প্রতিদিনই বিএনপি নেতাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে: রিজভী

আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিদিনই বিএনপি নেতাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে: রিজভী
বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আতঙ্কিত ও শিহরিত জনপদে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এখন প্রতিদিনই আমাদের নেতাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তুলে নিয়ে কয়েকদিন গুম রাখার পর গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। জামিন বাতিল করে জেলে পুরছে। 

আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত ১৪ বছর ধরে নির্বিচারে গ্রেফতার, ব্যাপকভাবে নির্যাতন, নারকীয় অত্যাচার, নারী নির্যাতন, বেছে বেছে খুনের মাধ্যমে গায়ের জোরে বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতার যে ময়ুর সিংহাসন পেতেছে তা এখন উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ক্রুদ্ধ জনগণ ক্ষোভে-দ্রোহে ফুঁসে উঠেছে। জনগণ পতনের ক্ষণ গনণা করছে। লুটপাট করা অর্থ-বিত্তে আওয়ামী নেতা-মন্ত্রীদের পরম সুখের জীবন-যাপন ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কায় তারাত অস্থির উ™£ান্ত ও বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা পরিমিতবোধ ও স্বাভাবিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছে।
ফলে অতীতের ভোট ডাকাতির তিনটি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে যেসব ভয়ানক পন্থা অবলম্বন করেছিল, এখন সেই একই পথে নেমেছে আওয়ামী মাফিয়া সরকার। দমন-পীড়ণ, মধ্যরাতে তুলে নিয়ে যাওয়া, গুম-খুন-জঙ্গি নাটক শুরু করেছে আবারো। গণতন্ত্রের অস্তিত্বকে নিশ্চিহ্ন করে দাম্ভিকতা ও মিথ্যার বেসাতির মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছে তারা। পাশাপাশি বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়ের, পাইকারি হারে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নির্যাতন চালিয়ে দেশটাকে নরকে পরিণত করেছে সরকার। জামিন বাতিল করে গতকাল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন-কে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা যথাক্রমে আলী আকবর চুন্নু ও রফিক হাওলাদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিন দিন আগে গ্রেফতার করা হয়েছে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদকে। গ্রেফতার করা হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক সাবেক কমিশনার হারুন উর রশীদসহ অনেক নেতাকর্মীকে। এছাড়াও, সিলেট জেলায় গত ৬ নভেম্বর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০ জনের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি বলেন,   আতঙ্কিত ও শিহরিত জনপদে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এখন প্রতিদিনই আমাদের নেতাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তুলে নিয়ে কয়েকদিন গুম রাখার পর গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। জামিন বাতিল করে জেলে পুরছে আমাদের নেতাদের। সারাদেশে প্রতিদিন বিএনপির নেতাদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে আওয়ামী পুলিশ। বিএনপি নেতাদের বাড়িতে অভিযানকালে হয়রানি, দুর্ব্যবহার করছে। নারীদের অপদস্ত করছে। ১২ বছর আগে মারা যাওয়া ফরিদপুরের সাবেক কমিশনার ও শহর বিএনপির সভাপতি প্রয়াত বাচ্চু মিয়া আলীর বাড়িতে মঙ্গলবার মধ্যরাত ১২ টায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। মুন্সিগঞ্জ জেলায় বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য যিনি এক বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছেন তার বাড়ীতে সাদা পোশাকধারী লোকজন হানা দিয়েছে। তাদের বাড়ীতে অভিযানকালে নারীদের সঙ্গে ন্যাক্কারজনক আচরণ করেছে পুলিশ। ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে গণগ্রেফতার করতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। নগরকান্দায় সাতজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ফরিদপুরে অন্তত ছয়জন নেতার বাড়িতে অভিযানের নামে হয়রানি করেছে পুলিশ। বিএনপির নেতা মিজানুর রহমানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁর ভাইকে আটক করেছে। বরিশালের গণসমাবেশ শেষে ভোলার চরফ্যাশনে নেতাকর্মীরা নিজ এলাকায় ফেরার পথে আওয়ামী দুস্কৃতিকারিরা পথে পথে আক্রমণ করে। চর মানিকা, হাজারীগঞ্জ, মাদ্রাজ, এওয়াজপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে মারাত্মক আহত করে। দুস্কৃতিকারিরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ীঘর-দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট ও বন্ধ করে দিয়েছে। সন্ত্রাসীদের হামলায় যুবদল নেতা মোঃ জামাল, রিয়াজ তালুকদার ও মামুন, ছাত্রদল নেতা মোঃ আনিস, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোঃ সুজন ও মুনিরসহ অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়। এলাকায় এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে, নেতাকর্মীরা এলাকাছাড়া।
প্রতিটি বিভাগীয় গণসমাবেশকে বানচাল করার জন্য যানবাহন-পরিবহন বন্ধ করে দিচ্ছে। পথে পথে হামলা করছে। গ্রেফতার মামলা করছে। তাতে কি শেখ হাসিনা রুখতে পারবে এই জনতার সাগরে ওঠা টালমাটাল জোয়ার। বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের অনুকুল সমাজভূমি বলে কিছু নেই। এখানে ফ্যাসিবাদ বেশিদিন টিকতে পারবে না। বাংলাদেশের মসনদ শেখ হাসিনার পৈতৃক সম্পত্তি নয়। সুতরাং তাঁর পছন্দের বাড়ী গণভবন চিরস্থায়ী নিবাস হবে না। হুমকি-ধমকি হামলা মামলা গ্রেফতার গুম-খুনে এবার আর কাজ হবে না। আপনারা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন যত দ্রুত অনুভব করবেন ততই আপনাদের মঙ্গল। আপনাদের সময় শেষ। দ্রুত সংসদ ভেঙ্গে দিন, অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সরে যান।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দুই মাস আগেও নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব খোশ মেজাজেই ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বিএনপি যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে চায়, বাধা দেব না। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন হলে চা খাওয়াবো। তারপর গত ১৪ আগস্ট বললেন, আমাদের বিরোধী দল একটা সুযোগ পাচ্ছে, তারা আন্দোলন করবে, করুক। আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি খবরদার যারা আন্দোলন করছে তাদের কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয় বা ডিষ্টার্ব করা না হয়। তার এই সুবচন নির্বাসনে গেলো কদিন পরেই। এই অমিয় বচন উবে গেলো। যখন তিনি দেখলেন জনগণ রাজপথে নেমেছে, লাখে লাখে-বেশুমার। চোখে সরষে ফুল দেখতে শুরু করলেন তিনি। তাঁর প্রকৃত খোলস উন্মোচিত হয়ে গেলো। হিংস্র হিংসাত্মক চেহারা আবারো আত্মপ্রকাশ হলো। শেখ হাসিনার নির্দেশে গুলী করে হত্যা করা হলো আমাদের পাঁচ নেতাকে। এখন দমন-নিপীড়ণ, জুলুম, নির্যাতন, গুম, মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সরকারের পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেছে। শেখ হাসিনা প্রথমে হুংকার দিলেন শাপলা চত্বরে হেফাজতের মত গনহত্যার মাধ্যমে বিএনপিকে দমন করবেন। কিন্ত দেখলো জনগণ তার এই হুংকার পাত্তা দিচ্ছে না। তারপর বললেন, বাড়াবাড়ি করলে বেগম খালেদা জিয়াকে আবারো জেলে ঢুকাবেন। এতে বিএনপি পরোয়া করছে না দেখে এখন হুংকার দিচ্ছেন বিএনপি নেতাদের রেহাই দিবেন না। তবে এখন সরকারকে বুঝতে হবে অতীতের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবারের আন্দোলনের মাত্রা হবে ভিন্ন। এবারের আন্দোলনে নতুন ডাইমেনশন তৈরী হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাংগঠনিক দক্ষতা ও অসামান্য নেতৃত্বের কারনে সারাদেশে একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসীবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে জনগণের স্বতঃফূর্ত অংশ গ্রহণে আন্দোলন এখন গণমুখী। জনতার হাতে স্টীয়ারিং। মাফিয়া সরকার ও তাদের পোষ্যরা কোনক্রমেই রুখতে পারবে না এই গনজোয়ার,। জনগণের লক্ষ্য বিজয়। সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে যেখানে যে বাধা আসবে তা প্রতিহত করেই এগিয়ে যাবে তারা। এবার আন্দোলনের সুনামি হবে। সেই সুনামিতে সরকার ভেসে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন,  বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের গ্রেফতার এবং মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানাচ্ছি। আওয়ামী দুস্কৃতিকারিদের কর্তৃক নেতাকর্মীদেরকে আহত করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।    

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom