বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারীকে নিয়ে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে : হানিফ
প্রথম নিউজ, ঢাকা : বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার ঘটনাটি পৃথিবীর অন্যতম চরম নিষ্ঠুর মানবতার লঙ্ঘন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, এত বড় নিষ্ঠুর, মানবতার লঙ্ঘন বিশ্বে আর কোথাও হয়েছে কি না জানা নেই।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ কৃষকলীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, একাত্তরের পরাজিত সেই পরাশক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ভেবেছিল বাংলাদেশে হয়ত আর স্বাধীনচেতা মানুষ বা জনগণের কল্যাণ করার মতো কেউ থাকবে না। বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারীকে নিয়ে তাদের ভয় ছিল। সে কারণে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সকল সদস্যকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সৌভাগ্য মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের কৃপায় সেদিন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। পরে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে এ দেশের মানুষকে নিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তিনি বলেন, এখনো বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারীকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একাত্তরের সেই পরাজিত পরাশক্তি এবং পঁচাত্তরের সেই ঘাতক শক্তি তারা এখনো তৎপর। তারা এখনো বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারীকে ভয় পায় এবং যার কারণে তাদের ষড়যন্ত্র করছে কীভাবে বঙ্গবন্ধুর তাকে সরিয়ে দেওয়া যায়।
পশ্চিমা বিশ্বের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কথায় কথায় তারা মানবাধিকারের কথা বলেন, গণতন্ত্রের দোহাই দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা বলেছি কাদের নিয়ে আপনারা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান, কাদের নিয়ে গণতন্ত্রের কথা বলেন? যারা সন্ত্রাসী। যারা ক্ষমতায় থাকতে সন্ত্রাস করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, নারী নির্যাতন করেছে তারা কখনো মানবতার অধিকারী হতে পারে না। তাদের নিয়ে কখনো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত খুনি জিয়াউর রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা। যে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেছিল, আইন করে বিচার বন্ধ করেছিল সেই দলকে নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান? যারা বঙ্গবন্ধুর আত্ম-স্বীকৃত খুনি তাদের আশ্রয় দিয়েছে তাদের নিয়ে মানবতার কথা বলেন, আইনের শাসনের কথা বলেন কোন হিসেবে?
হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত। আপনারা দেখেছেন কয়েকদিন আগে কানাডার ফেডারেল কোর্ট পঞ্চমবারের মতো বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে রায় দিয়েছে। বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল, বিদেশের আদালত যাদের সন্ত্রাসী দল হিসেবে রায় দিয়েছে তাদের নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান?
তিনি বলেন, এদেশের জনগণ বোঝে আপনাদের (পশ্চিমা দেশ) উদ্দেশ্য কী? আপনাদের লক্ষ্য কী? এই দেশের জনগণ বুঝতে পেরেছে, আপনাদের লক্ষ্য এই দেশ যাতে চিরকাল পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকে। আপনাদের লক্ষ্য এই দেশ যেন কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। আর সেজন্য বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপনাদের ঈর্ষা হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে চরম শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এই বাঙালি কখনো স্বাধীন রাষ্ট্র পেত না, কখনো স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতো না। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু লড়াই-সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। দীর্ঘ ২৩ বছর নিজের জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ করে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। পরে জনগণের ম্যান্ডেড নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন এবং তার নেতৃত্বেই আমরা ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম।
হানিফ বলেন, আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই বাংলাদেশকে যে স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন করেছিলেন সেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। দেশ অন্ধকার নিমজ্জিত হয়েছিল। সেই বাংলাদেশকে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ এবং সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি।