ৫৪ থেকে ৫৯ শতাংশ পূরণ করে থাকে।

বর্তমানে আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রের সংখ্যা ২৯, যার মধ্যে ২০টি উৎপাদনে রয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে অনশোর এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য বাপেক্স কর্তৃক পেট্রোবাংলার আওতায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভার করার পরিকল্পনা রয়েছে।