বিজ্ঞানীদের পরামর্শ: বাসা থেকে কাজ করাই উত্তম উপায়, পর্যালোচনা করছে বৃটিশ সরকার
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : আসন্ন শীতে করোনা ভাইরাস নিয়ে বৃটিশ সরকারকে বিজ্ঞানীরা নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপের পরামর্শ, অনুরোধ জানিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের তরফ থেকেও বলা হয়েছে, দিনে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু ইংল্যান্ডে বিধিনিষেধ দেয়ার পক্ষে নয় সরকার। এ জন্য সচেতনতা ও বেশি করে টিকা দেয়ার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ সরকারের প্রতি বিজ্ঞানীদের পরামর্শ, শীতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে জনগণকে বাসায় অবস্থান করে কাজ করতে বলুন। এটা করা হলে, ভাইরাসের বিস্তার কমে আসবে। সায়েন্টিফিক এডভাইজরি গ্রুপ ফর ইমার্জেন্সিজ (এসএজিই) বলেছে, দ্রুত প্রয়োগ করার মতো করোনা ভাইরাস বিষয়ক কঠোর বিধিনিষেধ প্রস্তুত রাখা উচিত। তারা আরো বলেছে, কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতি অথবা কাজে যোগ দেয়ার চাপ থেকে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে।
এ অবস্থায় বাসায় থেকে কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, সব রকম পদক্ষেপ পর্যালোচনাধীন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
বরিস জনসন বলেছেন, জনগণকে রক্ষার জন্য যা যা করতে হয় আমরা তাই করবো। কিন্তু বর্তমানে আমরা আক্রান্তের যে সংখ্যা দেখতে পাচ্ছি, তা শরতকাল এবং শীতকালীন পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। শীতকালের জন্য ‘প্লান-বি’ বাস্তবায়নের জন্য যে আহ্বান আসছে বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে, তার বিরোধিতা করছেন মন্ত্রীরা। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে মুখ ঢেকে রাখাকে বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।
বিবিসি আরো বলছে, বৃটেনজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর সংখ্যা ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দশ দিন ধরে নতুন করে প্রতিদিন ৪০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বৃটেনে শুক্রবার একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ হাজার ২৯৮ জন। পজেটিভ রিপোর্ট নিয়ে ২৮ দিনের মধ্যে নতুন করে মারা গেছেন ১৮০ জন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে, এমন ৮২৩৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ৮৯২ জনকে এমন বেডে রাখা হয়েছে, যেখানে ভেন্টিলেশন আছে।
এ অবস্থায় যদি বাসা থেকে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়, তাহলে তা শুধু ওইসব মানুষের জন্য প্রযোজ্য হবে, যারা কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত না হয়ে কাজ করতে সক্ষম। ২০২০ সালের এপ্রিলে প্রথম করোনা মহামারি লকডাউনের সময় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ বাসায় বসে কাজ করেছেন। কর্মজীবীদের মধ্যে অর্ধেকের সামান্য কম অর্থাৎ শতকরা ৪৬.৬ ভাগ মানুষ বাসায় বসে কাজ করেছেন। এ তথ্য পরিসংখ্যান বিষয়ক অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্সের (ওএনএস)।
গত ১৪ই অক্টোবর বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টাদের একটি মিটিং হয়। এ বিষয়টি প্রকাশ পায় শুক্রবার। ওই মিটিংয়ে উপদেষ্টারা সতর্ক করেছেন যে, বিলম্বে বিধিনিষেধ প্রয়োগ করার চেয়ে যদি আগে বা শুরুতে প্রয়োগ করা যায়, তাহলে তাতে কঠোর বিধিনিষেধের প্রয়োজন কমে আসবে। দীর্ঘমেয়াদে হাসপাতালে ভর্তির অগ্রহণযোগ্য পর্যায় এড়ানো যাবে। তারা আরো বলেছিলেন, যেকোনো পদক্ষেপ নেয়া হলে সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে বা যোগাযোগ করতে হবে। স্যার প্যাট্রিক ভ্যালেন্সের নেতৃত্বে উপদেষ্টারা বলেন, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি যে পর্যায়ে এসেছিল, এই শীতে সেই পর্যায়কে অতিক্রম করবে বলে মনে হয় না। তবে তারা সতর্কতায় বলেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস এবং জনগণের আচরণের কারণে কি প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন।
জনগণ বলছে, তারা মুখে মাস্ক পরছে। ওএনএসের সর্বশেষ ডাটা যা বলছে, সে অনুযায়ী বৃটেনে অর্ধেকের বেশি প্রাপ্ত বয়স্ক কর্মজীবী কাজের জন্য বাইরে বেরোন। তাদেরকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হয়। এসএজিই বলেছে, কিছু কিছু স্থানে মুখ ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক করা হলে তা ভাইরাসের বিস্তার দমিয়ে রাখতে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে শীতকালীন অন্য ভাইরাস, যেমন ফ্লু থেকেও তারা রক্ষা পাবেন। বলা হয়েছে, অন্য দেশগুলোর তুলনায় বৃটেনে করোনা ভাইরাসের বিস্তার হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ইউরোপিয়ান দেশগুলোর তুলনায় বর্তমানে বৃটেনে করোনায় আক্রান্ত ও হাসপাতালে ভর্তির হার অনেক বেশি। ইউরোপিয়ান দেশগুলো বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাদের টিকা দেয়ার ক্ষেত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আওতায় এসেছে শিশুরাও। পক্ষান্তরে বৃটেনে করোনা ভাইরাসের নতুন ‘ডেল্টা প্লাস’ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
এসব প্রেক্ষাপটে এনএইচএস কনফেডারেশন এবং বৃটিশ মেডিকেল এসোসিয়েশন সরকারকে ‘প্লান বি’ প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা দাবি তুলেছে ব্যাপকভিত্তিতে মুখে মাস্ক পরতে। বাসা থেকে কাজ করতে। ভ্যাক্সিন পাসপোর্ট ব্যবহার করতে। এসএজিই কমিটির বিশেষজ্ঞরাও দৃশ্যত এর পক্ষেই কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে মুখে মাস্ক পরা এবং ভ্যাক্সিন পাসপোর্ট চালু করার কারণে সেখানে আক্রান্তের হার অনেক কম। এ অবস্থায় বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, সব রকম ব্যবস্থা পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু বেশি থেকে বেশি মানুষকে টিকা দেয়ার দিকে গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়েছে। সরকার ইংল্যান্ডে ‘প্লান বি’ প্রয়োগের চাপের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে।
ওএনএসের সর্বশেষ তথ্যমতে, ১৬ই অক্টোবর সমাপ্ত সপ্তাহে ইংল্যান্ডে প্রতি ৫৫ জন মানুষের মধ্যে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত জানুয়ারির পর যেকোনো সময়ের তুলনায় এই হার বেশি। তবে আক্রান্তের হার কমছে স্কটল্যান্ডে। ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে পরিস্থিতির গ্রাফ অনুভূমিক রয়েছে। ওএনএসের হিসাবে ৭ বছর থেকে ১১ বছর বয়সী স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। ১৬ই অক্টোবর সমাপ্ত সপ্তাহে ওই বয়সী শতকরা ৭.৮ ভাগ শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। সরকারি ডাটা অনুযায়ী, বৃটেনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। এই অসুস্থতা নিয়ে দেশের হাসপাতালগুলোতে অবস্থান করছেন আট হাজারের বেশি মানুষ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: