দীপাবলি উৎসব বর্জনের ডাক সনাতন ধর্মাবলম্বীদের
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে ধর্মীয় অবমাননার জেরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হামলা
প্রথম নিউজ, ঢাকা: কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে ধর্মীয় অবমাননার জেরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।রংপুরের পীরগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরে হামলা হয়।এসব ঘটনায় বহু মামলা ও আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব ঘটনার মধ্যে শুধু কুমিল্লার ঘটনায়ই ১০২ মামলা ও আসামি করা হয়েছে ২০ হাজার ৬১৯ জনকে। আর গত শুক্রবার পর্যন্ত ৫৮৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কুমিল্লার ঘটনার জেরে বেশি গুজব আর অপপ্রচার চালানো হয় রংপুরের পীরগঞ্জে জেলেপল্লিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালানোর প্রস্তুতির আগে। সেখানে নেতৃত্ব দেওয়া সৈকত মণ্ডল (২৪) নামের এক শিক্ষার্থী এবং তার সহযোগী রবিউল ইসলামকে (৩৬) গত ২২ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়েছে। তার আগের দিন কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন রাখা ব্যক্তি ইকবাল হোসেনকে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। পেশায় রাজমিস্ত্রি ইকবাল কুমিল্লার সুজানগর এলাকার নূর আহমেদ আলমের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাত ১০টার পর সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যেই ইকবাল হোসেন (৩৫) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইকবাল এখন সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছে।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের আইনানুগ ব্যবস্থা চলার মধ্যেই আগামী ৪ নভেম্বর শ্যামাপূজার দীপাবলি উৎসব বর্জনের ডাক দিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সারা দেশে প্রতিমা ভাঙচুর, পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এই উৎসব বর্জনের ডাক দেন তারা।সেদিন সন্ধ্যায় দেশের বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপগুলোতে কালো কাপড় পরে প্রতিবাদ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক গণঅনশন থেকে দীপাবলি উৎসব বর্জনের ডাক দেওয়া হয়।
এর আগে সকাল থেকে শাহবাগে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং সারা দেশে প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে গণঅনশন, গণঅবস্থান এবং বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বানে ও আয়োজনে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
শাহবাগের কর্মসূচির শেষের দিকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ আগামী ৪ নভেম্বর শ্যামাপূজার দীপাবলি উৎসব বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আগামী ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মন্দির, পূজামণ্ডপে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাবিরোধী প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করা হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে। এ হামলার বিচারের দাবিতে গণঅনশনের মূল দাবি হলো- এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সরকার থাকা সত্ত্বেও এর আগে রামু, নাসিরনগর, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হয়েছে। এসব হামলার প্রতিকারে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি।সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। পরিকল্পিত না হলে পরপর বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের হামলা হতে পারে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার বলেন, পূজাকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হলো। এর দায় রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সরকার এড়াতে পারে না। প্রশাসন এত নীরব কেন? দেশে অশান্তি করার জন্য অপশক্তি এসব করছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার ক্ষমতায়, সেখানে এমন ঘটনা কেন? সরকার শুধু জিরো টলারেন্সের কথা মুখে বলে, এটা মুখে বললেই হবে না। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক বলেন, দেশের সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো পরিকল্পিত ঘটনা। দেশকে আফগানিস্তান বানানোর অসৎ উদ্দেশ্য চলছে। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। তিনি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলিম ঐক্য পরিষদ গঠনের আহ্বান জানান।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: