বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন : চোখের সামনে ছাই হাজারো স্বপ্ন

 রমজান মাস । মানুষ সেহরি খেয়ে কেবল ঘুমিয়েছে। রাস্তা ঘাটে তেমন মানুষ নেই। ঘড়িতে সকাল ৬টা বেজে ১০। হঠাৎ হুড়োহুড়ি, দৌড়াদৌড়ি। রাজধানীজুড়ে ফায়ার সার্ভিসের সাইরেন। অগ্নিনির্বাপণের সব গাড়ির অভিন্ন গন্তব্য। মাস না পেরোতেই আবারও গুলিস্তানে দুর্ঘটনা। এবার দেশের অন্যতম বড় পোশাক মার্কেট বঙ্গবাজার আগুনে পুড়ে ছারখার। ৫ হাজার ব্যবসায়ীর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার মালামাল ও নগদ টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিছুই ছিলনা অবশিষ্ট।

বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন : চোখের সামনে ছাই হাজারো স্বপ্ন

প্রথম নিউজ ডেস্ক:  রমজান মাস । মানুষ সেহরি খেয়ে কেবল ঘুমিয়েছে। রাস্তা ঘাটে তেমন মানুষ নেই। ঘড়িতে সকাল ৬টা বেজে ১০। হঠাৎ হুড়োহুড়ি, দৌড়াদৌড়ি। রাজধানীজুড়ে ফায়ার সার্ভিসের সাইরেন। অগ্নিনির্বাপণের সব গাড়ির অভিন্ন গন্তব্য। মাস না পেরোতেই আবারও গুলিস্তানে দুর্ঘটনা। এবার দেশের অন্যতম বড় পোশাক মার্কেট বঙ্গবাজার আগুনে পুড়ে ছারখার। ৫ হাজার ব্যবসায়ীর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার মালামাল ও নগদ টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিছুই ছিলনা অবশিষ্ট। 
গতকাল মঙ্গলবার ভোরে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার মিনিট দুইয়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিস। তবে ঘিঞ্জি ওই মার্কেটের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিনির্বাপণে একসঙ্গে এতগুলো ইউনিটের অংশ নেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।  এর আগেই বঙ্গবাজারসহ আটটি মার্কেটের পাঁচ হাজারের বেশি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পাশাপাশি ঈদ ঘিরে ব্যবসায়ীদের স্বপ্নও পোড়ে অনলে। জীবিকার সম্বল হারিয়ে হাজার হাজার ব্যবসায়ীর অশ্রুসিক্ত রোদনে ভারী হয়ে ওঠে বঙ্গবাজারের আশপাশ এলাকা। আগুন নেভাতে গড়িমসির অভিযোগ করে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষোভ ঝাড়েন। একপর্যায়ে পাশে থাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে হামলা চালান ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। কেউ কেউ শঙ্কা করছেন– এটি স্রেফ দুর্ঘটনা নয়, নাশকতা। এর আগে গত ৭ মার্চ বঙ্গবাজারের কাছেই সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।
অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা কাজ করেছেন। বিমানবাহিনীর দুটি বেল-২১২ ও দুটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার পর্যবেক্ষণ মিশনও আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয়। এ ছাড়া পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, আনসার সেখানে দায়িত্ব পালন করে। আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
গতকাল পর্যন্ত আগুন লাগার কারণ নিয়ে কোনো সংস্থা স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেনি। তদন্ত শেষে তাঁরা এ ব্যাপারে মত দেবেন। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ীর দাবি, বঙ্গবাজারের ১০ ফুট গলি থেকে আগুনের সূত্রপাত।
ব্যবসায়ীরা জানান, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ভেতর চারটি মার্কেট। সেগুলো হলো– বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট। কাঠ ও টিনের তৈরি এই মার্কেটগুলো তিনতলার। সেখানে তিন হাজারের মতো দোকান আছে। এর সবকটি পুড়ে গেছে। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স লাগোয়া সাততলা এনেক্সকো টাওয়ার মার্কেটের একাধিক তলায় আগুন লাগে। এর দক্ষিণ পাশে আছে মহানগর কমপ্লেক্স। দোতলার এই মার্কেটটি টিনের। ওই মার্কেটও ছাই হয়ে গেছে। এ ছাড়া বঙ্গবাজারের উল্টোপাশে চারতলা বঙ্গ ইসলামিয়া ও সাততলা বরিশাল প্লাজা নামে আরও দুটি মার্কেটের একাধিক তলায় আগুন ছড়ায়। সব মিলিয়ে আট মার্কেটের পাঁচ হাজারের বেশি দোকান ও গুদাম ভস্মীভূত হয়। বঙ্গবাজার লাগোয়া পুলিশ সদরদপ্তরের সীমানাপ্রাচীর। পুলিশ সদরদপ্তরের অভ্যন্তরে একটি পাঁচতলা ভবনে আগুন ছড়ায়। ওই ভবনে পুলিশের একটি ‘এক্সচেঞ্জ’ (নিয়ন্ত্রণ কক্ষ) ছাড়াও ব্যারাক ও পুলিশের ‘পল-মার্ট’ রয়েছে। আগুনে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষেরও ক্ষতি হয়েছে। তাই সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম। পরে রাতে তা স্বাভাবিক হয়।

ঈদের আগে নিঃস্ব তাঁরা : চৈত্রের ভোর থেকে দুপুর। তেজি রোদের পাশাপাশি আগুনের লেলিহান শিখা। তখনও পুড়ছিল বঙ্গবাজারসহ আশপাশের আট মার্কেট। শত শত লোকের জটলার মধ্যে ইমন নামের এক তরুণ বঙ্গবাজারের উল্টো পাশেই রাস্তার ওপর বসে বিলাপ করছিলেন। তাঁর পরনের সাদা গেঞ্জি ভিজে চুপচুপ। ইমনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন শহিদুল ও সিরাজ নামের দু’জন। বঙ্গবাজার মার্কেটে দুই দোকানের কোনো মালপত্র বের করতে পারেননি কাপড় ব্যবসায়ী ইমন। ঈদের আগে দোকানে নতুন বিনিয়োগ করেছিলেন। ইমন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘সব গেল আমার! ৬০-৭০ লাখ টাকার মাল ছিল। কী সর্বনাশ হয়ে গেল!’ ভয়াল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইমনের মতো আরও কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর দোকান ও গুদাম ভস্মীভূত হয়েছে। তবে বড় ধরনের কোনো হতাহতের ঘটনা না থাকলেও ব্যবসায়ীদের বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি তাঁরা কীভাবে ঘোচাবেন– তা নিয়ে শঙ্কায় সবাই। ঈদের আগে বেকার হয়ে গেলেন অন্তত ২৫ হাজার দোকান কর্মচারী।

তৈরি পোশাক এবং শাড়ি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা তুঙ্গে থাকে রমজান মাসে। ঈদ ঘিরে পুরো মাস ব্যবসা করেন তাঁরা। এ কারণে বছরের অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি মালপত্র তোলেন দোকানে। অনেকেই করেন ধারদেনা। এবারও একই ধারা ছিল বঙ্গবাজারের দোকানে দোকানে। তবে গতকালের আগুনে নিঃস্ব হয়েছেন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। অগ্নিকাণ্ডের শুরুতে ব্যবসায়ীরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাসায় ছিলেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। আগুনে শেষ সম্বলটুকু নীরবে পুড়তে দেখা ছাড়া তাঁদের কোনো উপায় ছিল না।

বঙ্গবাজারের ভুঁইয়া ফ্যাশনের মালিক মোশাররফ কামাল ভুঁইয়া জানান, রমজানের শুরুতে ২০ লাখ টাকার পোশাক তুলেছিলেন তিনি। আগুনে ছাই হয়েছে সব। এতে শেষ হয়ে গেছে জীবিকার সম্বলটুকু। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আয়ের আর কোনো পথ নেই। ব্যবসাটা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল। আগুনে সব শেষ করে দিয়ে গেল! কীভাবে সংসার চালাব– তা মাথাতেই আসছে না।’

বঙ্গবাজারের নিচতলায় ১০৩ ও ১০৪ নম্বর দোকানের মালিক মেহেদি হাসান রাহাত। জিন্সের প্যান্ট পাইকারি বিক্রি করেন তিনি। এবার ১৫ লাখ টাকার প্যান্ট তুলেছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যবসাই আমার একমাত্র সম্বল ছিল। যা পুঁজি ছিল, সব এখানে। এ ছাড়া এবার পাঁচ লাখ টাকা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করেছিলাম। বেচাকেনা করে ঈদের পর টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। এই টাকা এখন কীভাবে শোধ করব? সংসারই বা চালাব কী করে!’

আগুন নেভার পর পোড়া ভিটের ওপর দাঁড়িয়ে আহাজারি করছিলেন শাহিন মিয়া। ওই মার্কেটে তাঁর ছিল দুটি টেইলার্সের দোকান। বিলাপ করতে করতে শাহিন বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়েই লক্ষ্মীবাজারের বাসা থেকে দ্রুত দোকানে আসি। দেখি দাউদাউ করে সব জ্বলছে। ৩০ বছর ধরে এই মার্কেটে ব্যবসা করছি। এর আগেও কয়েকবার আগুন লেগেছে। তবে এবারের মতো এক আগুনে সব কেড়ে নেয়নি। কালও লাখ লাখ টাকা ছিল। আজ ফকির হয়ে গেলাম! আমার সঙ্গে দুই দোকানের ৮ কর্মচারীরও কপাল পুড়ল।’

জরিনা বেগম রিংকুর দুঃখের গল্পটা ভিন্ন। বঙ্গবাজারের সামনেই ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ির পেছনে ডুকরে কাঁদছিলেন ভোলার বাসিন্দা ওই নারী। জরিনা জানান, ওই মার্কেটে তার দুটি দোকান। ২০২০ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ভাড়া নিয়ে মার্কেটের লোকজন তাঁকে অনেক ভোগান। এর পর মামলা করেন তিনি। মামলায় রায় পাওয়ার আগেই দোকান পুড়ে ছাই হয়েছে। একমাত্র সন্তানকে পড়ালেখার খরচ কীভাবে সামলাবেন, সেই দুশ্চিন্তা জরিনার।

রাজধানীর ডেমরা এলাকার বাসিন্দা সঞ্চয় ও সাধন। অনন্যা শাড়িঘরের মালিক এ দুই ভাই। তাঁদের দুটি দোকান পুড়েছে। সঞ্চয় বলেন, ‘আমাদের দুই দোকানে কোটি টাকার ওপরে মালপত্র ছিল। এর মধ্যে অধিকাংশ মালপত্র ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে আমদানি করা। কোটি টাকার সম্পদ নিমেষেই ছাই হয়ে গেল।’ গতকাল বেচাকেনার পর লাখ দশেকের মতো টাকা দোকানে রেখে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেই টাকা সঙ্গে নিয়ে গেলেও হয়তো কিছুটা বেঁচে যেতেন।

আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ঈদ উপলক্ষে ব্যাংক ঋণ, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে নতুন মাল কেনেন। এখন পাওনাদারদের দেনা শোধ কীভাবে করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তাঁদের।

ফায়ার সার্ভিস দপ্তরে হামলা : সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা বঙ্গবাজারসংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে লাঠিসোটা ও রড-পাইপ নিয়ে হামলা চালান। ইটপাটকেল ছোড়েন ভবনে। ফায়ার সার্ভিসের অভ্যর্থনা কক্ষ, মূল ভবনের কাচ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের ১০টি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইটপাটকেল। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।

এদিকে হামলাকারীদের আঘাতে ফায়ার সার্ভিসের সাত সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হামলার পর অধিদপ্তরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী জানান, সাড়ে ৯টার দিকে কয়েকশ মানুষ অধিদপ্তরের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। যে কর্মীকে সামনে পেয়েছে, তার ওপর হামলা হয়েছে। শিফাত নামের এক গেঞ্জি ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিসের ফটকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স। আগুন নেভাতে এত সময় লাগবে কেন? এ ছাড়া মার্কেটটি এখানে থাকুক, তা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ চায় না। এ নিয়ে আগে থেকে ক্ষোভ জমা ছিল ব্যবসায়ীদের মধ্যে। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার জাফর হোসেন বলেন, হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ ৩০ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। কেন, কী কারণে হামলা হয়েছে– সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

ঝুঁকিপূর্ণ ছিল মার্কেট : বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। ২০১৯ সালে ফায়ার সার্ভিস সেটিকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে ব্যানার টানিয়ে দেয়। এসব তথ্য জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে ১০ বার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে যা যা করা সম্ভব ছিল, তা করা হয়েছে। তবু তাঁরা সেখানে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।

আগুন নির্বাপণে দেরির কারণ ব্যাখ্যা করে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ‘এখানে অনেক বাতাস। এ জন্য অনেক সময় লাগছে। বাতাসে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আগুন চলে যায়। এ ছাড়া পানির স্বল্পতাও ছিল।’

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, উৎসুক জনতার কারণে কাজ করতে সমস্যা হয়েছে। তিনি তাঁর নিজের করা একটি ভিডিও গণমাধ্যমকর্মীদের দেখিয়ে বলেন, ‘কোন জায়গা দিয়ে আমরা ফায়ার সার্ভিস কাজ করব? কোথায়, কীভাবে ফায়ার সার্ভিসের লোক কাজ করবেন? আমরা তো আপনাদের জন্যই জীবন দিচ্ছি। সেনাবাহিনী পানির বাউজার এনে এবং ওয়াসাও পানির বিষয়ে সহায়তা করেছে। ফায়ার সার্ভিস যখন অগ্নিনির্বাপণের চেষ্টা করে, তখন বঙ্গবাজারের উল্টো পাশে বাহিনীটির সদরদপ্তরে হামলা করে কিছু মানুষ। আমি খুবই মর্মাহত। আপনাদের জন্য আমরা জীবন দিই, সেই আপনারা আমাদের ওপর হামলা করলেন।’

মালপত্র লুটের অভিযোগ : বঙ্গবাজার মার্কেটসংলগ্ন এনেক্সকো টাওয়ার, মহানগর শপিং কমপ্লেক্স ও বঙ্গ ইসলামিয়া সুপার মার্কেটে আগুন একটু দেরিতে লাগে। যে কারণে এসব মার্কেটের কিছু ব্যবসায়ী তাঁদের মালপত্র সরিয়ে নিতে পেরেছিলেন। এসব পণ্য সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের সামনের ফুটপাতসহ আশপাশে জড়ো করে রাখেন ব্যবসায়ীরা। অনেকেই অভিযোগ করেন, ফুটপাতে রাখা কিছু পণ্য চুরি হয়ে গেছে। মাহবুব নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, জিন্সের প্যান্টভর্তি তাঁর তিনটি বস্তা চুরি হয়ে গেছে। এমন একাধিক ব্যবসায়ী তাঁদের পণ্য চুরির অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া মার্কেট থেকে পণ্য লুটপাটের অভিযোগ করা হয়েছে।

উৎসুক জনতা : দেশের যে কোনো এলাকায় বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেখানে অহেতুক ভিড় করেন উৎসুক জনতা। এর ব্যত্যয় হয়নি বঙ্গবাজারেও। দিনভর আশপাশ এলাকায় হাজার হাজার মানুষ জটলা পাকিয়ে অগ্নিনির্বাপণের কাজ ব্যাহত করেছেন– এমন অভিযোগ ফায়ার সার্ভিসের। অনেকেই নিজের মোবাইল ফোনে ভিডিও এবং লাইভ করতে থাকেন। পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা উৎসুক জনতাকে সরানোর চেষ্টা করেন। মাইকে বারবার তাঁদের সরে যেতে বলা হয়। কেউ কেউ মত দিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত দুর্ঘটনাস্থলে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া, যাতে ক্রাইম সিন হিসেবে তা কেউ পেরোতে না পারে।

৭০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি : আগুনে আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে প্রাথমিকভাবে থোক বরাদ্দ হিসেবে ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। এখানে ছোট ছোট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দোকান করেন। সামনে ঈদ। সবাই ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনার পণ্য তুলেছেন দোকানে। এমন সময় এই অগ্নিকাণ্ড বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে এনেছে। এই ব্যবসায়ীদের পুঁজি বলতে দোকানের মালপত্রই।

আইজিপির সংবাদ সম্মেলন : পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমরাও রাজারবাগ থেকে পাঁচটি ওয়াটার ক্যানন এনে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কাজ শুরু করি। আমাদের ওয়াটার রিজার্ভার থেকে প্রায় দুই লাখ লিটার পানি সাপ্লাই দিয়েছি, প্রায় দুই হাজার ফোর্স এই এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছে।

ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরে হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কী অবস্থা, এখানে হাজার হাজার মানুষ। হামলার খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গে গিয়েছি, এর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। পরে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাশকতার কোনো ঘটনা থাকলে কমিটির তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে।’

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে আহত ২৪ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এ ছাড়া চারজন ঢামেকে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে পাঁচজন দোকানকর্মী রয়েছেন।