Ad0111

খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি না দিলে বিএনপির এমপিদের পদত্যাগের হুমকি

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে

খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি না দিলে বিএনপির এমপিদের পদত্যাগের হুমকি
বিএনপির এমপিদের মানববন্ধন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে

প্রথম নিউজ, ঢাকা: প্রেসিডেন্টকে তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। অবিলম্বে বিদেশে সুচিকিৎসার অনুমতি না দিলে সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন তারা। রোববার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এক মানববন্ধনে এ হুমকি দেন তারা। বগুড়া-৪ আসনের সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, আমরা আজকে একটি অবৈধ সরকারের কাছে আবেদন করছি। কারণ কোন উপায় তো নেই। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। যেখানে চিকিৎসক পরিবার এবং দলের আবেদনকে উপেক্ষা করছে সরকার। সরকার তাদের নিজের মতো চলছে। আইনমন্ত্রী পাগলের প্রলাপ বকছেন।

৪০১ ধারা নিয়ে তিনি পজিটিভ নেগেটিভ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জেলখানায় ঢুকে বেগম জিয়াকে আবার আবেদন করতে হবে। খালেদা জিয়ার বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা করে তাকে মুক্তি দেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বেগম জিয়া যেখানে আছেন সেখানেই সাবজেল ঘোষণা করা হোক। সেখান থেকেই তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশ নেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। সরকার চাইলে তাকে ২৫ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে পারে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশ থেকে ডাক্তার আনার অনুমতি তিনি দিতে পারেন। পৃথিবীতে চিকিৎসা ব্যবস্থা তো সহজ হয়ে গেছে। আমাদের ডাক্তাররা যা বলছেন ইংল্যান্ডের ডাক্তাররাও তাই বলছেন। সমস্যা তো হলো চিকিৎসা। দরকার লজিস্টিকস, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট। ম্যাডামের যে অবস্থা এদেশে তার ট্রিটমেন্ট নেই। তার যে সার্জারি লাগবে সেই সার্জারি ইকুইপমেন্ট কোথায়? আইনমন্ত্রীকে বলতে চাই, এর মধ্যে একটা কাজ করেন আপনি জাহাজে করে একটি হাসপাতাল এ দেশে নিয়ে আসুন।

এই সাংসদ বলেন, কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার বক্তব্য শুনে আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা করি না নেত্রী বেগম জিয়াকে তিনি মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে চাই আপনি আপনার নিজস্ব ক্ষমতাবলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। কারণ আপনাকে সেই সাংবিধানিক ক্ষমতা দেয়া আছে।

চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ হারুনুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি জায়গায় উপনীত হয়েছে যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন একেবারে অনুপস্থিত। সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন এর জন্য আমার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই, প্রতিবাদ করার ভাষা নাই। একথা কি সুষ্ঠুভাবে প্রমাণ করে না প্রধানমন্ত্রীর উপরে নির্ভর করছে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বাইরে সুযোগ পাওয়া না পাওয়া।

তিনি বলেন, একজন আইনমন্ত্রী সিনিয়র আইনজীবী। তিনি আইনের যে ব্যাখ্যা দেন সেটা এদেশের সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে না। হঠাৎ করে তিনি বলছেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার সুযোগ দিবেন। আমরা তো বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার জন্য দাবি জানাইনি।
হারুনুর রশিদ বলেন, ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই সরকার এযাবতকালে ৩০ জনের অধিক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে সাজা মওকুফ করেছে। বেআইনিভাবে আইনের বরখেলাপ করে। খুনের আসামি, ইয়াবা সম্রাট, মানবপাচারকারী, টাকা পাচারকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপরে অন্যায়ভাবে সরকার জুলুম-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।

তিনি বলেন, আমার চাই অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। এর ব্যতিক্রম আমরা অন্য কোন কিছুই মানবো না। এখন আমি আহ্বান জানাবো বেগম খালেদা জিয়ার যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় আপনারা আমাদেরকে বাধ্য করবেন না সংসদ থেকে বেরিয়ে যেতে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ও বিএনপির বিরোধীদলীয় হুইপ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আপনারা জানেন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হয়েছে। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি যখন কারাগারে যান তিনি পায়ে হেঁটে গেছেন। কিন্তু গত তিন বছরে তার কি হাল হয়েছে এটা দেশের মানুষ জানে। এর দায় এই সরকারকে নিতে হবে। কারণ গত তিন বছরে তিনি দল, পরিবার এবং নিজের হেফাজতের ছিলেন না। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের হেফাজতে।

তিনি বলেন, আমরা দেখি সামান্য একটু হাঁচি, কাশি, সর্দি চিকিৎসার এমনকি রুটিন চেকআপের জন্য রাষ্ট্রপতি জার্মানি, ইংল্যান্ডে যান। কিন্তু আমাদের সরকার দলীয় এমপিরা আমাদের শোনান উনার বেস্ট চিকিৎসা নাকি বাংলাদেশে হচ্ছে। বাংলাদেশে যদি সেরা চিকিৎসাটা হতো তাহলে কেন আমরা দেখি অতি সাধারণ মানুষও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চিকিৎসা জন্য ছুটে যাচ্ছে।

বিএনপির এই নারী এমপি বলেন, গত তিন বছরে বেগম জিয়ার উপর নিপীড়ন, নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাকে কোন প্রকার ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়নি। যদি তিনি তার অসুখের চিকিৎসা করাতে পারতেন, সরকার যদি সেই সুযোগ দিতো তাহলে আজকে তার এই অবস্থা হয় না। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ৪০১ ধারায় সরকার যে কোন ব্যক্তিকে সাজাপ্রাপ্ত বা সাজাপ্রাপ্ত নয় তাদেরকে শর্তযুক্ত বা শর্তহীনভাবে দ- মওকুফ করতে পারে কিংবা দন্ড স্থগিত করতে পারে।

এ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। সরকার দফায় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে। কিন্তু এখন আইনমন্ত্রী বলছেন, ওনাকে কোনভাবে তার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নাই। এটা একেবারেই ডাহা মিথ্যা কথা এবং আইনের অপব্যাখ্যা। আইনের ভুল ব্যাখ্যা। আমি একজন আইনজীবী হিসেবে বলতে চাই, ৪০১ এর ক্ষমতাবলে সরকার যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”

রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে যদি আইনের শাসন থাকতো, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকতো, দেশে সুশাসন থাকতো তাহলে কোর নির্বাহী আদেশের প্রয়োজন হতো না। বহু আগেই বেগম খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হতেন। জামিনে মুক্ত হতে যে শর্তগুলো প্রয়োজন- সামাজিক অবস্থা, তার বয়স, তার শারীরিক অবস্থা এর যেকোনো একটি বিবেচনায় তিনি জামিন লাভের যোগ্য। আমরা যেটা দেখলাম এই ফ্যাসিস্ট সরকার তার জামিন দেয়া থাক দুরের কথা একটার পর একটা মামলা বাড়িয়ে চলছে। আজকে আমি সরকারকে আহ্বান জানাব অবিলম্বে ৪০১ ধারায় বেগম জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হোক। কারণ সরকার জানে তারা চাইলেই এ ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন, চাপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news