বগুড়ায় পুলিশ হেফাজতে আইনজীবী সহকারীর মৃত্যু
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় বগুড়ার সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে হাবিবের মৃত্যু হয়।
প্রথম নিউজ, বগুড়া: বগুড়ায় ডিবি পুলিশের হেফাজতে হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০) নামে এক আইনজীবী সহকারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতের মামা বগুড়া জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মঞ্জুরুল হক দাবি করেন, পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে টর্চার করে মেরে ফেলেছে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় বগুড়ার সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে হাবিবের মৃত্যু হয়। এর আগে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় বগুড়া জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ তাকে হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আটক করে নিয়ে যায়।
নিহত হাবিব শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের জোড়া দামারপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বাবলুর ছেলে। তিনি বগুড়া জজ আদালতে সিনিয়র আইনজীবী মঞ্জুরুল হকের ভাগ্নে এবং তার সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। হাবিবের স্বজন এবং সহকর্মীরা দাবি করছেন, ডিবি পুলিশের নির্যাতনে হাবিবের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়নি। মৃত অবস্থাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, হাবিবকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পায়নি পুলিশ। ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পর পরই হাবিব বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, ডিবি পুলিশ হাবিবকে সন্দেহমূলক আটক করে নিয়ে তার ওপর নির্যাতন করে। এতে তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতের মামা সিনিয়র আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, আমরা ডিবি অফিসে যাই। ভাগ্নের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আমাদের দেখা করতে দেয়া হয় না। এরপর এশা’র নামাজের পর লোকমুখে জানতে পারি আমার ভাগ্নে মারা গেছে। বগুড়ার সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আতিকুর রহমান বলেন, ইমার্জেন্সি অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমাকে বুকে ব্যথার কথা জানানো হয়। আমি অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়েছিলাম। এরপর তাকে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এর কিছুক্ষণ পর রোগী মারা যায়।
নিহত হাবিবের স্বজন এবং সহকর্মীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতার বলেন, তাকে কোনো টর্চার করা হয়নি। তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এমন সুযোগও তো পাওয়া যায়নি। এরমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে ডিবি সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ওই ঘটনায় গতকাল বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) পরিদর্শক-১ জিএম শামসুন নূর। তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতার বলেন, কমিটিকে আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।