প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হাইক্লাস মিথ্যাচারের বহিঃপ্রকাশ: রিজভী

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হাইক্লাস মিথ্যাচারের বহিঃপ্রকাশ: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক:গত পরশু জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হাইক্লাস মিথ্যাচারের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গত পরশু জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেছেন- ‘বারবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই দেশের সেবা করতে পেরেছি।’ প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য হাইক্লাস মিথ্যাচারের বহিঃপ্রকাশ, যা শুনে মানুষের হাসি—কান্না দুটোই পেতে পারে।

মঙ্গলবার (২৭ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘নিশিরাতের ভোটের খেতাব পাওয়া প্রধানমন্ত্রী ভোটাধিকার হরণ করে সুষ্ঠু নির্বাচনকে লাশ বানিয়ে সেই লাশের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজিয়ে র‌্যাব-পুলিশের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি কিনা বলেন, ‘বারবার তাদের নির্বাচিত করা হয়’। সত্যি প্রধানমন্ত্রীর রসিকতার জুড়ি মেলা ভার।’ 
রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে দেশকে সেবা করেছেন তাতো দেখাই যাচ্ছে। এক বছর সুইস ব্যাংক সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সেই সেবার আলামত স্পষ্ট হয়। ১৪ বছরের উন্নয়নের জিকিরে আওয়ামী নেতাদের স্বর্গসুখের ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ করতেই যে ঐ টাকা সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল সেই টাকাটি এক বছরে চুপিসারে সরিয়ে নিয়েছে যারা তাদেরই সেবা করা হয়েছে। সেবা করা হয়েছে ব্যাংক, বীমা আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটেরাদের। সেবাতে মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল সর্বগ্রাসী দুর্নীতি আর বিদেশে টাকা পাচারে।’
এ প্রসঙ্গে রিজভী আরও বলেন, ‘সেবা করা হয়েছে অসহনীয় লোডশেডিংয়ের জন্য দায়ী এবং ভতুর্কীর নামে জনগণের টাকা লোপাটকারী সামিট গ্রুপ, বেঙ্মিকো গ্রুপসহ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ স্থাপনের মালিকদের। সেবা করা হয়েছে খাদ্যপণ্য সিন্ডিকেটকারীদের। সেবা করা হয়েছে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডার, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, ভর্তি বানিজ্য ও সিট বানিজ্যকারীদের। সেবা করা হয়েছে উচ্চমূল্য দিয়ে করোনার টিকা আমদানী করার জন্য সরকারের প্রিয়ভাজনদের। স্বাস্থ্য খাতে মহালুটপাটকারীদের। সেবা করা হয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের যিনি গণতন্ত্র নিজ হাতে হত্যা করেছেন। সেবা করা হয়েছে তাদের যারা গুম, অপহরণ ও ক্রসফায়ারে হত্যার অমানবিক নিষ্ঠুরতার সীমাহীন আবর্তের মধ্যে দেশকে ঠেলে দিতে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে সেইসব র‌্যাব-পুলিশের সদস্য ও সহিংস সন্ত্রাসীদের। সেবা করা হচ্ছে তাদের যারা বিরোধী দল ও ভিন্নমতের মানুষদের রিমান্ডের নামে কখনো বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতন, কখনো ডিজিটাল আইনে গ্রেফতার করে দিনের পর দিন কারাগারে নিক্ষেপ করতে যারা দায়ী সেইসব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের।’
বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় জামিন লাভের পরও ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আজিজুর রহমান মুসাব্বিরকে আবারও কয়েকদিন আগে জেলগেট থেকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ পর্যন্ত জেলগেট থেকে তাকে ছয়বার গ্রেফতার করা হলো। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার নামে আইসিটি মামলা দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার পর রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো অবৈধ সরকারের নিষ্ঠুরতারই চরম বহিঃপ্রকাশ। রিমান্ডে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও অশালীন আচরণ করছে পুলিশ। নিকটজনদের কাউকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেও দেওয়া হচ্ছে না। আজিজুর রহমান মুসাব্বির-এর বিরুদ্ধে আইসিটি মামলা দায়ের এবং জেলগেট থেকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবী করছি।’
বিএনপি পুলিশ প্রশাসনের তালিকা তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া হচ্ছে গণমাধ্যমে এমন খবরের বিরোধিতা করে রিজভী বলেন, এজন্য আমাদের তথ্য সংগ্রহ কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা এ সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করছেন। মূলত যারা আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছেন। অতি উৎসাহী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এদের তালিকা হচ্ছে। এটা সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানিয়ে দিচ্ছি।
এসময় তিনি ঈদুল আযহার আগেই সাইফুল আলম নীরব, রফিকুল আলম মজনু, মোনায়েম মুন্না, গোলাম মাওলা শাহীন, এস এম জাহাঙ্গীর, হারুনুর রশিদ ও ইউসুফ বিন কালুসহ কারান্তরীণ নেতৃবৃন্দের অবিলম্বে মুক্তি দাবী করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা.এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য (দফতরে সংযুক্ত) আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।