‘পুলিশই লাঠিচার্জ করল, আবার তারাই নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিলো’

রংপুরে সরকারি কাজে বাধা, হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে এক সপ্তাহে বিএনপির অন্তত ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

‘পুলিশই লাঠিচার্জ করল, আবার তারাই নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিলো’

প্রথম নিউজ, রংপুর: রংপুরে সরকারি কাজে বাধা, হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে এক সপ্তাহে বিএনপির অন্তত ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করাসহ পুলিশ বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির। তবে পুলিশের দাবি, নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২২ নভেম্বর রংপুর মহানগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ঘের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পুলিশ ও বিএনপির অন্তত ২২ জন আহত হন। ওই দিনের ঘটনায় পুলিশ মামলা করে। এতে জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান লাকুসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখে করে ২০০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা নিশ্চিত করেছেন।

রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু বলেন, গত ২২ নভেম্বর পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাপলা চত্বর থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গ্রান্ড হোটেল মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ সদস্যরা আমাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় হাতাহাতি শুরু হলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ সদস্যরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে আমাদের অন্তত ১৬ থেকে ১৭ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, পুলিশের হাতে অস্ত্র, তারাই আমাদের লাঠিচার্জ করলো। এখন তারাই আবার আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিলো। ওই মামলায় আমাদের ৮ থেকে ১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিদিন রাত হলেই পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি সৃষ্টি করাসহ হয়রানি করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে আমাদের নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া।

নাজমুল আলমের দাবি, গেল এক সপ্তাহে জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক শ্রী বিপ্লব রায়, সাহিত্য সম্পাদক ওয়াহেদ মুরাদ নান্নু, সাবেক সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন আলমগীর, মাহিগঞ্জ থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সফিউল ইসলাম সবুজ, সদস্য সচিব জুনায়েদ চৌধুরীসহ আর কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে ২২ তারিখের ঘটনায় পুলিশের মামলায় যাদের নাম উল্লেখ রয়েছে তারা সবাই হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন।  

রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজছে। বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করছেন তারা। এখন পর্যন্ত আমাদের ১০ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। আমাদের উপর যতই বাধা আসুক, আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ২২ নভেম্বর আমার এক আত্মীয়ের হার্ট অপারেশন ও ব্যবসার কাজে আমি ঢাকায় ছিলাম। কিন্তু আমাকেসহ ১৮ জনকে এবং অজ্ঞাত আরও ২০০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিত মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়েছে পুলিশ। আমরা হাইকোর্ট থেকে অনেক জামিন নিয়েছি। কিন্তু অজ্ঞাত আসামিদের পুলিশ হয়রানি করছে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে, পরিবারের লোকজন ভয়ে আছেন। এভাবেই আমাদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার হরণ করে সরকার বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হোসেন আলী বলেন, আমরা কাউকে হয়রানি করছি না। গত ২২ নভেম্বরের ঘটনায় বিএনপির যাদের নামে মামলা রয়েছে, তাদেরকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী বলেন, নিয়মিত মামলার আসামি ধরতে পুলিশ অভিযান চালাবে এটাই স্বাভাবিক। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাদেরকে পুলিশ খুঁজবে। আমরা কাউকে হয়রানি করছি না। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom